উদ্যোগ
রাসেল মিয়া, আমতলী (বরগুনা)
প্রকাশ : ১৩ মার্চ ২০২৫ ১২:৫৮ পিএম
বরগুনার আমতলী উপজেলার পশ্চিম চিলা গ্রামে মাটির গহনা তৈরি করছেন আয়শা আঁখি। প্রবা ফটো
বিলুপ্ত মাটির জিনিস ও মায়ের স্মৃতি ধরে রাখতে মাটির গহনা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন আয়শা আক্তার আঁখি। গত চার বছরের নিরলস পরিশ্রমে এখন পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক গহনা তৈরি করেছেন। এর মধ্যে বিক্রি করেছেন তিন শতাধিক। অনলাইনে বিক্রিতে বেশ সাড়াও পাচ্ছেন। আর্থিকভাবে সহায়তা পেলে কাজের পরিধি আরও বাড়ানো যেত বলে জানান আঁখি।
জানা গেছে, বরগুনা জেলার আমতলী উপজেলার পশ্চিম চিলা গ্রামের আলমগীর গাজীর মেয়ে আয়শা আক্তার আঁখির মাটির গহনা তৈরির অনুপ্রেরণা আসে তার মা মরিয়ম বেগমের একটি পুরোনো মাটির দুল থেকে। ছোটবেলায় কেনা সেই দুল ২৫ বছর ধরে আলমারিতে সংরক্ষিত থাকলেও পাঁচ বছর আগে হারিয়ে যায়।
বিলুপ্ত মাটির জিনিস ধরা রাখা ও মায়ের গহনা দেখেই মেয়ে আয়শা উদ্যোগ নেয় মাটির গহনা তৈরির। নিজের অদম্য চেষ্টায় গহনা তৈরির পদ্ধতি শিখে নেন। আঁখি ২০২১ সালে আমতলী বকুলনেছা মহিলা ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। এরপর তার বিয়ে হয়ে যায়। স্বামী গাজী মো. সোলায়মানের সংসারে বাড়তি আয়ের পথ খুঁজতে তিনি মাটির গহনা তৈরির শুরু করেন। গহনা তৈরিকে ব্যবহার করছেন মাটি, কাঁচামাল ও রঙ। মাটির ওপর বাহারি ডিজাইনের নিখুঁত নকশা করে সুনিপুণভাবে তিনি গহনা তৈরি করছেন। এ পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক গহনা তৈরি করেছেন। গহনার মধ্যে রয়েছে নিখুঁতভাবে তৈরি কানের দুল, গলার সেট, মালা, হাতের চুড়িসহ নানাবিধ গহনা। নানা আল্পনার মাধ্যমে তিনি মাটির গহনায় তৈরি করছেন। তৈরিকৃত গহনা তিনি অনলাইনে বিক্রি করছেন। শুরুতে তেমন সাড়া না পেলেও বর্তমানে বেশ সাড়া পাচ্ছেন। এখন ক্রেতারা অনলাইনে কারুকাজ দেখে নতুন তৈরির অর্ডার করছেন আবার কেউ তাদের পছন্দের গহনা ক্রয় করছেন। টেকসই এ গহনা দামে তেমন না। প্রকারভেদে প্রতি সেট গহনা ৭০ টাকা থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি করছেন তিনি। তার এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন এলাকাবাসী। বর্তমানে তিনি স্বামী গাজী সোলায়মানের বাড়ি উত্তর টিয়াখালীর বাড়িতে বসে অনলাইনে বিক্রি করছেন।
ক্রেতা তানজিলা বলেন, বর্তমানে সোনার মূল্য অনেক বেশি, যা সাধ্যের বাইরে। অনলাইনে আঁখির কাছ থেকে বাহারি কারুকাজের এক সেট মাটির গহনা কিনেছি। এ গহনা পরিধান করতে বেশ ভালোই লাগে।
আঁখির স্বামী সোলায়মান বলেন, স্ত্রীর এমন ভালো কাজে আমি সহযোগিতা করছি। মাটির গহনা বিক্রির অর্থ দিয়ে তিনি সংসারে বেশ জোগান দিচ্ছেন।
আঁখির মা মরিয়ম বেগম বলেন, ছোটবেলার বাজার থেকে একটি মাটির গহনা কিনে এনেছিলাম। গহনা সেট গত ২৫ বছরে ধরে আলমিরায় রাখা ছিল। বছর পাঁচের আগে হারিয়ে ফেলেছি। ওই গহনার দেখাদেখি আমার মেয়ে আয়শা আঁখি মাটির গহনা তৈরির উদ্যোগ নেয়। অনেক কষ্ট করে শিখে ফেলেছে। এখন স্বামীর বাড়িতে বসে তৈরি করে অনলাইনে বিক্রি করছে।
এ ব্যাপারে আয়শা আক্তার আঁখি বলেন, বিলুপ্ত মাটির জিনিস ধরে রাখতে এবং মায়ের ব্যবহৃত মাটির গহনা দেখেই উদ্যোগ নিয়েছি। নিজের চেষ্টায় গহনা তৈরির পদ্ধতি রপ্ত করেছি। বিভিন্ন কারুকাজ দিয়ে এ পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক গহনা তৈরি করেছি। এর মধ্যে তিন শতাধিক বিক্রি করেছি। অনলাইনে বেশ সাড়া পাচ্ছি। আর্থিকভাবে সহায়তা পেলে কাজের পরিধি বাড়ানো যেত।
আমতলী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তারেক হাসান বলেন, মাটির জিনিস ধরা রাখতে আঁখি যে উদ্যোগ নিয়েছে তা অত্যন্ত চমৎকার। তাকে আর্থিকভাবে সহায়তা করা হবে।