× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

পণ্যের দাম ওঠানামা করলেও শুল্কায়ন হয় নির্ধারিত দরে

হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম

প্রকাশ : ১৫ মার্চ ২০২৫ ১১:১৮ এএম

চট্টগ্রাম বন্দর। প্রবা ফটো

চট্টগ্রাম বন্দর। প্রবা ফটো

নভেম্বর মাসে সৌদি আরব থেকে ২৫ হাজার কেজি খেজুর আমদানি করে মুন্সীগঞ্জের এডি ফ্রুইটস লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান আরজা অ্যাগ্রো ফার্ম। প্রতিষ্ঠানটি প্রতিকেজি খেজুরের আমদানি মূল্য ঘোষণা দেয় ৮০ সেন্টস। নিয়ম অনুযায়ী, আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের ঘোষণা করা দাম ঠিক থাকলে ওই দামে শুল্কায়ন করার কথা। আর যদি আমদানিকারকের ঘোষিত মূল্য ঠিক না থাকে তাহলে কাস্টম হাউস প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আন্ডার ইনভয়েসিং করার অভিযোগ তুলতে পারে। কিন্তু কাস্টম হাউস সেটি না করে ওই খেজুর প্রতিকেজি শুল্কায়ন করেছে নিজেদের নির্ধারিত মূল্য প্রতিকেজি ৪ ডলার করে। 

প্রতি ডলার ১২০ টাকা হিসাবে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান যেখানে প্রতিকেজি খেজুরের দাম দিয়েছিল ৯৬ টাকা, সেখানে প্রতিকেজি খেজুর শুল্কায়ন হয়েছে ৪৮০ টাকা দরে। শুধু এই আমদানিকারক নয়; নভেম্বর, ডিসেম্বর, জানুয়ারি মাসে যেসব খেজুর আমদানি হয়েছে সেগুলোর অধিকাংশই আমদানিকারকের ঘোষণা করা দামের চেয়ে বেশি দামে শুল্কায়ন হয়েছে। কিন্তু কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের অভিযোগ আনেনি কাস্টম হাউস। 

আমদানিকারকের ঘোষিত মূল্যের সঙ্গে শুল্কায়ন মূল্যের পার্থক্যের পরও আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের অভিযোগ না তোলায় প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কি রাজস্ব আদায় বাড়াতে বেশি দামে শুল্কায়ন করেছে কাস্টম হাউস। নাকি শুল্ক ফাঁকি দিতে আসলেই দাম কম দেখিয়েছিল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান। 

আমদানিকারকদের দাবি, ‘কাস্টম হাউসের রাজস্ব আদায়ের বার্ষিক একটি লক্ষ্যমাত্রা থাকে। সেটি পূরণ করতেই তারা দেশি দামে শুল্কায়ন করে।’ তবে ভিন্ন কথা বলেছেন কাস্টমস কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, ‘শুল্ক ফাঁকি দিতে আমদানিকারকরা সব সময় মূল্য কম দেখায়, যে কারণে কাস্টম হাউস খেজুর আমদানিতে একটি দর ঠিক করে দিয়েছে। ভালো মানের খেজুরের সর্বনিম্ন শুল্কায়ন মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৪ ডলার, মাঝারি মানের খেজুর আড়াই থেকে তিন ডলার এবং মোটামুটি মানের খেজুর শুল্কায়ন হচ্ছে দেড় ডলার থেকে দুই ডলারে। সেই হিসাবে কায়িক পরীক্ষা করার পর আরজা অ্যাগ্রো ফার্মের আমদানিকৃত খেজুর চার ডলারে শুল্কায়ন করেছে কাস্টম হাউস।’ খেজুর আমদানির সময় আন্তর্জাতিক বাজারে দাম ওঠানামা করলেও তার প্রভাব পড়েনি শুল্কায়ন মূল্যে। অথচ বাজারের ধরন হচ্ছে, পণ্যের দাম কখনও একই থাকে না। আজ কেজিতে ১০ টাকা বাড়লে, কাল কেজিতে দাম কমছে ২০ টাকা। 

শুধু খেজুর নয়, এলাচ, চুনাপাথরসহ অধিকাংশ আমদানি পণ্য শুল্কায়নের ক্ষেত্রে এই পন্থা অবলম্বন করছে কাস্টম হাউস। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ‘বিল অব অ্যান্ট্রি’তে দাম কী দিয়েছেন সেটি মুখ্য নয়, পণ্যগুলোর বিপরীতে কাস্টম হাউস সর্বনিম্ন শুল্কায়ন মূল্য কত নির্ধারণ করেছে সেটিই আসল। বেশিরভাগ সময় ওই নির্ধারিত দামে শুল্কায়ন করা হয়। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাাতিক বাজারে পণ্যর দাম ওঠানামা করলেও তার প্রভাব পড়ে না শুল্কায়নে। অথচ নিয়ম অনুযায়ী আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে আমদানিকারক কম দামে পণ্যটি কিনে আনেন। তখন শুল্কায়ন মূল্য কম হওয়ার কথা। আবার যখন আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ে তখন বেশি দামে কেনেন আমদানিকারক। সে সময় শুল্কায়ন মূল্য বেশি হওয়ার কথা। কিন্তু সেটি না হয়ে দাম ওঠানামা করলেও কাস্টম হাউসে শুল্কায়ন মূল্য একই থাকছে। এতে একদিকে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান যদি কম দামে পণ্য কেনে, তাহলে বেশি দামে শুল্কায়ন হলে অতিরিক্ত শুল্ককরের কারণে পণ্যের দাম বাড়ছে। আবার বেশি দামে কেনার পর সেটি কাস্টম হাউস নির্ধারিত কম দামে শুল্কায়ন হলে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। বেশি দাম হওয়ার পরও কম দামে শুল্কায়ন হওয়ায় লাভবান হচ্ছে আমদানিকারক। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৯ ফেব্রুয়ারির আগে কাস্টম হাউস প্রতিকেজি এলাচের সর্বনিম্ন শুল্কায়ন মূল্য নির্ধারণ করে সাড়ে ৭ ডলার। অর্থাৎ ৯ ফেব্রুয়ারির আগে আমদানি করা এলাচের অধিকাংশই শুল্কায়ন হতো প্রতিকেজি সাড়ে ৭ ডলারে। এ হিসাবে এক কেজি এলাচের আমদানি মূল্য দাঁড়ায় ৯০০ টাকা। এর সঙ্গে শুল্ককর যোগ দেওয়ার পর ওই এলাচের দাম হওয়ার কথা ১৩শ থেকে ১৪শ টাকা। কিন্তু গত এক বছর ধরে ভোগ্য পণ্যের অন্যতম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে প্রতিকেজি এলাচ বিক্রি হয়েছে সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকায়। বাজারে এলাচের দাম বেশি হওয়ার পেছনে আমদানিকারকরা আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়েছে বলে দাবি করেন। এটি প্রমাণ করে আন্তর্জাতিক বাজারে বেশি দামে পণ্য কেনার পরও শুল্কায়ন হয়েছে কম দামে। এতে লাভবান হয়েছেন আমদানিকারক। যে কারণে সম্প্রতি এই পণ্যটি সর্বনিম্ন শুল্কায়ন মূল্য পুনর্নির্ধারণ করেছে কাস্টম হাউস। এখন প্রতিকেজি শুল্কায়ন করা হচ্ছে ১৫ ডলারে। 

খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ আব্দুস সালাম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘কাস্টম হাউস সবসময় এই কাজটি করে আসছে। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান যেই দামে আমদানি করেছে ঘোষণা দেয়, তারা তার চেয়ে বেশি দামে শুল্কায়ন করে। এতে শুল্ককর বেড়ে যাওয়ায় বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। শুল্ককর বাড়ায় একদিকে পণ্যের দাম বাড়ে, অন্যদিকে যারা কাস্টমস কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করতে পারেন তারা ঘোষিত মূল্যে শুল্কায়ন করে পণ্য খালাস করায় বাজারে অসম প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হয়। যিনি ঘোষিত মূল্যে পণ্য খালাস করতে পেরেছেন, ওই ব্যবসায়ী কম দামে বিক্রি করায় ঘোষিত মূল্যে যিনি পণ্য খালাস করতে পারেননি তিনি লোকসানে পড়েন।’

অথচ নিয়ম অনুযায়ী প্রকৃত আমদানি মূল্যেই শুল্কায়ন করার কথা কাস্টম হাউসের। আমদানি-রপ্তানির সঙ্গে জড়িতরা জানিয়েছেন, ‘কোনো পণ্য আমদানি করতে হলে একজন আমদানিকারক কী পরিমাণ পণ্য আমদানি করবেন, ওই পরিমাণ পণ্যের দাম কত এসব বিষয় উল্লেখ করে ঋণপত্র খুলতে হয়। এরপর ওই ঋণপত্রের বিপরীতে পণ্য আমদানি পণ্য বন্দরে আসার পর খালাসের জন্য ওই পণ্যের দামসহ বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে কাস্টম হাউসে বিল অব অ্যান্ট্রি দাখিল করতে হয়। বিল অব অ্যান্ট্রির তথ্য যাছাই বাছাই করে আমদানিকারকের ঘোষণা অনুযায়ী সবকিছু ঠিক থাকলে শুল্কায়ন করে পণ্য খালাসের ব্যবস্থা করে কাস্টম হাউস। বিল অব অ্যান্ট্রির তথ্য বিশ্লেষণের সময় পণ্যের দাম কম হলে সঠিক দাম নির্ধারণপূর্বক ওই দামে শুল্ককর পরিশোধ করতে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে বাধ্য করা হয়। এ সময় কাস্টম হাউস চাইলে প্রকৃত আমদানি মূল্যের কম ঘোষণা দেওয়ার কারণে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আন্ডার ইনভেয়েসিংয়ের অভিযোগও তুলতে পারেন। আবার প্রকৃত আমদানি মূল্যের চেয়ে ঘোষিত মূল্য বেশি হলে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ওভার ইনভয়েসিংয়ের অভিযোগ তুলতে পারে কাস্টম হাউস। কিন্তু ইদানীং অধিকাংশ আমদানি পণ্যের ঘোষিত মূল্য কম হওয়ার পরও আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের অভিযোগ না এনে কাস্টম হাউসের নির্ধারিত সর্বনিম্ন শুল্কায়ন মূল্যে শুল্কায়ন করছে কাস্টম হাউস।’ 

এ সম্পর্কে জানতে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. জাকির হোসেনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তার মোবাইল ফোনটি ব্যস্ত পাওয়া যায়। পরে অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ তফসির উদ্দিন ভূঁঞার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলে তার মুঠোফোন নম্বরটিও ব্যস্ত পাওয়া যায়। 

কাস্টম হাউসের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘এনবিআর আমদানি পণ্যের শুল্কায়ন মূল্য (অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু) দুভাবে নির্ধারণ করে। এক আন্তর্জাতিক বাজার দর বিশ্লেষণ করে। অন্যটি স্থানীয় বাজারে পণ্যটি কেমন দামে বেচাকেনা হচ্ছে। কেননা অনেক সময় দেখা যায় আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটির দাম কম কিন্তু স্থানীয় বাজারে সেটি বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। আমদানিকারকরা যাতে রাজস্ব ফাঁকি দিতে না পারে সেজন্য সর্বনিম্ন শুল্কায়ন মূল্যটা নির্ধারণ করা হয়।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা