× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

যানজট নয়, ডাকাতিই সড়কে বড় আতঙ্ক

রাজু আহমেদ, রাজশাহী

প্রকাশ : ১৬ মার্চ ২০২৫ ০৯:৫২ এএম

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

ঈদের ছুটিতে বাড়ি ফেরার পথে এবার যানজটের চেয়েও বড় দুশ্চিন্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে সড়কে ডাকাতির ঘটনা। ঢাকা-রাজশাহী, রাজশাহী-নওগাঁ ও রাজশাহী-বগুড়া মহাসড়কে নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে চরম উদ্বেগে রয়েছেন যাত্রী, পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। গত দুই মাসে এসব রুটে রাতের বেলায় চলাচলকারী যানবাহনে একের পর এক ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এমনকি নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানির মতো জঘন্য ঘটনাও সামনে এসেছে। এসব ঘটনায় পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

পরিবহন শ্রমিকদের অভিযোগ, সড়কে টহল দেওয়া পুলিশের সংখ্যা অপর্যাপ্ত। টহলরত থাকলেও তারা দ্রুত পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হচ্ছে। তবে পুলিশ দাবি করছে, ডাকাতি-সংক্রান্ত ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। ঈদের আগে সড়কে প্যাট্রোল টিমের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে বলেও তারা জানান।

গত ৯ মার্চ রাতে ঢাকা থেকে রাজশাহী ফেরার পথে রাজশাহী জেলা জামায়াতে ইসলামীর ৭ জন নেতা ডাকাতির শিকার হন। তারা পেশায় শিক্ষক। ঘটনাটি ঘটে সিরাজগঞ্জের কোনাবাড়ি ধান গবেষণাকেন্দ্র-সংলগ্ন সড়কে। ওইদিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাদের মাইক্রোবাসটি রাস্তায় থামানো হয়। ডাকাত দল তাদের কাছ থেকে ৯টি মোবাইল ও নগদ ৮১ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যায়।

ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে রাজশাহী জেলা জামায়াতে ইসলামীর সদস্য আশিক আল রহমান বলেন, আমরা ঢাকা থেকে রাজশাহী ফিরছিলাম। হঠাৎ রাস্তায় বিকট শব্দ শুনে গাড়ি থামাই। গাড়ি চেক করতে নেমে দেখি, ৮-১০ জন অস্ত্রধারী ব্যক্তি আমাদের ঘিরে ফেলেছে। তারা আমাদের কাছে থাকা মোবাইল ও নগদ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। পরে তারা যমুনা সেতু পশ্চিম থানায় ডাকাতির অভিযোগ দায়ের করেন।

গত ফেব্রুয়ারিতে রাজশাহী-নওগাঁ ও ঢাকা-রাজশাহী রুটে অন্তত ৭টি বাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। বিআরটিসি বাস ডিপো-সংশ্লিষ্টরা জানান, পাবনা থেকে নওগাঁর সাপাহার রুটে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রাত ১০টার দিকে একটি বিআরটিসি বাস ডাকাতের কবলে পড়ে। এরপর ১৯ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টার দিকে রাজশাহী-নওগাঁ রুটের আরেকটি বিআরটিসি বাস কলমিডাঙ্গা এলাকায় ডাকাতির শিকার হয়। তিন দিন পর রাজশাহী থেকে নাটোর যাওয়ার পথে মদমইল এলাকায় আরেকটি বিআরটিসি বাস ডাকাতের কবলে পড়ে।

এসব ঘটনায় যাত্রীদের কাছ থেকে নগদ অর্থ, গহনা ও মোবাইল ফোন লুট করা হয়। এমনকি গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা-রাজশাহী রুটের একটি বাসে ডাকাতির ঘটনায় দুই নারী যাত্রীকে শ্লীলতাহানির শিকার হতে হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যদিও ধর্ষণের বিষয়ে থানা বা আদালতে কোনো অভিযোগ করা হয়নি।

বিআরটিসি বাসের চালক সোহেল রানা গত ১৯ ফেব্রুয়ারির একটি ঘটনায় পোরশা থানায় অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, এখন এই রুটে চালকরা বাস চালাতে ভয় পাচ্ছে। যাত্রীরা চালকদের সন্দেহ করে। কিন্তু সমস্যা হলো, রাস্তায় পর্যাপ্ত পুলিশ নেই। নিরাপত্তার অভাব রয়েছে।

গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকা থেকে রাজশাহী যাওয়ার পথে ইউনিক রোড রয়েলসের একটি বাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। প্রায় সোয়া তিন ঘণ্টা চলন্ত বাসে ডাকাতি করা হয়। একাধিক যাত্রী অভিযোগ করেছে, তাদের সম্পদ লুটের পাশাপাশি নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানি করা হয়েছে। এমনকি চারজন যাত্রীকে ছুরিকাঘাতও করা হয়। তবে ডাকাতির ঘটনার তিন দিন পর টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানায় মামলা করা হয়। এদিকে এই ঘটনায় নাটোরের বড়ইগ্রাম থানার ওসিকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। 

সাম্প্রতিক সময়ে রাজশাহী বিভাগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। প্রতিদিন হত্যা, ছিনতাই, ডাকাতি ও জমি দখলের মতো ঘটনা ঘটছে। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন, থানায় অভিযোগ করেও তারা প্রতিকার পাচ্ছেন না। সরকারের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে দাবি করা হলেও সাধারণ মানুষ তাতে আশ্বস্ত হতে পারছে না।

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল সম্প্রতি রাজশাহী সফরে এসে বলেন, বিপ্লব-উত্তর পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা কঠিন। আমাদের পুলিশ প্রশাসন ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান নিয়ে কাজ করছে। এটি একটি চ্যালেঞ্জ। টাকা ও বদমতলব থাকলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ করা যায়। কিছু মহল এতে ভূমিকা রাখতে পারে।

রাজশাহী রেঞ্জের মুখপাত্র ও অ্যাডিশনাল ডিআইজি (ক্রাইম ম্যানেজমেন্ট) সারোয়ার জাহান বলেন, এর আগে বাসে যতগুলো ডাকাতি হয়েছে, সংশ্লিষ্টদের চিহ্নিত করা হয়েছে। মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে। ঈদকে কেন্দ্র করে প্যাট্রোল টিমের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। হটস্পটগুলোতে অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে।

রাজশাহী পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা রফিক আলী পাখি বলেন, সড়কে হঠাৎই ডাকাতির ঘটনা বেড়েছে। যাত্রী ও শ্রমিকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। হাইওয়ে পুলিশের প্যাট্রোলিং বাড়ানো উচিত।

ঈদে বাড়ি ফেরার পথে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এখন বড় চ্যালেঞ্জ। সড়কে ডাকাতির ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ চরম আতঙ্কে রয়েছে। পুলিশ ও প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ ও সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা