× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

পার্বত্য চুক্তির ২৫ বছর : পাহাড়ের গল্পগুলো বদলে যাচ্ছে

বিশেষ প্রতিনিধি, রাঙামাটি থেকে ফিরে

প্রকাশ : ০৪ ডিসেম্বর ২০২২ ২০:২৫ পিএম

আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২২ ২১:১২ পিএম

পার্বত্য চুক্তির ২৫ বছর : পাহাড়ের গল্পগুলো বদলে যাচ্ছে

ক্ষেতে এবার ভালো ফলন হয়েছে। সেই ফসল তুলছেন সবাই মিলেমিশে। রাঙামাটির সাপছড়ি এলাকা, এখানে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এবং বাঙালি অধিবাসীরা কাজ করেন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। গরিব এই মানুষগুলো রাজনীতি বোঝেন না। তাদের কাছে রাজনীতি মানে দুবেলা পেট পুরে খাওয়া, রাতের বেলা ঘরে শান্তিতে ঘুমানো। অস্ত্রধারী গ্রুপগুলোকে নিয়ে চাপা আতঙ্ক থাকলেও ২৫ বছর আগের অবস্থা এখন নেই। তিন পার্বত্য জেলার মানুষ এখন শান্তিচুক্তির সুফল পেতে শুরু করেছেন। শিক্ষা আর উন্নয়নে প্রতিদিনই পাহাড়ের গল্পগুলো বদলে যাচ্ছে। 

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রতিদিনের বাংলাদেশের সরেজমিন ধারাবাহিক প্রতিবেদন করতে জেলা শহর থেকে নানিয়ারচর যাওয়ার পথে আমাদের সঙ্গে দেখা হয় একসঙ্গে কাজ করা কৃষিজীবী এই পাহাড়ি এবং বাঙালি মানুষগুলোর। সাপছড়ির ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নারী জম্বুবি চাকমা জানান, এলাকায় পাহাড়ি-বাঙালি মিলেমিশেই বসবাস করেন তারা। দুইপক্ষের মধ্যে যথেষ্ট সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। এর ফলে তারা খুব ভালো আছেন। 

শুধু সাপছড়ি নয়, তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবানের চিত্রও একই রকম। প্রায় আড়াই দশকের সশস্ত্র সংঘাতের পর ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের এক-দশমাংশ এই বিস্তীর্ণ জনপদে। 

গত সপ্তাহে কথা হয় শুভলং বাজার এলাকার বৃদ্ধা মধুমালা চাকমার সঙ্গে। তিনি জানান, আগে সেখানে স্কুলঘরটি ছিল ভাঙা, এখন সরকার নতুন করে তৈরি করে দিয়েছে। লেখাপড়ার পরিবেশ ফিরেছে। বাচ্চারা ভালোভাবে পড়াশোনাও করছে। সন্ত্রাসী কার্যক্রমও আগের মতো নেই। এখন তারা শান্তিতেই জমিতে চাষবাস করতে পারছেন। 

শুভলং বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী নিলি মারমাও জানান, পাহাড়ি-বাঙালি সবাই সেখানে মিলেমিশে আছেন। পাশে সেনাবাহিনীর ক্যাম্প আছে, পুলিশও আছে, ফলে চোর-ডাকাত সেখানে ঢুকতে সাহস পায় না। সব জাতি মিলেমিশেই থাকে। একে অন্যের অনুষ্ঠানেও যান তারা। 

দুর্গম পাহাড়ের বুক চিরে চলে গেছে মসৃণ সড়ক। ঝরনা কিংবা ছোট-বড় নদীর ওপর তৈরি হয়েছে শত শত কালভার্ট ও সেতু। যার মধ্যে গত ৭ নভেম্বর এক দিনেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাহাড়ের ছোট-বড় প্রায় অর্ধশত সেতু উদ্বোধন করেছেন। একসময় যেসব অঞ্চলে যেতে সাত দিন পায়ে হাঁটতে হতো, সেখানেই এখন গাড়িতে করে যাওয়া যাচ্ছে মাত্র কয়েক ঘণ্টায়। বিদ্যুতের আলো ফুটেছে উঁচু পাহাড়ে। পৌঁছে গেছে মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক। ব্যবস্থা হয়েছে সুপেয় পানির। বিচ্ছিন্ন পাড়ায় বসেছে জমজমাট বাজার। পার্বত্য চুক্তির আগে পাহাড়ে পাকা রাস্তা ছিল ২ হাজার ৮০৩ কিলোমিটার। গত ২৫ বছরে সেখানে যুক্ত হয়েছে আরও ৭ হাজার ৯৪৯ কিলোমিটার। আর এই সব উন্নয়ন কার্যক্রমে যুক্ত রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। তাদের উদ্যোগে পরিচালিত হচ্ছে মানবিক কার্যক্রমও। 

নানিয়ারচরের ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আবদুস সালাম হাওলাদার বলেন, ‘সেনাবাহিনী থাকায় অবশ্যই আমাদের উপকার হচ্ছে। শান্তিচুক্তির আগে বিশেষ করে আমরা বাঙালিরা মন চাইলেই ঘর থেকে বের হতে পারতাম না, ক্ষেতে কাজ করতে পারতাম না। চুক্তির অনেক ধারা বাস্তবায়ন এবং সেনাবাহিনী থাকার কারণেই এখন আমরা নিরাপদ বোধ করি। ক্ষেতখামারে কাজ করতে পারি, ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারি।’ 

পার্বত্য চুক্তির পর পাহাড়ে শিক্ষায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। গত ২৫ বছরে তিন জেলায় প্রায় ১ হাজার ৬০০টির বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ ও পুনঃনির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু রাঙামাটিতেই হয়েছে প্রায় ৬০০ প্রতিষ্ঠান। পার্বত্য এলাকায় গড়ে উঠেছে মেডিকেল কলেজ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ও। 

শিক্ষার হার ২ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭০ শতাংশের বেশি হয়েছে। এক্ষেত্রে আবার এগিয়ে রয়েছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জনগণ। শিক্ষার ক্ষেত্রে তাদের জন্য বিশেষ কোটার সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। চাকরির ক্ষেত্রেও বাড়ানো হয়েছে বিশেষ কোটা। 

নানিয়ারচর সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান, শান্তিচুক্তির শতভাগ সুফল ভোগ করছে সেখানকার শিক্ষার্থীরা। আগে মাতৃভাষায় শিক্ষার সুযোগ না থাকলেও এখন শিক্ষার্থীরা চাকমা, মারমা, ত্রিপুরাসহ তাদের মাতৃভাষায় শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে। এটাকে অবশ্যই শান্তিচুক্তির সুফল হিসেবে দেখতে হবে। 

আমাদের কথা হয় রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, আগের পাহাড় আর বর্তমান পাহাড় এক নয়। এখন চোখ মেললেই পার্বত্য এলাকার উন্নয়ন দেখা যায়। যোগাযোগ, শিক্ষা এবং বিদ্যুতে প্রভূত উন্নয়ন হয়েছে। সরকারের এই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। আত্মতৃপ্তিতে ভোগার কোনোই সুযোগ নেই। 

সংঘাত-সহিংসতার পুরোনো গল্প নয়, পাহাড়ের শান্তিপ্রিয় সাধারণ মানুষ আসলেই পার্বত্য চুক্তির সুফল পেতে চায় পূর্ণাঙ্গভাবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা