ফসিয়ার রহমান, পাইকগাছা (খুলনা)
প্রকাশ : ০৮ মার্চ ২০২৫ ১১:৩৬ এএম
অবৈধ চুল্লিতে পুড়াতে জড়ো করা কাঠ। বৃহস্পতিবার খুলনার পাইকগাছা উপজেলার চাঁদখালী গ্রামে। প্রবা ফটো
খুলনার পাইকগাছায় চাঁদখালী গ্রামে গড়ে উঠেছে শতাধিক কয়লার চুল্লি। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার পরই আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে চুল্লির মালিকরা। অবাধে চুল্লিতে কাঠ পুড়িয়ে তৈরি করা হচ্ছে কয়লা। এ কারণে অবৈধ চুল্লি থেকে নির্গত ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। হুমকিতে রয়েছে জনস্বাস্থ্যও।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০২৩ সালে উপজেলার চাঁদখালীতে গড়া ওঠা কয়লা তৈরির কারখানা বন্ধ করতে পরিবেশ অধিদপ্তর ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। এ সময় ৬৯টি চুল্লির মধ্যে এক্সকাভেটর দিয়ে ৫টি চুল্লি ধ্বংস করা হয়েছিল। বাকিগুলো বন্ধ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। মানবিক কারণে তখন এক মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ কার্যক্রম বন্ধ ও অপসারণ করার শর্তে সময় দেওয়া হয়। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবু শাহাজাদা ইলিয়াস মুচলেকা দেওয়ায় কর্তৃপক্ষ বিবেচনায় নেন। কিন্তু এরপর পার হয়েছে দুই বছর। কিন্তু সেসব চুল্লি আর অপসারণ করা হয়নি।
বরং সেই ৬৪ চুল্লি অপসারণ তো দূরের কথা বর্তমানে তা বেড়ে ১১১ চুল্লি হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব চুল্লিতে অনায়াসে পুরছে সুন্দরবন থেকে চোরাই পথে কেটে আনা কাঠ। স্থানীয়ভাবে কিছু কাঠ সংগ্রহ করে স্যাম্পল হিসেবে রাখা হয়। যাতে সুন্দরবন থেকে কাঠ আনার বিষয়টি কেউ বুঝতে না পারেন।
চুল্লি সংশ্লিষ্ট মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একটি চুল্লিতে প্রতিবার ২০০ থেকে ৩০০ মণ পর্যন্ত কাঠ পোড়ানো হয়। এক বছরে কমপক্ষে ২৫ হাজার মণ কাঠ পোড়ানো হয়। প্রতি মাসে প্রতিটি চুল্লিতে ৩ থেকে চারবার কাঠ পুড়িয়ে কয়লা করা হয়। ফলে প্রতি মাসে কয়লার চুল্লিতে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ মণ কাঠ পোড়ানো হয়। তাহালে শতাধিক চুল্লিতে কত মণ কাঠ লাগে ও এসব কাঠ কোথা থেকে আসে, তা সহজেই অনুমেয়। আর কাঠ পুড়িয়ে কয়লা বানানো অধিক লাভজনক হওয়ায় সবদিক ম্যানেজ করে এই অবৈধ ব্যবসায় নেমে পড়েছেন এলাকার কিছু প্রভাবশালী।
অন্যদিকে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশের। চুল্লির বিষাক্ত ধোঁয়ায় এলাকায় বিভিন্ন রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন, প্রকৃতি ধ্বংসসহ মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে থাকলেও অদৃশ্য কারণে এত দিন কর্তৃপক্ষ নীরবে রয়েছে বলে অভিযোগ। স্থানীয়রা বলেন, চুল্লির কারণে রাস্তা দিয়ে চলাচল করা যায় না। চোখ জ্বালা করতে থাকে ও দম বন্ধ হয়ে আসে। এসব কয়লার চুল্লির বিষাক্ত ধোঁয়ার কারণে আশপাশে বসবাস করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে চোখের বিভিন্ন সমস্যাসহ শ্বাসতন্ত্রজনিত সমস্যা যেন লেগেই থাকে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে চাঁদখালী এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানান, চুল্লির মালিকরা সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে পুলিশ দিয়ে তাকে হেনস্থা করাসহ বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন।
চুল্লি মালিকদের সংগঠনের সেক্রেটারি মো. সাঈদ জানান, আমাদের কোনো বৈধতা নেই। প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে লাখ লাখ টাকা মাসোয়ারা দিয়ে ব্যবসা করতে হয়। এরপরও সাংবাদিকরা এলে তাদেরও টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করে রাখি। আপনাদের বিষয়েও আমরা দেখব। এ বিষয়ে চুল্লির অন্য মালিকদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তারা অপারগতা প্রকাশ করেছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহেরা নাজনীন বলেন, ইতোমধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরকে বিষয়টি জানিয়েছি। এ বিষয়ে তারা দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন বলে জানিয়েছে।