× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

জাহাজ সংকটে বছরে গচ্চা ৪০৫৬ কোটি টাকা

হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম

প্রকাশ : ০৮ মার্চ ২০২৫ ১১:৫৭ এএম

গ্রাফিক্স : প্রতিদিনের বাংলাদেশ

গ্রাফিক্স : প্রতিদিনের বাংলাদেশ

বছরে ৬০ থেকে ৬৫ লাখ মেট্রিক টন জ্বালানি তেল আমদানি করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জাহাজ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) বড় অয়েল ট্যাংকার জাহাজ না থাকায় জ্বালানি তেল আমদানির প্রায় পুরোটাই পরিবহন করতে হয় বিদেশি জাহাজে। তাতে বছরে কয়েকশ মিলিয়ন মার্কিন ডলার চলে যাচ্ছে দেশের বাইরে। 

বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, জ্বালানি তেল পরিবহনের জন্য এক লাখ মেট্রিক টন ক্রুড অয়েল পরিবহনের জন্য একটি বড় অয়েল ট্যাংকার জাহাজ ভাড়া করতে খরচ হয় অন্তত ৫২ থেকে ৫৩ লাখ মার্কিন ডলার। এই হিসাবে ৬৫ লাখ মেট্রিক টন জ্বালানি তেল পরিবহন করতে বছরে বিপিসির খরচ হয় প্রায় ৩ হাজার ৩৮০ লাখ মার্কিন ডলার; যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৪ হাজার ৫৬ কোটি টাকা। 

নিজস্ব পতাকাবাহী অয়েল ট্যাংকার জাহাজ থাকলে বিপুল পরিমাণ এই টাকা দেশেই থাকত বলে জানিয়েছেন নৌ-বাণিজ্য সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএমওএ) সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘বাংলাদেশে যেই পরিমাণ আমদানি এবং রপ্তানি হয়। তার মাত্র ১০ শতাংশ আমরা আমাদের নিজস্ব পতাকাবাহী জাহাজ দিয়ে পরিবহন করতে পারি। অথচ জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা আঙ্কটাডের রুলস অনুযায়ী আমরা ৪০ শতাংশ পরিবহন করতে পারি। আমাদের নিজস্ব পতাকাবাহী জাহাজ না থাকার কারণে আমরা সেটি পারছি না। যে কারণে আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহন খাতে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমদানি-রপ্তানির ৪০ শতাংশ পণ্য পরিবহন করতে হলে আমাদের নিজস্ব পতাকাবাহী জাহাজ থাকার কথা এক হাজারের বেশি। কিন্তু সরকারি-বেসরকারি মিলে এখন আমাদের নিজস্ব পতাকাবাহী জাহাজ আছে মাত্র ১০০টি। তাই সরকারের উচিত দেশীয় পতাকাবাহী জাহাজ যাতে বৃদ্ধি পায়, সেই নীতিমালা গ্রহণ করা। কারণ ভাড়া তো আমাদের ফিক্সড আছে, জাহাজ থাকলে ভাড়ার অভাব হবে না। আর তাতে দেশও লাভবান হবে, দেশের টাকা দেশে থেকে যাবে। ডলার সংকটও কমবে।’

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের তথ্য অনুয়ায়ী, পরিশোধিত ও অপরিশোধিত মিলে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিপিসি মোট জ্বালানি তেল আমদানি করে ৬৩ লাখ ৭১ হাজার ৫৭৩ মেট্রিক টন। এর মধ্যে অপরিশোধিত ক্রুড অয়েল আমদানি করে ১৩ লাখ ৭ হাজার ৬৬৮ মেট্রিক টন। আর

পরিশোধিত ডিজেল, অকটেন, জেট, ফার্নেস এবং মেরিন অয়েল আমদানি করে সব মিলিয়ে ৫০ লাখ ৬৩ হাজার ৯০৫ মেট্রিক টন। এর মধ্যে ৩৫ লাখ ৩৫ হাজার ৩০৭ মেট্রিক টন ডিজেল আমদানি করা হয়।

এই ৬৩ লাখ ৭১ হাজার মেট্রিক টন জ্বালানি তেল পরিবহন করতে খরচ হয়েছে প্রায় ৩২৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিদেশি জাহাজের মাধ্যমে জ্বালানি তেলগুলো পরিবহন করার কারণে পুরো টাকাটাই চলে গেছে বিদেশে। এর মধ্যে ১৩ লাখ ৭ হাজার মেট্রিক টন ক্রুড অয়েল পরিবহনের জন্য বিপিসির পক্ষে জাহাজ ভাড়া করে তেলগুলো পরিবহন করে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি)। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের জানুয়ারি মাসে এমটি ওমেরা লিগ্যাসি নামে একটি অয়েল ট্যাংকার জাহাজে করে এক লাখ মেট্রিক টন ক্রুড অয়েল আমদানি করে বিপিসি। ওই জ্বালানি তেল পরিবহনের ভাড়া বাবদ জাহাজ মালিককে ৫২ লাখ ৬ হাজার ১৯৭ মার্কিন ডলার পরিশোধ করা হয়। এরপর গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে এমটি নরডিক পোলাক্স নামে আরেকটি অয়েল ট্যাংকার জাহাজে করে এক লাখ মেট্রিক টন ক্রুড অয়েল আমদানি করা হয়। ওই ক্রুড অয়েল পরিবহন খরচ বাবদ জাহাজটি মালিককে পরিশোধ করা হয় ৫২ লাখ ৮৫ হাজার ৪৫৩ মার্কিন ডলার। এই হিসাবে এক লাখ মেট্রিক টন জ্বালানি তেল পরিবহন করতে গড়ে খরচ হচ্ছে ৬২-৬৩ কোটি টাকা। আর ৬৩ লাখ ৭১ হাজার মেট্রিক টন জ্বালানি তেল পরিবহন করতে খরচ হচ্ছে প্রায় ৪ হাজার ১৩ কোটি টাকা। নিজস্ব পতাকাবাহী জাহাজ না থাকায় বিপুল পরিমাণ এই টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর মাহমুদুল মালেক প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘বিপিসি পরিশোধিত ও অপরিশোধিত দুই ধরনের জ্বালানি তেল আমদানি করে। এর মধ্যে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল (ক্রুড অয়েল) আমদানি করে ১২-১৩ লাখ মেট্রিক টন। এই ক্রুড অয়েল ‍পরিবহনের ব্যবস্থা বিএসসি করে। আমাদের নিজস্ব জাহাজ না থাকায় আমরা ভাড়া করে এনে ক্রুড অয়েল পরিবহন করি। এই ১৩ লাখ মেট্রিক টন ক্রুড অয়েল পরিবহন করতে গিয়ে বিদেশি জাহাজ মালিককে আমাদের ৬০-৬৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিশোধ করতে হয়। আমাদের নিজস্ব জাহাজ থাকলে এটি আমাদের দেশে থেকে যেত।’

তিনি আরও বলেন, শুধু এই ৬৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার নয়, বিপিসি বছরে ৫০ থেকে ৫৫ লাখ মেট্রিক টন পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করে। এই তেলগুলো যাদের কাছ থেকে আমদানি করা হয়, তারা জাহাজে করে দেশে এনে পৌঁছে দেয়। এই পরিশোধিত তেল পরিবহনের জন্য আমাদের তিনটি প্রোডাক্ট ট্যাংকার জাহাজ আছে। এগুলো যদি আমরা পরিবহন করতে পারতাম তাহলে জ্বালানি তেল পরিবহন বাবদ আরও ২৫০ থেকে ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সাশ্রয় হতো। দেশের টাকা দেশে থাকত।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা