নাঈম ইসলাম, শেরপুর
প্রকাশ : ১৫ মার্চ ২০২৫ ১৩:৩৪ পিএম
শেরপুরে বাম্পার ফলনে খুশি হলেও হিমাগারের অভাবে আলু সংরক্ষণ করতে পারছেন না চাষিরা। শুক্রবার বিসিক এলাকার একটি হিমাগারের সামনের সড়কে দাঁড়িয়ে সারিবদ্ধ আলুবোঝাই গাড়ি। প্রবা ফটো
শেরপুরে আলু উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। আলুর বাম্পার ফলনে চাষিরা খুশি। কিন্তু হিমাগারের অভাবে আলু সংরক্ষণ করতে পারছেন না চাষিরা। এতে তারা দুর্ভোগে পড়েছেন। এলাকায় দুটি সরকারি ও একটি বেসরকারি হিমাগার আছে। এতে সব আলু ধারণ করতে পারছে না তিনটি হিমাগার। ফলে হিমাগারে আলু রাখতে না পেরে চাষিরা কম দামে বেচে দিচ্ছেন। এ কারণে চাষিরা পড়েছেন লোকসানের মুখে। শত শত আলুর ট্রাক হিমাগারে আলু রাখার জন্য অপক্ষমাণ আছে। আলুর ট্রাকের কারণে শেরপুর-শ্রীবরদী, শেরপুর-বকশীগঞ্জ, রৌমারী-কুড়িগ্রাম আঞ্চলিক সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে শেরপুরে ৫ হাজার ২১২ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছিল। কিন্তু কৃষকরা আরও বেশি জমিতে আলু চাষ করায় ৫ হাজার ৩১৭ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। ফলে ৯৩ হাজার ৮১৬ টন আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও এবার ফলন হয়েছে ৯৫ হাজার ৭০৬ টন, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ৮৯০ টন বেশি আলু উৎপাদন হয়েছে।
কৃষকদের অভিযোগ, হিমাগারে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় অনেক কৃষক আলু হিমাগারে আলু রাখার সুযোগ পাচ্ছেন না। তারা বাধ্য হয়েই কম দামে আলু বিক্রি করছেন। এতে চাষাবাদের খরচও উঠে আসছে না। শ্রীবরদী উপজেলার ভায়াডাঙা হাঁসধরা গ্রামের শামছুল মিয়া দুই ট্রলি আলু নিয়ে এসেছেন হিমাগারে রাখার জন্য। তিনি বলেন, ‘গত তিন দিন ধরে আমি ৩শ বস্তা আলু নিয়ে এখানে এসেছি। কিন্তু আলু হিমাগারে রাখছে না। সংশ্লিষ্টা বলছেন, হিমাগারে জায়গা নেই। এখন কী করব এই আলু নিয়ে বুঝতে পারছি না। বাড়িতে নিয়ে গেলেও নষ্ট হবে।’
বকশীগঞ্জ উপজেলার নয়মিয়া গ্রামের কৃষক সোহবার মিয়া বলেন, ‘চার দিন ধরে এসেছি আলু নিয়ে কিন্তু স্টোরে (হিমাগার) রাখার সুযোগ পাচ্ছি না। স্টোরে নাকি জায়গা নেই।’ নকলা উপজেলার নারায়ণখোলার আলু চাষি হরমুজ মাস্টার বলেন, ‘চারদিন হয়েছে দুই ট্রাক আলু নিয়ে গাড়ি রাস্তায় রেখেছি। কিন্তু আলু নামানো হচ্ছে না। ভেতরে জায়গা আছে, তা-ও আমাদের আলু নিচ্ছে না। মাইকিং করছে জায়গা নেই। আর এমন পরিস্থিতিতে পড়েছি, এখন এসব আলু নিয়ে বাড়ি যাওয়ার অবস্থাও নেই।’ শহরের বিসিক শিল্পনগরীর বেসরকারি তাজ কোল্ড স্টোরেজের ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের ধারণক্ষমতার তুলনায় আলুর রাখার চাপ বেশি। ফলে অনেক চাষির আলু ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে।’ কৃষক অধিকার রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান বলেন, ‘শেরপুর আলু চাষের জন্য উপযুক্ত জায়গা। কিন্তু হিমাগারের অভাবেই আলু রক্ষা করা যাচ্ছে না। আমরা এখানে নতুন হিমাগার চাই।’
শেরপুর জেলা কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘জেলার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আলু হয়েছে। বেশি আলু হওয়ায় হিমাগারে সংরক্ষণের চাপ বেড়েছে। আমরা কৃষকদের বলতে চাই, তারা যেন ক্ষতির মুখে না পড়েন, তার স্বল্পমেয়াদে দুই-তিন মাস বাড়িতে আলু সংরক্ষণ করতে পারেন। দীর্ঘমেয়াদি সংরক্ষণের জন্য হিমাগারে রাখা জরুরি। কিন্তু উৎপাদনের তুলনায় হিমাগার কম থাকায় কৃষকরা সমস্যায় পড়েছেন।’