ইসমাইল মাহমুদ, মৌলভীবাজার
প্রকাশ : ১৬ মার্চ ২০২৫ ১১:২০ এএম
অনুমোদনের দুই বছরেও শুরু হয়নি রাজনগর-বালাগঞ্জ সড়কের কুশিয়ারা নদীতে ফেরি সার্ভিস। ফেরি না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন নৌকায় পারাপার হতে হয় স্থানীয়দের। সম্প্রতি তোলা। প্রবা ফটো
নদীর পূর্বপ্রান্ত মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলা আর পশ্চিমপ্রান্ত সিলেট জেলার বালাগঞ্জ উপজেলা। দুই জেলার দুই উপজেলার মাঝামাঝি সীমানায় বহমান প্রমত্তা কুশিয়ারা নদী। দীর্ঘদিন ধরে রাজনগর-বালাগঞ্জ সড়কের কুশিয়ারা নদীতে সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন দুই উপজেলার মানুষ। প্রতিবারই জনপ্রতিনিধিরা এখানে সেতু স্থাপনের আশ্বাস দেন। কিন্তু সে আশ্বাসের বাস্তব প্রতিফলন আর হয় না। সর্বশেষ অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল ফেরি চলাচলের। তা-ও আলোর মুখ দেখেনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ২৪ জানুয়ারি প্রাথমিকভাবে রাজনগর ও বালাগঞ্জ উপজেলার মধ্যবর্তী ফেরিঘাট স্থাপনের অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু পরিস্থিতি ‘যে তিমিরে ছিল সে তিমিরেই রয়ে গেছে’। দুই বছরের অধিককালেও কোনো কার্যক্রম শুরু হয়নি। ফলে কাটছে না এ দুই উপজেলায় ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানা কারণে যাতায়াতকারী মানুষের দুর্ভোগ। দীর্ঘদিন ধরে এ দুই উপজেলার সাধারণ মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কুশিয়ারা নদী পাড়ি দিচ্ছেন নৌকায়।
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরেই দুই উপজেলার মধ্যবর্তী কুশিয়ারা নদীতে একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন। ২০০৫ সালের দিকে তৎকালীন সময়ের অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী সাইফুর রহমানের সঙ্গে দেখা করেন এলাকাবাসী। তিনি তাদের দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু করার আগেই বিএনপি ক্ষমতা থেকে বিদায় নেয়। পরবর্তীকালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে দুই উপজেলার মানুষ লিখিতভাবে দাবি জানায়। ২০০৮ সালে নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দাবিটি আবার জোরালো হয়।
মৌলভীবাজার-৩ আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য সৈয়দ মহসিন আলী সিলেট-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান জাতীয় সংসদে কুশিয়ারা নদীতে সেতু নির্মাণের প্রস্তাব করেন। পরে বারবার আশ্বাস ও সমীক্ষা হলেও সেতু নির্মাণ প্রক্রিয়া আলোর মুখ দেখেনি। অবশেষে ২০২৩ সালে কুশিয়ারা নদীতে ফেরি স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ওই বছরের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব স্বাক্ষরিত এক পত্রে উল্লেখ করা হয় ‘মৌলভীবাজার (রাজনগর)-সিলেট (বালাগঞ্জ) জেড-২০১৭ সড়কের ১৭তম কিলোমিটারে কুশিয়ারা নদীর ওপর সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের আওতাধীন একটি নতুন ফেরিঘাট স্থাপনের নিমিত্তে প্রশাসনিক অনুমোদন নির্দেশক্রমে জ্ঞাপন করা হলো।’ এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সওজ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলীকে আদেশ দেওয়া হয়। এই আদেশের দীর্ঘ দুই বছরের অধিককাল পেরিয়ে গেলেও কুশিয়ারা নদীতে ফেরিঘাট স্থাপন প্রকল্প ‘লাল ফিতায় বন্দি’ রয়েছে বলে অভিযোগ।
রাজনগর উপজেলার ফতেহপুরের জাহিদপুর গ্রামের মাহফুজ হামিদ বলেন, কুশিয়ারা নদীতে সেতু না থাকায় উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষ দুর্ভোগে রয়েছেন। সরকার এখানে ফেরিঘাট স্থাপনের অনুমোদন দেয়। এতে আমরা কিছুটা হলেও খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু এখনও ফেরিঘাট স্থাপন হয়নি। চাঁন্দভাগ গ্রামের আওয়াল মিয়া বলেন, কুশিয়ারা নদীতে ফেরি থাকলে সহজেই যাতায়াত করতে পারতাম।
সড়ক বিভাগ মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার হামিদ বলেন, ‘সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক গত বছর কুশিয়ারা নদীতে ফেরিঘাট স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু বালাগঞ্জ উপজেলার অংশে পর্যাপ্ত সরকারি ভূমি না থাকায় ফেরিঘাট স্থাপন করা সম্ভব হয়নি।