আতিফ রাসেল, ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল)
প্রকাশ : ০৮ মার্চ ২০২৫ ২১:৫৫ পিএম
আপডেট : ০৮ মার্চ ২০২৫ ২১:৫৫ পিএম
পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলায় হোটেল ও চায়ের দোকান গুলোতে পর্দা টানানো হয়ছে। উপজেলার প্রতিটি হাট-বাজার, চায়ের দোকান ও হোটেলগুলোতে ঝুলছে বাহারি রঙের কাপড়ের পর্দা।
সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার মাটিকাটা, নিকরাইল, গোবিন্দাসী, ফলদা বাজার, গাবসারর চর নিকলা বাজার, পৌর ঘাটান্দীসহ গ্রামের প্রতিটি ছোট ছোট চায়ের দোকানে গিয়ে দেখা যায়, দিবালোকে পর্দার আড়ালে চলছে চা, পান, বিড়ি, সিগারেট, ভাতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য গ্রহণের দৃশ্য।
উপজেলার কোনাবাড়ী গ্রামের ৭৮ বছর বয়সি আনসের প্রামাণিক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কী যুগ আইলো অহন! মানুষ আল্লাহকে ডরায় না, কিন্তু মানুষের ডরে দোকানে পর্দা লাগায়। এগুলো কেয়ামতের আলামত!
এদিকে, গোবিন্দাসী গ্রামের শান্ত শেখের মতে, রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করা দরকার, তবে এটি ব্যক্তি বিশেষের দায়িত্ব। সমাজের চাপিয়ে দেওয়া সংস্কৃতি দীর্ঘস্থায়ী হয় না।
জিগাতলার গ্রামের মাসুদ খন্দকার বলেন, এই উদ্যোগ ভালো, তবে প্রশ্ন হলো, আমরা কি আসলেই ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলছি, নাকি শুধু লোক দেখানো ধর্ম পালন করছি?
বরকতপুরের গ্রামের হাসান মনে করেন, রমজানে পর্দা টানানো দরকার, এতে রোজাদারদের প্রতি সম্মান দেখানো হয়। তবে এটি যেন শুধুই আনুষ্ঠানিকতা না হয়ে যায়, সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত।
মাটিকাটা বাজারের চায়ের দোকানদার শফি মণ্ডল ও ফজল প্রামাণিক বলেন, আমরা বাধ্য হয়েই পর্দা দিয়েছি। কিছু ক্রেতা চান, আবার কিছু ক্রেতা বিরক্ত হন। আমরা গরিব মানুষ, এমনিতেই এ মাসে বিক্রি কমে যায়, তার ওপর দোকান বন্ধ করলে খাবো কী?
উপজেলা বাজারের চায়ের দোকানদার মো. সাগর জানান, আমাদের জন্য কিছুটা অসুবিধা হয়, কারণ ক্রেতারা বারবার পর্দা সরিয়ে উঁকি দেন। তবে রোজাদারদের সম্মান জানিয়ে এই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
উপজেলার জনপ্রিয় হোটেল ব্যবসায়ী মো. নুরু বলেন, এ মাসে বেশিরভাগ মানুষ রোজা রাখেন। তবে অল্প কিছু লোক আছেন, যারা শারীরিক বা ব্যক্তিগত কারণে রোজা রাখতে পারেন না। কিন্তু তারা প্রকাশ্যে খাবার খান কি না, সেটাও ভাবনার বিষয়। পেটের দায়ে এভাবে রমজানে পর্দা টাঙিয়ে ব্যবসা করছেন। এভাবে ব্যবসা না করলে সংসার চলবে না।
এ ব্যাপারে পর্দার আড়ালে খাদ্যদ্রব্য খাওয়া ব্যক্তি, মোজ্জাম হেসেন, রশিদ শেখ ও শেখ সাদি বলেন, আমরা রোজা থাকতে পারি না। তাই চা ও পান খাওয়ার নেশা আছে আমাদের। যেহেতু রোজা থাকি না সেই হিসাবে আমারা তো প্রকাশ্যে কোনো কিছু খেতে পারি না। তাই আমরা এখানে খেতে আসছি কেউ যেন না দেখে।
স্থানীয় এক মসজিদের ইমাম হাফেজ মওলানা ড. ইদ্রিস আলী বলেন, রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব। তবে ধর্মীয় বিধান শুধু ভয় থেকে নয় বরং আন্তরিক বিশ্বাস থেকে পালন করা উচিত।