বললেন আছিয়ার মা
মহসিন মোল্যা, শ্রীপুর (মাগুরা)
প্রকাশ : ১৫ মার্চ ২০২৫ ১০:২৫ এএম
আছিয়ার মা আয়শা খাতুন। প্রবা ফটো
মাগুরার শ্রীপুরে ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের শিকার আট বছরের শিশুর পরিবারটির পাশে সরকারের সঙ্গে দাঁড়িয়েছে রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলো। সকলেই অসহায় পরিবারটিকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। সকালে একমুঠো খাবার জুটলেও রাতে কী খাবেÑ সে অনিশ্চয়তা থেকে বেরিয়ে আসতে তাদের পাশে দাঁড়ানো মানুষের উদ্দেশে আছিয়ার মা আয়শা খাতুন বলেন, ‘অনেকেই আসছে, খোঁজখবর নিচ্ছে। কম-বেশি সহযোগিতা করেছে, আবার অনেকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। এই কয়দিনে বুঝেছি, পুরো দেশের মানুষ আমাদের পাশে আছে।’
সরেজমিন দেখা যায়, আছিয়ার মৃত্যুর পরদিনও বহু মানুষ তার পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানাতে ছুটে গেছেন। তারা নানাভাবে শোকার্ত স্বজনদের সান্ত্বনা দেন এবং পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
জানা যায়, উপজেলার সব্দালপুর ইউনিয়নের জারিয়া গ্রামের ফেরদৌস শেখের শিশুকন্যা আছিয়া খাতুন। বড় মেয়ে হামিদা খাতুনকে উচ্চ বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরোনোর আগেই বিয়ে দেন মাগুরা শহরের নিজনান্দুয়ালি গ্রামে। মেজো মেয়ে হাবিবা খাতুন জারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী। একই বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল আছিয়া।
ফেরদৌস-আয়েশা দম্পতির আল-আমিন নামে দেড় বছরের এক পুত্রসন্তান রয়েছে। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ফেরদৌস শেখ মানসিক প্রতিবন্ধী। ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাতেন। একসময় উপার্জনের ভ্যানটি চুরি হয়ে যাওয়ায় পরে এনজিওর টাকায় আবারও ভ্যান কেনেন। তবে এবার ভ্যানটি বিক্রি করে দিতে হয় নিজের চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে। এরপর বিভিন্ন সংস্থা থেকে ধার নেন ৩ লাখ টাকা। এ টাকা শেষ হয়ে যায় বড় মেয়ে হামিদার বিয়ে ও সংসার চালানোর ব্যয়ে।
ধারের টাকা শোধের সময় ঘনিয়ে এলে হিমশিম খেতে থাকেন ফেরদৌস শেখ। বসবাসের মাত্র ৭ শতক জমিই তাদের সম্বল। বাড়িতে বসবাসের ঘরটিও সরকারের দেওয়া।
গত ৬ মার্চ রাতে তার বড় বোনের স্বামীর বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হয় শিশু আছিয়া। ৮ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর কাছে হার মানে। ১৩ মার্চ বৃহস্পতিবার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। ঘটনার পর থেকে আরও অসহায় হয়ে পড়ে শিশুটির পরিবার।
আছিয়ার মা আয়েশা বেগম আর্তনাদ করে বলেন, ‘আমার সন্তানকে বাঁচাতে পারলাম না। যারা আমার সন্তানকে কষ্ট দিয়ে মেরেছে তাদের ফাঁসি চাই। সংসারে একমাত্র রোজগেরে মানুষটির মাথায় সমস্যা। টাকার অভাবে তার চিকিৎসা করাতে পারছি না। সংসার চালাতে খুব কষ্ট। তার ওপর কিস্তিওলাদের চাপ। আর পারছি না।’
ফেরদৌস শেখের মামাতো ভাই বিজয়নগর গ্রামের সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘পরিবারটি খুবই অসহায়। আছিয়ার বাবা মানসিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় আমি এ সংসার দেখাশোনা করি। ওষুধ খেলে সে ভালো থাকে, ওষুধ না খেলে অসুস্থ হয়ে পড়ে। ছোটমেয়ের এমন মর্মান্তিক মৃত্যুর পর সে পুরোই ভেঙে পড়েছে। এখন সে পুরোই মানসিক প্রতিবন্ধী। আমরা নিজেরাই অসহায়। তার এমন কোনো আত্মীয়-স্বজন নেই যে পাশে এসে দাঁড়াবে। এ অবস্থায় বড় মেয়েটিও তার সংসারে এসে পড়েছে। সহযোগিতা না করলে এ পরিবারটি শেষ হয়ে যাবে।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য রূপ কুমার বলেন, ‘আজ আছিয়া ইস্যুতে সারা দেশ তোলপাড়। আছিয়ার পাশে সারা দেশ যেভাবে ছিল, এ পরিবারটির পাশেও থাকবে বলে আশা করছি। আমরা এলাকাবাসী সার্বক্ষণিক এ পরিবারের পাশে আছি। দেশবাসীকেও থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।’