গুরুদাসপুর পৌরসভা
মেহেদী হাসান তানিম, গুরুদাসপুর (নাটোর)
প্রকাশ : ০৮ মার্চ ২০২৫ ১৮:৪৬ পিএম
নাটোরের গুরুদাসপুর পৌরসভা প্রতিষ্ঠার পর থেকে নানা অনিয়ম ও সমস্যায় জর্জরিত। পৌরসভাটি ৩৫ বছর আগে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হলেও চোখে পড়ার মতো কোনো উন্নয়ন হয়নি। ময়লা ফেলার একটি ড্যাম্পিং স্টেশনও স্থাপিত হয়নি।
যে যখন মেয়র ছিলেন, ইচ্ছেমতো পৌরসভায় নিয়োগ দিয়েছেন। অথচ দুই বছরে ৭২ স্টাফের নেই বেতন। সম্প্রতি দুজন অবসরে গেছেন। মাস্টাররোলে ৪২ জনকে নিয়োগে দেওয়া হয়েছে। প্রতি মাসে স্টাফ বেতন প্রায় ২৮ লাখ টাকা।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, গুরুদাসপুর পৌরসভা প্রতিষ্ঠার পর মশিউর রহমান বাবলু দুই টার্ম, আমজাদ হোসেন এক টার্ম ও সর্বশেষ শাহনেওয়াজ আলী মোল্লার তিন টার্ম পৌর মেয়র থাকার সময় বহু কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছেন। এখানে কলকারখানা নেই কিন্তু পৌর কর্তৃপক্ষ মেকানিকেল ইঞ্জিনিয়ার পদে লোক নিয়েছে। টিকাদান কেন্দ্র না থাকলেও টিকাদানকারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এমন কিছু পদ আছে যাদের কোনো কার্যক্রম নেই।
পৌর প্রশাসক ফাহমিদা আফরোজ গত ৮ জানুয়ারি কর্মচারীদের চার মাসের বেতন দিয়েছেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীর ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়েছে। পৌরবাসীর প্রশ্নÑ এক লোক দিয়ে কী হবে? তাদের নাগরিকসেবার মান সর্বনিম্নগামী। পৌরসভার দৃশ্যমান কোনো উন্নতি হয়নি। যে উন্নতি নাগরিকসেবার মান বাড়িয়ে তুলবে।
১১ বর্গকিলোমিটারের পৌরসভায় প্রায় ৩০ হাজার মানুষের বাস। এতে নেই বিনোদনের পার্ক ও কমিউনিটি সেন্টার। রাস্তাঘাট, ড্রেন, কালভার্ট নির্মাণ হয় না দীর্ঘদিন। যদিও এগুলো সংস্কার করা হয় তা সিডিউল না মেনে নিম্নমানের উপদানে। কাজ হওয়ায় কিছুদিন পরেই ফিরে যায় পূর্বাবস্থায়। সড়কে ও হাট-বাজারে, নদীর তীরে অবাধে ফেলা হয় ময়লা আবর্জনার স্তূপ। এর দুর্গন্ধে অতিষ্ট স্থানীয়রা। ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়ানো হলেও নাগরিকসেবা না বাড়ায় পৌরবাসী ক্ষুব্ধ, হতাশ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক’জন পৌর কর্মচারী বলেন, হোল্ডিং ট্যাক্স ও হাটবাজারের ইজারা থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে উন্নয়ন সম্ভব নয়। স্থানীয় সরকারকে গুরুদাসপুর পৌরসভার উন্নয়নের জন্য মোটা অঙ্কের বরাদ্দ দিতে হবে। বিগত দিন থেকে এ পৌরসভার প্রতি স্থানীয় সরকারের নেক নজর ছিল না। অন্তর্বর্তী সরকার উচিত হবে এটা ভেবে, উন্নয়ন বরাদ্দ দেওয়া।
এদিকে গত ১১ ফেব্রুয়ারি পৌরসভার চাঁচকৈড় হাটবাজার প্রকাশ্য নিলামের মাধ্যমে প্রায় ২ কোটি ৩২ লাখ টাকা ইজারা দেওয়া হয়েছে। ওই সুযোগে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বকেয়া বেতনের দাবিতে পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অবস্থান নেন। আইন অনুসারে ইজারার ৪০ শতাংশ টাকা সংশ্লিষ্ট হাটের উন্নয়নে এবং ৫ শতাংশ টাকা দিয়ে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের বিধান থাকলেও পুরো টাকাই বেতন পরিশোধের জন্য চাপ দেন আন্দোলনরত কর্মচারীরা।
পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা হাসান আলী বলেন, ‘ক’ শ্রেণির এ পৌরসভায় ১৫০টি পদ রয়েছে। বর্তমানে ৭২ জন স্টাফ ছাড়াও চুক্তিভিত্তিক ৪২ জন কর্মরত। সাবেক মেয়ররা পদগুলোতে নিয়োগ দিয়েছেন। নাটোর জেলার অন্যান্য পৌরসভায় এত স্টাফ নেই। তাদের বেতন নিয়েও কোনো সমস্যা হয় না। কিন্তু অতিরিক্ত জনবলের কারণে আমরা বেতন পাই না।
পৌর প্রশাসক ফাহমিদা আফরোজ বলেন, পৌরসভার কাজের জন্য দারকার হলে মাস্টাররোলে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়। কোনো কাজ না থাকলে তাদের নিয়োগে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। কিন্তু রাজস্ব খাতে বিভিন্ন সময় নিয়মানুসারে যেগুলো নিয়োগ হয়েছে, সে বিষয়ে কিছু বলার নেই। পৌরসভার বেতন দেওয়ার সামর্থ্য না থাকলে মাস্টাররোল নিয়ে চিন্তা করা হবে। পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহমিদা আফরোজ আরও বলেন, ‘দীর্ঘদিনের বকেয়া বেতন পরিশোধ করার মতো পৌরসভার বাড়তি কোনো টাকা নেই। তবে চেষ্টা থাকবে প্রতি মাসের বেতন পরিশোধের। নিয়ম অনুযায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা টায়ার জ্বালিয়ে আন্দোলন করতে পারেন না। কিছু কর্মচারীকে শোকজ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’