মিঠাপুকুর (রংপুর) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৯ মার্চ ২০২৫ ২০:১২ পিএম
মিঠাপুকুরে সৌরভ ছড়াচ্ছে হাঁড়িভাঙ্গা আমের মুকুল। প্রবা ফটো
জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃত মিঠাপুকুরের হাঁড়িভাঙ্গা আমের বাগানগুলো মুকুলে ছেয়ে গেছে। ঋতুরাজ বসন্ত বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে সেই মুকুলের মিষ্টি ঘ্রাণ। একদিনের বৃষ্টি সেই মুকুলকে আরও পোক্ত করেছে। মুকুলের ঘ্রাণে এ অঞ্চলের আম চাষিদের মন চাঙা হয়ে উঠছে। ডালে ডালে ভরা আমের মুকুলে সোনালি স্বপ্ন বুনছেন তারা।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মিঠাপুকুর অঞ্চলে সব ধরনের আম চাষ হলেও গত কয়েক বছরে হাঁড়িভাঙ্গা আম বাণিজ্যিকভাবে সুনাম অর্জন করেছে। বদলে দিয়েছে মানুষের অর্থনৈতিক জীবনমান। ইতোমধ্যেই এই হাঁড়িভাঙ্গা আম জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। এজন্য দেশে বিদেশে এই আমের চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে কয়েক বছর থেকে।
বিগত বছরগুলোতে মিঠাপুকুর উপজেলায় আম চাষ হয়েছিল ১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। এ বছর ১ হাজর ৫২০ হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। এর মধ্যে হাঁড়িভাঙ্গা ১ হাজার ৩০০ হেক্টর, বারি-(৪) ১০০ হেক্টর ও অন্যান্য ১২০ হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ময়েনপুর,কদমতলা, পদাগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় গাছে গাছে ফুটেছে মুকুল, যা ছড়াচ্ছে মুগ্ধতা। মৌসুমের শুরুতেই কুয়াশা থাকলেও এখন প্রকৃতিও বেশ অনুকূলে। মাঝে একদিনের বৃষ্টি আমের মুকুলকে আরও বেশি পোক্ত করেছে। ফলে ডালে ডালে ভরা আমের মুকুলে ভালো ফলনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আমের বাগনখ্যাত এলাকায় চাষিরা গাছের গোড়ায় পানি দেওয়া, পানি ছিটানোসহ মুকুল আটকাতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের যত্ন নেওয়া শুরু করেছেন। ব্যবসায়ীদের আনাগোনাও বেড়ে গেছে। আম চাষিরা তাদের সোনালি স্বপ্নের কথা ভেবে আম বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।
উপজেলার ময়েনপুর ফুলচৌকি গ্রামের আম চাষি আব্বাস আলী জানান, এবারে বাগানে পর্যাপ্ত মুকুল এসেছে। যদি কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হয় তাহলে ভালো আম পাওয়া যাবে।
পদাগঞ্জ এলাকার চাষি নুর হোসেন বলেন, গাছে আমের মুকুল এবার ভালোই আছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বাম্পার ফলন পাওয়া যাবে।
রাণীপুকুর এলাকার রবিউল ইসলাম বলেন, এবার আমের ভালো মুকুল এসেছে। গত বছরের তুলনায় বেশি। প্রাকৃতিক সমস্যা না থাকলে এবং সঠিক পরিচর্যা করলে ভালো ফলন হবে। আশা করছি আবহাওয়া পরিস্থিতি অনুকূলে থাকবে।
আম চাষিরা বলছেন, হাঁড়িভাঙ্গা আমের একটি রীতি বা নিয়ম আছে। যে বছর বেশি ফলন হয় তো পরের বছর কম হয়- এটাই স্বাভাবিক। দাম কম পাওয়ায় প্রতি বছরই ব্যবসায়ীদের কাছে আমের বাগান আগাম বিক্রি করতে হয় বলে জানান তারা। তবে সরকারি সুযোগ সুবিধা ও হিমাগারের ব্যবস্থা হলে তারা আম বিক্রি করে লাভবান হবেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন চাষি অভিযোগ করে বলেন, আমচাষিদের সঠিক পরামর্শ দেওয়ার মতো মনোভাব কৃষি বিভাগের নেই এবং সব ধরনের প্রণোদনা থেকে বঞ্চিত তারা। সরকারি প্রণোদনাগুলোর সঠিক বন্টন হলে আমচাষিরা আরও উপকৃত হতো ও নতুন নতুন চাষি বাড়তো।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ সাইফুল আবেদীন জানান, মিঠাপুকুর উপজেলায় প্রতি বছর আমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা বেড়েই চলেছে। এখানে উৎপাদিত আমের চাহিদা বাইরের দেশেও বেশ ভাল। চাষিরা আমের বাম্পার ফলনের লক্ষ্যে ব্যাপক কাজ করছেন। আবহাওয়া এখন পর্যন্ত ভাল রয়েছে।
শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া ভাল থাকলে এ বছর মিঠাপুকুর উপজেলায় আম উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছড়িয়ে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। এছাড়া বৃষ্টির কারণে যেন মুকুলে কোনো কালো দাগ না পড়ে সেজন্য পরামর্শ প্রদান করেছেন বলেও জানান তিনি।