আন্তর্জাতিক নারী দিবস
মেরিনা লাভলী, রংপুর
প্রকাশ : ০৮ মার্চ ২০২৫ ১১:৪২ এএম
রংপুর সদরের চন্দনপাট ইউনিয়নের ঈশ্বরপুরে নিজ বাড়িতে দেশি জাতের মুরগি লালন-পালনে ব্যস্ত ইয়াসমিন বেগম। প্রবা ফটো
রংপুরের প্রত্যন্ত এলাকার গৃহিণী ইয়াসমিন বেগম। আঙিনা কৃষির মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন। খামারে দেশি মুরগি পালন, গরু লালন-পালন ও আঙিনায় বিষমুক্ত উপায়ে শাকসবজি আবাদ করছেন। সংসারে সচ্ছলতা আসায় পরিবার ও সমাজে তিনি পাচ্ছেন আলাদা মর্যাদা। হয়ে উঠেছেন অন্য নারীদের অনুকরণীয়। সচেতনরা মনে করছেন, নারীর ক্ষমতায়নে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে প্রশিক্ষণসহ সহযোগিতা পেলে প্রান্তিক পর্যায়ের নারীরা এগিয়ে নেবে সমাজ।
রংপুর সদর উপজেলার চন্দনপাট ইউনিয়নের ঈশ্বরপুর এলাকার গৃহিণী ইয়াসমিন বেগম (৪১)। সরেজমিনে দেখা যায়, তার বসতবাড়ির সামনে পতিত জমিতে বাঁধাকপি, পালং শাক, নাপা শাক, টমেটো, পেঁয়াজ লাগিয়েছেন। ছোট ছোট বেডে সারি সারি শাকসবজি বেড়ে উঠেছে। বাড়ির আঙিনায় একটি টিনের ঘরে দেশি মুরগি পালন করেছেন। খামারে রয়েছে ৫০টি মোরগ-মুরগি। মুরগির খামারের পাশে একটি ঘরে রয়েছে সংকর জাতের গরু। শাকসবজি উৎপাদন, মুরগি ও গরু লালন-পালনে তিনি ব্যস্ত সময় পার করছেন। বাজারে দেশি মুরগির চাহিদা থাকায় বাড়িতে নিয়েছেন ইনকিউবেটর। খামারের মুরগির ডিম দিয়ে সেখানে বাচ্চা ফুটাচ্ছেন। ডিম, মুরগি ও মুরগির বাচ্চা বিক্রি করে লাভের মুখ দেখছেন।
ইয়াসমিন বেগম জানান, কৃষক স্বামীর সংসারে আগে অভাব-অনটন লেগেই থাকত। ২০২৩ সালে ইরি-সিমিটের সমন্বিত খামার প্রকল্পের মাধ্যমে তিনি আঙিনায় শাকসবজি উৎপাদন, উন্নত পদ্ধতিতে গরু লালন-পালন ও খামার পদ্ধতিতে দেশি মুরগি পালনের প্রশিক্ষণ নেন। সংস্থাটি তাকে প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইন্সটিটিউট থেকে দেশীয় মুরগির বাচ্চা সরবরাহ করে। একটি টিনের ঘর তৈরি করে তিনি খামার শুরু করেন। সঠিক যত্ন পাওয়ায় তিন মাসের মধ্যে মুরগিগুলো বিক্রির উপযোগী হয়ে ওঠে। বাড়ি থেকে খামারের মোরগগুলো কেজি প্রতি সাড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা দরে এবং মুরগির ডিম ৫০ টাকা হালি দরে বিক্রি করছেন।
সংসারে সচ্ছলতা আসতে শুরু করে। বাড়ির আঙিনায় বছরব্যাপী মৌসুমভিত্তিক বিষমুক্ত শাকসবজি উৎপাদন হওয়ায় পরিবারের চাহিদা পূরণ হচ্ছে। বাড়ির পতিত জায়গায় নেপিয়ার ঘাস আবাদ করে গরুকে খাওয়ানোয় বেশি দুধ পাচ্ছেন। তিনি বলেন, আগে স্বামীর আয়ে সংসার চলত। নিজের স্বাধীনতা ছিল না। মন চাইলেও নিজে কিছু কিনতে পারতাম না। এখন বাড়ির শাকসবজি খাই, প্রতিবেশীদের দেই। এ বছর অনেক লাউ বিক্রি করেছি। খামারের মুরগির ডিম খাচ্ছি, বাচ্চা ফুটিয়েও বিক্রি করছি। শহর থেকে অনেকেই আসে খামারের মোরগ কিনতে। আমার আয়-উন্নতি ভালো। আগে গরুকে শুধু খড় ও ঘাস খাওয়াতাম। এখন নেপিয়ার ঘাস, খড় একসঙ্গে মিশিয়ে খাওয়াই। গরুকে নিয়মিত টিকা দেওয়াই। ফলে গরু সুস্থ থাকছে এবং বেশি দুধ দিচ্ছে।
ইয়াসমিন বেগমের স্বামী মিজানুর রহমান বলেন, আঙিনা কৃষির সঙ্গে ইয়াসমিন জড়িত হওয়ায় সংসারের অনেক খরচ কমেছে। বাজার থেকে শাকসবজি, দুধ-ডিম কিনতে হয় না। সংসারের অনেক উপকার হয়েছে।
কৃষিপ্রধান এলাকা রংপুর, এ অঞ্চলের নারীদের কৃষিকাজে সম্পৃক্ত করে তাদের আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে স্বাবলম্বী করতে কাজ করছে ইরি। এ বিষয়ে ইরির কৃষি গবেষণা ও উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ আবু আবদুল্লাহ মিয়াজী বলেন, প্রান্তিক পর্যায়ের নারীদের আঙিনায় শাকসবজি উৎপাদন, গবাদিপশু পালন, খামার তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। অনেক নারীকে ছোট চাল ভাঙা যন্ত্র, ঘাস কাটার যন্ত্র দেওয়া হয়েছে। তারা নিজেরাই এসব যন্ত্র চালিয়ে ভালো আয় করছে।
তিনি আরও বলেন, প্রান্তিক নারীরা অনেক পরিশ্রমী। প্রশিক্ষণ ও সহায়তা পেলে তারা অর্থনৈতিক উন্নয়নে বড় অবদান রাখবে। এ ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি দপ্তরগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। নারীদের স্বাবলম্বী করার মাধ্যমে পরিবার ও সমাজে তাদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হোক, এটা আমাদের চাওয়া।