উজিরপুর (বরিশাল) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৮ মার্চ ২০২৫ ২৩:০১ পিএম
আপডেট : ০৮ মার্চ ২০২৫ ২৩:৪২ পিএম
বরিশালের উজিরপুরের শিকারপুর বন্দরের দাবি করা চাঁদা না পেয়ে প্রয়াত এক বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক পরিবারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিএনপির অফিসের ব্যানার টাঙিয়ে দখল করে নেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় দুই যুবদল নেতার বিরুদ্ধে। অভিযুক্তরা হলেন- উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জালিস মাহমুদ মৃধা ও রুহুল কুদ্দুস হাওলাদার।
ইউনিয়ন বিএনপির ও অঙ্গসংগঠনের সাইনবোর্ড লাগানোর বিষয়টি কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতাদেরকে জানানো হলেও কোনও প্রতিকার পাননি সাংবাদিক পরিবারটি। উল্টো দখলদারদের অব্যাহত হুমকির মুখে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন পরিবারটি।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও বিএনপি করার অভিযোগ তুলে ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি আওয়ামী লীগের অফিসের সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দখলে নিয়েছিল উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে স্থানীয় নেতাকর্মিরা।
এ বিষয়ে প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহাবুবুর রহমান মৃধার ছেলে ও বর্তমান দোকান মালিক উজিরপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান মাসুম অভিযোগ করে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক পৌর মেয়র গিয়াসউদ্দিন বেপারীর নির্দেশে শ্রমিক লীগের শিকারপুর ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক ইউপি সদস্য সুমন মৃধা জোর করে আওয়ামী লীগের অফিসের সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে আমার বৈধ সম্পত্তিতে দোকান ঘর তুলতে বাধা দেওয়া হয়। হাইকোর্টে মামলা করে অনুকুলে রায় থাকার পরেও দোকান ঘর তুলতে দেয়নি আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী নেতাকর্মীরা। গত ৫ আগস্ট ফ্যাস্টিট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর আমি আমার সম্পত্তিতে দোকান ঘর নির্মাণ শুরু করার চেষ্টা করি। এসময় ওই দুই যুবদল নেতার নেতৃত্বে তাদের ক্যাডার বাহিনী আমার কাছে ১ লাখ টাকা দাবি করলে ১০ হাজার টাকায় রফা দফা হয়। দোকান ঘরটি সম্পূর্ণ নির্মাণ হলে অপর যুবদল নেতা জালিছ মাহমুদ মৃধা দোকান ঘরটি সাময়িক সময়ের জন্য নির্ধারিত ভাড়া দেওয়ার মৌখিক প্রতিশ্রুতি দিয়ে ‘খাদ্য বান্ধব’ এর গোডাউন হিসেবে ব্যবহার শুরু করেন।
এ সুযোগে এই যুবদল নেতা ঘর মালিকের ভুয়া ঘর ভাড়া চুক্তি সম্পন্ন করে ‘খাদ্য বান্ধব’-এর লাইসেন্স নেন। বিষয়টি ঘর মালিক হিসেবে আমার দৃষ্টিগোচর হলে ওই যুবদল নেতাকে গোডাউন ঘর অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ করি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি দোকান ঘর তালাবদ্ধ করে রাখেন। পরে স্থানীয় বিএনপির মধ্যস্থতায় ৩০ হাজার টাকা চাঁদা নিয়ে পুনরায় ঘরে তালা খুলে দেন জালিছ মাহামুদ।’ কিছুদিন পরে দুই যুবদল নেতা একজোট হয়ে দোকান ঘরের জায়গা আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী নেতাকর্মীরা দখল করে নিয়েছিল এই অজুহাত দেখিয়ে দশ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন বলে অভিযোগ করেছেন সাংবাদিক মাসুম । তিনি চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে বিএনপি নেতা তার ক্যাডার বাহিনী দিয়ে তাকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন বলেও অভিযোগ করেছেন। এক পর্যায়ে উল্লেখিত যুবদল নেতারা কেন্দ্রীয় বিএনপির কার্যনির্বাহী সদস্য ও উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এস সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টুর ছবি সম্বলিত শিকারপুর ইউনিয়ন বিএনপির স্থায়ী কার্যালয়ের ব্যানার টাঙিয়ে দখলের চেষ্টা করেন বলে জানান সাংবাদিক মাসুম। মাসুম বলেন, ‘বিষয়টি ওই নেতাকে জানালে তিনি তার ব্যানার নামানোর নির্দেশ দিলে ব্যানারটির নামিয়ে ফেলেন। পরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এর ছবি সম্বলিত আরেকটি ব্যানার নিয়ে স্থায়ী দখলের চেষ্টা করেন ওই যুবদল নেতারা।’
শিকারপুর বাজারের প্রবীণ ঔষধ ব্যবসায়ী ডাক্তার গফুর উদ্দিন মঞ্জু বলেন, ‘বিএনপি করার অভিযোগ এনে আওয়ামী লীগ দখল করে নিয়েছিল ওই ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানটি।’
এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপি সদস্য সচিব হুমায়ুন খান বলেন, ‘ওই দোকান ঘরে বিএনপির সাইনবোর্ড লাগানোর বিষয়ে বিএনপি কিছু জানে না। অন্যের দোকান ঘরে ব্যানার লাগানোর কোনও সিদ্ধান্ত বিএনপি দেয়নি। বিএনপির কোনও নেতা-কর্মী দখলবাজি করুক এটা বিএনপির শীর্ষনেতৃবৃন্দ মোটেই পছন্দ করে না। এতে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। দখলবাজির দায় ওই যুবদল নেতাদেরকেই নিতে হবে।’ ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি আব্দুর রব মিয়া বলেন, ‘ওই দোকানের প্রকৃত মালিক শিকারপুরের বিশিষ্ট সমাজসেবক সর্বজন শ্রদ্ধেয় ডাক্তার আয়নাল হোসেন মৃধা এবং তার উত্তরসূরী সাংবাদিক মাহফুজুর রহমান মাসুম। বিগত আওয়ামী লীগের আমলে অন্যায় ভাবে তার দোকান ঘরের জমি দখল করে আওয়ামী লীগের সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে রেখেছিল। আর বর্তমানেও আমরাও একই কাজ করতে পারি না।’ শিকারপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মশিউর মোল্লা বলেন, ‘যুবদল নেতা জালিছ ও কুদ্দুস শুধু সাংবাদিকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নয় শিকারপুরে এআর হাওলাদারের ব্যক্তিগত জুটমিলের রাস্তা দখল করে চাঁদাবাজি করছে। একই সঙ্গে প্রয়াত ট্রলার চালক মাহবুবের কাছ থেকে রীতিমতো চাঁদা আদায় করতেন যার ভিডিও ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ভাইরাল হয়েছে।’
অভিযোগের বিষয় জালিছ মাহমুদ বলেন, ‘দোকান ঘরে জায়গা আওয়ামী লীগের দখলে ছিল, এখন এটা আমাদের দখলে থাকবে।’
অপর যুবদল নেতা রুহুল কুদ্দুস বলেন, ‘তখন সিনিয়র নেতাদের কথায় সাংবাদিকের দোকান ঘর তুলতে দিয়েছিলাম। বর্তমানে আমি আমার মত পাল্টিয়েছি সুতরাং এটা আমাদের দখলেই থাকবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলী সুজা বলেন, ‘দোকান ঘরের জমি হাট বাজারের পেরি পেফি ভুক্ত এবং সাংবাদিক মাহফুজুর রহমান গং এই জমির ডিসিআর বলে বৈধ মালিক। তিনি একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। এবিষয়ে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’