চট্টগ্রাম বন্দর
হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ১৬ মার্চ ২০২৫ ১১:৪১ এএম
চট্টগ্রাম বন্দর। ফাইল ফটো
আমদানির পর খালাস না নিয়ে কন্টেইনার ভর্তি পণ্য বন্দরে ফেলে রাখতেন ব্যবসায়ীরা। তাতে প্রায় সময় বাজারে তৈরি হতো পণ্যের সংকট। বন্দরের অভ্যন্তরে তৈরি হতো কন্টেইনার জট। ৫৩ হাজার ৫১৮ টিইইউস ধারণ ক্ষমতার বিপরীতে মাঝে মাঝে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টিইইউস কন্টেইনার জমে যেত বন্দরের অভ্যন্তরে। রমজানে যাতে বন্দরের অভ্যন্তরে কন্টেইনার চাপ তৈরি না হয় সেজন্য সম্প্রতি ফ্রি টাইমের মধ্যে কন্টেইনার ডেলিভারি না নিলে চারগুণ মাশুল আদায় শুরু করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। গত ১০ মার্চ চারগুণ মাশুল আদায় শুরুর পর এখন বন্দরের অভ্যন্তরে কমতে শুরু করেছে কন্টেইনার।
বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ৫৩ হাজার ৫১৮ টিইইউস ধারণ ক্ষমতার বিপরীতে শনিবার বন্দরের অভ্যন্তরে পণ্যভর্তি কন্টেইনার রয়েছে ২৯ হাজার ৪৭৮ টিইইউস। অথচ এক মাস আগেও প্রতিদিন ৩৮ হাজার থেকে ৪০ হাজার টিইইউস কন্টেইনার থাকত চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে। সর্বশেষ গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বন্দরের অভ্যন্তরে পণ্যভর্তি কন্টেইনার ছিল ৩৮ হাজার ৯১৬ টিইইউস।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বন্দর কর্তৃপক্ষ চারগুণ মাশুল আদায়ের কারণেই ব্যবসায়ীরা এখন কন্টেইনার দ্রুত খালাস নিচ্ছেন। সে কারণেই এখন বন্দরের অভ্যন্তরে কমছে কন্টেইনারের চাপ। অন্যদিকে আমদানি পণ্য দ্রুত খালাস হয়ে যাওয়ায় বাজারে বাড়ছে পণ্যের সরবরাহ।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘গত ১০ মার্চ থেকে বন্দর কর্তৃপক্ষ কন্টেইনারের রেন্ট বাবদ চারগুণ চার্জ আদায় শুরু করেছে। এতে জরিমানা দেওয়ার ভয়ে অধিকাংশ আমদানিকারক দ্রুত কন্টেইনার খালাস করে নিয়ে যাচ্ছে। গত কয়েকদিনের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখেছি এখন প্রতিদিন ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টিইইউস কন্টেইনার খালাস হচ্ছে। যে কারণে এখন বন্দরের অভ্যন্তরে কন্টেইনারের চাপও অনেক কমেছে। আগে যেখানে গড়ে প্রতিদিন ৩৮ হাজার থেকে ৪০ হাজার টিইইউস কন্টেইনার থাকত, সেখানে গত কয়েকদিন ২৯ থেকে ৩০ হাজার কন্টেইনার থাকছে।’
দেশের আমদানি-রপ্তানির তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর মাস থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই তিন মাসে আমদানি-রপ্তানি উভয় ক্ষেত্রে ছিল প্রবৃদ্ধি। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এই সময় আমদানি-রপ্তানি বেড়ে যাওয়ায় বন্দরে তৈরি হয় কন্টেইনার জট। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে এসে চট্টগ্রাম বন্দর ইয়ার্ডে কন্টেইনারের সংখ্যা সীমা ছাড়িয়ে যায়। ওই সময় বন্দরের ইয়ার্ডে কন্টেইনার সংখ্যা ৪১ হাজার টিইইউএস ছাড়িয়ে যায়। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বন্দরের ইয়ার্ডে কন্টেইনার সংখ্যা দাঁড়ায় ৪১ হাজার ৫৫০ টিইইউএসে। গত ২০ ফেব্রুয়ারিও কন্টেইনার সংখ্যা ছিল ৪০ হাজারের ঘরে। অবস্থা বেগতিক দেখে সেদিনই আমদানিকারক, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের কাছে চিঠি ইস্যু করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। চিঠিতে বলা হয়, আগামী ৯ মার্চের মধ্যে কন্টেইনার ডেলিভারি না নিলে ১০ মার্চ থেকে ‘রেগুলেশন্স ফর ওয়ার্কিং অব চিটাগং পোর্ট (কার্গো অ্যান্ড কনটেইনার), ২০০১-এর ১৬০ ধারা মোতাবেক এফসিএল কন্টেইনার ভাড়া চারগুণ বেশি আদায়ের কথা বলা হয়। এরপর ১০ মার্চ থেকে চারগুণ মাশুল আদায় শুরু হওয়ার পর থেকে বন্দর ইয়ার্ডে কন্টেইনারের সংখ্যা কমতে থাকে। বর্তমানে সে সংখ্যা একেবারে কমে দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ৪৭৬ টিইইউসে।
আমদানিকৃত পণ্যবোঝাই কন্টেইনার বন্দরের ইয়ার্ডে চার দিন বিনা মাশুলে রাখা যায়। অর্থাৎ জাহাজ থেকে কন্টেইনার খালাস করে ইয়ার্ডে রাখার পর ৪ দিন কোনো ভাড়া নেওয়া হয় না। কিন্তু এরপর থেকে প্রতিদিনের জন্য ২০ ফুটের কন্টেইনারের জন্য ৬ ডলার, ৪০ ফুটের কন্টেইনারের জন্য ১২ ডলার মাশুল পরিশোধ করতে হয়। এভাবে বেশি দিন পড়ে থাকলে কন্টেইনার রেন্টও বাড়তে থাকে। দুই সপ্তাহ পর থেকে প্রতিদিন ২০ ফুটের একটি কন্টেইনারের জন্য প্রতিদিন ২৪ ডলার এবং ৪০ ফুটের কন্টেইনারের জন্য প্রতিদিন ৪৮ ডলার ভাড়া আদায় করা হয়।
১০ মার্চ থেকে ভাড়া চারগুণ করায় এই মাশুল বেড়ে গেল। এখন একটি কন্টেইনার নির্দিষ্ট সময়ের পরে ইয়ার্ডে রাখলে ২৪, ৪৮ এবং ৯৬ ডলার পর্যন্ত প্রতিদিন ভাড়া পরিশোধ করতে হবে। ৪০ ফুটের কন্টেইনারের ক্ষেত্রে ৪ দিনের ফ্রি টাইমের পর প্রতিদিনের জন্য ৪৮ ডলার, পরবর্তী সপ্তাহের প্রতিদিনের জন্য ৯৬ ডলার এবং পরবর্তীতে প্রতিদিনের জন্য ১৯২ ডলার হারে ভাড়া গুনতে হচ্ছে।