× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

কিশোরগঞ্জ-ভৈরব

৬ কোটি টাকা নিয়ে উধাও সমিতি

মিলাদ হোসেন অপু, ভৈরব (কিশোরগঞ্জ)

প্রকাশ : ১৩ মার্চ ২০২৫ ১২:৪২ পিএম

চাঁনপুর মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড নামে একটি অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের প্রায় ৬ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। প্রবা ফটো

চাঁনপুর মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড নামে একটি অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের প্রায় ৬ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। প্রবা ফটো

কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার চাঁনপুর মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড নামে একটি অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের প্রায় ৬ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা হওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠান মালিকের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত মালিক উপজেলার শিমুলকান্দি ইউনিয়নের চাঁনপুর গ্রামের হারিছুল হকের ছেলে মো. শাহ আলম। এ ঘটনার পর থেকে গ্রামজুড়ে হাহাকার অবস্থা বিরাজ করছে। বুকে চাপা কষ্ট নিয়ে স্থানীয় নেতৃবৃন্দের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছেন ভুক্তভোগীরা।

মাসিক হারে অধিক লাভের লোভে নিজের ভিটেবাড়ি, গরু, ছাগলসহ সর্বস্ব বিক্রি করে টাকা জমা রেখেছে স্থানীয় অর্ধশতাধিক নারী-পুরুষ। কেউ কেউ সন্তানকে বিদেশ পাঠানোর টাকা, মেয়ের বিয়ের টাকা ও এমনকি শেষ বয়সের সম্বল জমানো টাকা জমা রেখেছেন ওই মাল্টিপারপাস মালিক শাহ আলমের কাছে।

স্থানীয়রা জানান, ১৪ বছর আগে চাঁনপুর মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড নামে একটি অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠান খোলে বসেন শাহ আলম। শুরুতে অল্প অল্প করে ঋণ দিতেন চাঁনপুর বাজারের ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের। কিছুদিন যেতে না যেতে লাখে ২ হাজার টাকা করে দেওয়ার কথা বলে স্থানীয়দের কাছ থেকে টাকা নেওয়া শুরু করে। ভুক্তভোগীদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী। বিভিন্ন ব্যাংকের চেক দিয়ে টাকা বুঝে নিতেন গ্রাহকদের কাছ থেকে। প্রথম দিকে গ্রাহকদের ভালোভাবেই লাভের টাকা বুঝিয়ে দিতেন। গত তিন বছর ধরে গ্রামের অর্ধশতাধিক নারী-পুরুষের কাছ থেকে প্রায় ৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। দুই-তিন মাস ধরে গ্রাহকদের ঠিকমতো লাভের টাকা দিতেন না তিনি। টাকা নিতে গ্রাহকদের চাপ শুরু হলে গত ৫ মার্চ লাপাত্তা হয়ে যান শাহ আলম। তার সঙ্গে খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না পরিবারের সদস্যদেরও।

স্থানীয়রা জানান, শাহ আলমকে চাঁনপুর গ্রামের বাসিন্দা আজগর আলির ৩৭ লাখা টাকা, রোকেয়া বেগমের ৩০ লাখ টাকা, শাহানা বেগমের ১৮ লাখ টাকা, লাহা মিয়ার ৮ লাখ টাকা, মানিক মিয়ার ৮ লাখ টাকা, ইয়াছমিন বেগমের ৭ লাখ টাকা, নাদিরা বেগমের ২৭ লাখ টাকা, আক্কাছ মিয়ার ৭ লাখ টাকা, মনির মিয়ার ১০ লাখ টাকা, কাজলি বেগমের ১৫ লাখ টাকা, মনা মিয়ার ৫ লাখ টাকা, দানু মিয়ার ১১ লাখ টাকা, বিল্লাল মিয়ার ৮ লাখ টাকাসহ প্রায় ৬ কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়েছেন।

সরেজমিন বুধবার দেখা যায়, চাঁনপুর মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডটি তালা বদ্ধ রয়েছে। অভিযুক্ত শাহ আলমের বাড়িটিও রয়েছে তালাবদ্ধ। এ সময় কথা হয় প্রতিবেশী ব্যবসায়ী আক্কাছ হাজীর সঙ্গে। তিনি বলেন, শাহ আলম চাঁনপুর বাজারে নিজের মার্কেটে প্রতিষ্ঠান চালাত। গোপনে মার্কেটটি ও নিজের বসত বাড়িটিও বিক্রি করে দিয়েছে। এলাকায় তার নিজের বলে কিছু নেই। সে তার পরিবার নিয়ে লাপাত্তা হয়ে গেছে।  দুই ছেলে প্রবাসে রয়েছে, তবু কেন এত মানুষের টাকা মেরে দিয়ে পালিয়ে গেছে বুঝে উঠতে পারছি না।

আক্কাছ হাজী আরও বলেন, শাহ আলম পরিকল্পিতভাবেই ৫ মার্চ পালিয়ে গেছে। আমরা আপাতত বিভিন্ন গ্রাহকের কাছ থেকে ৬ কোটি টাকার খবর পেয়েছি। আমাদের ধারণা টাকার পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। টাকার শোকে দুদিন আগে বিল্লাল মিয়া নামের এক ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করেছে। কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে বাড়িতে পড়ে আছেন। আমরা চাই প্রশাসন তাকে খুঁজে বের করে অসহায় গ্রামবাসীর টাকাগুলো উদ্ধার করে দিক।

কথা হয় দানু মিয়া নামে এক গ্রাহকের সঙ্গে। তিনি বলেন, সমিতির কার্যক্রম শুরুর পর ভালোই চলছিল। গ্রাহকদের পাওনা মুনাফা সময়মতো পরিশোধ করা হতো। আমার আত্মীয়স্বজনসহ বিভিন্ন গ্রাহক থেকে প্রায় ৬ কোটি টাকা নিয়েছে।

রোকিয়া বেগম নামে আরেকজন বলেন, আমার ছেলে সৌদি প্রবাসী। জীবনের সঞ্চয় করা ৩০ লাখ টাকা ও কয়েক ভরি স্বর্ণালংকার বিনিয়োগের পর কয়েক মাস লভ্যাংশ পেয়েছিলাম। কিন্তু এখন সব কার্যক্রম বন্ধ করে সমিতির লোকজন পলাতক। আমার আরেক ছেলে সার্বিয়া যাওয়ার কথা তার ভিসাও এসে গেছে। আমার বড় ছেলের জমানো টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা কিছুদিনের মধ্যে দেওয়ার কথা ছিল ছোট ছেলে বিদেশে যাওয়ার জন্য জমা দেবে বলে। কিন্তু এর মধ্যে সে সমিতির লোক পালিয়ে গেছে। এখন পথে বসে গেছি। শেষ হয়ে গেছি। আরেক গ্রাহক শফিক মিয়া বলেন, আমার নিজের ও দুই বোনের মিলিয়ে মোট ৯ লাখ টাকা জমা রেখেছিলাম এই সমিতিতে। বর্তমানে সমিতির কাউকেই খুঁজে পাচ্ছি না, কার্যালয়ও তালাবদ্ধ। 

ভৈরব উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা রুবাইয়া বেগম বলেন, ২০১০ সাল থেকে সমবায় সমিতিটি পরিচালনা করে আসছে। তবে কিছুদিন হলো গ্রাহকদের বিশাল অঙ্কের ডিপোজিট অর্থ নিয়ে পালিয়েছে। এ বিষয়ে ভুক্তভোগীর গ্রাহকদের দেওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে জেলা কার্যালয়ে প্রতিবেদনে পাঠানো হবে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দিক নির্দেশনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শবনম শারমিন বলেন, সমবায় সমিতির সভাপতির মাধ্যমে যদি এলাকাবাসীর আর্থিক ক্ষতি হয়ে থাকে তবে সেটি প্রতারণা। এ ঘটনায় ফৌজদারি মামলা দায়ের করতে হয়। কোনো ভুক্তভোগী স্বপ্রণোদিত হয়ে এ বিষয়ে মামলা করলে আমাদের প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে। ভৈরব থানার ওসি খন্দকার ফুয়াদ রুহানী বলেন, আপনার মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি জেনেছি। ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা