সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ) সংবাদদাতা
প্রকাশ : ১২ মার্চ ২০২৫ ১৫:৫৪ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার একটি কলেজে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফরম পূরণের অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। কলেজ নির্ধারিত ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত ফরম ফিলাপ বাবদ অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে আদায় করছে কর্তৃপক্ষ। যা অভিভাবকদের জন্য বড় চাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ বছর এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণের জন্য শিক্ষা বোর্ড ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগের জন্য ২ হাজার ২২৫ টাকা এবং বিজ্ঞান বিভাগের জন্য ২ হাজার ৭৮৫ টাকা নির্ধারণ করালেও সাটুরিয়া সৈয়দ কালুশাহ কলেজের পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রত্যেক বিভাগের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৫ হাজার ৭ হাজার টাকা আদায় করছেন বলে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
এ নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। অনেকেই ধারদেনা করে অতিরিক্ত টাকা পরিশোধ করেছেন সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী এক বিষয়ে অকৃতকার্য কলেজ থেকে সরবরাহকৃত জমা রশিদের (রশিদের সিরিয়াল নম্বর ৫৫৬৫২) মাধ্যমে অগ্রণী ব্যাংক সাটুরিয়া শাখায় ৬ মার্চ ২০২৫ জমা দিয়েছেন, ৫ হাজার ৬১৫ টাকা, ৩৫৩৪২ নম্বর রশিদের মাধ্যমে একই দিনে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থী ৫ হাজার ১৫ টাকা এবং মানবিক শাখা থেকে ৩৫৫২১ নম্বর রশিদ দিয়ে ৭ হাজার ১৫ টাকা জমা দিয়েছেন।
এ বিষয়ে সাটুরিয়া সৈয়দ কালুশাহ কলেজের অধ্যক্ষ জানান, গত ১০ মার্চ ছিল নিয়মিত শিক্ষার্থীদের ফরম ফিলাপের নির্ধারিত শেষ দিন। ১০ মার্চ পর্যন্ত মানবিক বিভাগে ২৯৭, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৬৭ এবং বিজ্ঞান বিভাগে ৫৮ জন সহ সর্ব মোট ৪২২ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ করেছেন। যারা গত বছর বোর্ড পরীক্ষায় দুই এক বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছেন, তাদের ফরম পূরণ বিলম্ব ফি দিয়ে ১২ মার্চ থেকে শুরু হয়ে ১৭ মার্চ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
একই উপজেলার দরগ্রাম ভেকু মেমুরিয়াল কলেজের ফরম পূরণে বোর্ড নিধারিত টাকায় ফরম পূরণ করতে পারলেও সাটুরিয় কলেজ বোর্ড ফির চাইতেও ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা বেশি নেওয়াতে অবিভাবকরা ফুসে উঠছেন।
১০ মার্চ পর্যন্ত ৪২২ জন ফরম পূরণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে গড়ে সর্বনিম্ন ৫ হাজার ১৫ টাকা নিয়েছেন। সেই হিসেবে বিজ্ঞান বিভাগে ৫৮ জন শিক্ষার্থীদের বোর্ড নির্ধারিত ২ হাজার ২৩০ টাকা বেশী নিয়েছেন। সেই হিসেবে শুধু বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অতিরিক্ত ১ লাখ ২৯ হাজার ৩৪০ টাকা নিয়েছেন। আর মানবিক ও ব্যাবসায় শিক্ষা বিভাগে মোট শিক্ষার্থী ৩৬৪ জনের নিকট থেকে বোর্ড নির্ধারিত থেকেও ২ হাজার ৭৯০ টাকা বেশি নিয়েছেন। এ দুই বিভাগ থেকে ১০ লক্ষ ১৫ হাজার ৫৬০ টাকা বেশি নিয়েছেন।
একজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানায়, সরকার নির্ধারিত ফি জোগাড় করতেই রীতিমতো তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে সেখানে অতিরিক্ত ফি আদায় করাটা অনেক কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা কোচিং ফিসহ ৫ হাজার টাকা নিয়েছি, কোচিংয়ে অংশ নিলে ১ হাজার টাকা ফেরত দেওয়া হবে। এতে শিক্ষার্থীরা কোনো অসুবিধায় পড়েনি।’
এ বিষয়ে সাটুরিয়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, ‘এইচএসি ফরম পূরণের জন্য কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত টাকা আদায় করেছেন বলে আমার জানা নেই। কেউ যদি অতিরিক্ত ফি আদায় করে থাকে তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইকবাল হোসেন বলেন, ‘এ বিষয়ে মৌখিক অভিযোগ পেয়ে অধ্যক্ষকে আমার দপ্তরে ডেকে পাঠিয়েছি। সে কি বলে শুনি আর লিখিত অভিযোগ পেলে, অভিযোগ প্রমানীত হলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’