বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৫ মার্চ ২০২৫ ১৯:৫৬ পিএম
প্রবা ফটো
‘আমি আমার নিজের ইচ্ছায় কিছুই করিনি। আমাকে বাধ্য করা হয়েছে। ওই ছেলের জন্য আর ওর পরিবারের জন্য আমার জীবন থেকে মনে হয় সব সুখ সাতি (শান্তি) চলে (গেছে)’। এমন চিরকুট লিখে আত্মহত্যা করেছেন পটুয়াখালীর বাউফলে নাজনিন জাহান কুমকুম নামে এক স্কুলছাত্রী।
গতকাল (শুক্রবার) বিকাল ৪টার দিকে উপজেলার শৌলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
আত্মহত্যার বিষয়টি প্রথমে দামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে পরিবার। পরে খবর পেয়ে রাত ১২টার দিকে ওই ছাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। শনিবার সকাল ১০টার দিকে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পটুয়াখালী মর্গে পাঠানো হয়।
নিহত ওই ছাত্রী শৌলা গ্রামের ছাত্রী মো. নজরুল ইসলাম মেয়ে। সে পর্বূ কালাইয়া হাসান সিদ্দিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী।
নিহত ছাত্রীর পরিবারের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে স্কুলে যাওয়া পথে কুমকুমকে একই গ্রামের বাসিন্দা রিয়াজ চৌকিদারের ছেলে রিয়াদুল ইসলাম তাওসিন কুপ্রস্তাব দিয়ে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। বিষয়টি তাওসিনের পরিবারকে জানানো হলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ঘটনার দিন (শুক্রবার) তাওসিন তার ফেসবুকে আইডিতে কুমকুম ও তার এক সহপাঠীর ছবি পোস্ট করেন। বিষয়টি জানার পর বিকালে ৪টার দিকে কুমকুম তার নিজ কক্ষে আড়ার সাথে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন।
নিহত ছাত্রীর মা কুলসুম বলেন, আমার মেয়ে অত্যন্ত ভদ্র ও লাজুক। তাকে বিভিন্ন সময় বখাটে তাওসিন কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিল। বিষয়টি বিদ্যালয় প্রধান ও ওই বখাটের চাচাকে জানালেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। শুক্রবার আমার মেয়ের সাথে তার এক সহপাঠীর তোলা স্বাভাবিক ছবিতে বাজে মন্তব্য লিখে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয় ওই বখাটে। এতে লোকলজ্জার ভয়ে আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেন।
নিহত ছাত্রীর বাবা নজরুল খান বলেন, আত্মহত্যার আগে আমার মেয়ে চিরকুটে লিখে গেছেন। চিরকুটে আত্মহত্যার জন্য ওই ছেলেকে দায়ী করে গেছেন। আমার মেয়েকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছে তওসিন। আমরা ওই বখাটের ফাঁসি চাই।
বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে উত্ত্যক্ত করে এলেও আমাকে জানানো হয়ে ঘটনার একদিন আগে। জানার পরে আমি তওসিন ও তার পরিবারের লোকজনকে ডেকে এনে সাবধান করে দিয়েছি।’
এ ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত তওসিন ও তার পরিবারের কারো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। ঘটনার পর থেকে তারা আত্মগোপনে চলে গেছেন।
বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘প্রথমে বিষয়টি পুলিশকে জানায়নি নিহত ছাত্রীর পরিবার। পরে খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছি। বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছি। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। এখনো পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। তবে অভিযুক্ত তাওসিনকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।’