শেরপুর প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৮ মার্চ ২০২৫ ২০:১৯ পিএম
প্রবা ফটো
শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলার গারো পাহাড়ের কাংশা ইউনিয়নের দুটি এলাকার বিস্তীর্ণ বনভূমি আগুনে পুড়ছে। এতে জঙ্গলে বসবাস করা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রাণী ও বনজ গুল্মলতা পুড়ে বনের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্টসহ জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে।
শনিবার (৮ মার্চ) বনে গিয়ে দেখা গেছে, ঝিনাইগাতীর কাংশা ইউনিয়নের হালচাটি, গান্ধীগাঁও, গজনী বিট এলাকার বিস্তৃত বনে বাতাসের তোড়ে আগুন প্রবল বেগে ছড়িয়ে পড়ছে। আগুনের তোড়ে পুড়ছে উপকারী কীটপতঙ্গ পোকামাকড়সহ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রাণী এবং চারাগাছ। বনের অন্তত ১৫টি জায়গায় এমন আগুন পাওয়া গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রতি বছর ফাল্গুন-চৈত্র মাসে শাল-গজারিসহ বিভিন্ন গাছের পাতা ঝরে পড়ে। বনাঞ্চলের মধ্য দিয়ে চলাচলের জন্যে সড়কপথ থাকায় এ সময় খুব সহজেই দুর্বৃত্তরা বনে আগুন দিয়ে সরে পড়ে। ঝরা পাতাগুলো শুকনো থাকার কারণে আগুন মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে। আর কিছুদিনের মধ্যেই বনের গাছ নিলামে বিক্রি করা হবে। কিছু দুর্বৃত্ত বনের গাছ কাটার সুবিধার্থে এ আগুন লাগিয়ে দিয়েছেন। যারা কাজটি করছে, তারা প্রভাবশালী। তাদের বিরুদ্ধে কথা বলা যায় না, বললে তারা নানানভাবে হয়রানি করে। এছাড়াও বনখেকোরা এখানে বিএনপি-আওয়ামী লীগ সবাই এক। তাই প্রশাসনও তাদের তেমন কিছু করতে পারে না।
স্থানীয় বাসিন্দা কলেজ শিক্ষার্থী নবেল মারাক বলেন, ‘শুষ্ক মৌসুমে পাহাড়ে আগুন দিয়ে রাতের অন্ধকারে বনের মূল্যবান গাছ চুরি করছে একটি চক্র। পাশাপাশি অসাধু বালু ও পাথর ব্যবসায়ীরা অসৎ উদ্দেশে বনের ভেতর আগুন দিয়ে ভীতির সৃষ্টি করছে। বনের জমি দখল ও লাকড়ি সংগ্রহ করতে একদল দুর্বৃত্ত আগুন দিচ্ছে। একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নতুন গজিয়ে ওঠা চারাগাছ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়াও সবচেয়ে বড় অভিযোগের তীর হচ্ছে চোরাকারবারিদের দিকে। রাতে পাতার ওপর দিয়ে হাঁটলে শব্দ হয়। এ জন্য তাদের চলাচলের পথ পরিষ্কার করতেই দেওয়া হয় আগুন। এতে আগুনে বিনষ্ট হচ্ছে বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল। বিলুপ্ত হচ্ছে বন্যপ্রাণী, কীটপতঙ্গ ও পাখি।’
বন্যপ্রাণী সংরক্ষণকর্মী সৈয়দা অনন্যা ফারিয়া প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘গারো পাহাড়ে দুষ্কৃতকারীরা তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে। এই আগুনে বনের ব্যপক ক্ষতি হচ্ছে। যেমন যেসব প্রাণী চলাচল করতে পারে তারা দ্রুত সরে গিয়ে রক্ষা পেতে পারে। কিন্তু উদ্ভিদসহ নিম্ন শ্রেণির যে প্রাণীগুলো রয়েছে; যেমন- পোকামাকড়, শামুক, সরীসৃপ ইত্যাদি প্রাণী এ ধরনের আগুনে বেশিই মারা পড়ে। এভাবে চলতে থাকলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য হুমকিতে পড়বে। এ ছাড়া আগুনের ঘটনা থেকে বন ও বন্য প্রাণীকে রক্ষায় সেসব চোরাকারবারিদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।’
রিচার্স অ্যান্ড কনজারভেশন অব এলিফ্যান্ট বাংলাদেশের সভাপতি আসিফুজ্জামান পৃথিল বলেন, ‘হাতি তার নিজস্ব ভূমিতেই বিচরণ করছিল। অনুপ্রবেশকারী মানুষ তাদের নানাভাবে বিরক্ত করছে, একপর্যায়ে মেরেও ফেলছে। আর বুনোহাতি হত্যার পথ সহজ করতেই গারো পাহাড়ে আগুন দিচ্ছে চোরাকারবারিরা। এতে বনের গাছ, বালু, পাথর খুব সহজেই চুরি করতে পারবে পাশাপাশি বনভূমি দখল করার জন্য বনের অলংকার হাতিকেও তারা হত্যা করবে। দ্রুত এই চোরাকারবারির দলকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।’
ময়মনসিংহ বন বিভাগের রাংটিয়া রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এসবি তানভীর আহমেদ ইমন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘এখন শুকনো মৌসুম, শালপাতা খুবই শুষ্ক অবস্থায় বনে পড়ে স্তূপ হয়ে থাকে। এখানে স্থানীয় বাসিন্দা ও গজনী অবকাশ এলাকায় টুরিস্টদের আনাগোনা বেশি। এ ছাড়া বনে গরুর রাখালের বিচরণ থাকায় তারা যে বিড়ি বা সিগারেট খায় সে আগুন থেকেই জঙ্গলে আগুনের সূত্রপাত বলে আমরা মনে করছি। আমরা এক জায়গার আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে না আনতেই শুনি আরেক জায়গায় আগুন জ্বলছে। আমরা আছি মহাবিপদে। কারণ, আমাদের জনবল খুবই কম। কম জনবল দিয়ে এত বড় পাহাড়ের আগুন নিয়ন্ত্রণ বেশ কঠিন। তার পরও আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’