মান্দা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
এম আর ইসলাম রতন, নওগাঁ
প্রকাশ : ০৮ মার্চ ২০২৫ ১১:২৪ এএম
নওগাঁর মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক ও কর্মচারী সংকটে রোগীরা কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না। প্রবা ফটো
নওগাঁর মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক ও কর্মচারী সংকটে রোগীরা কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না। ৫০ শয্যার এই হাসপাতালটি উপজেলার প্রায় ৫ লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবার ভরসাস্থল। কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসাসেবা না পেয়ে রোগীদের ছুটতে হয় জেলা সদরসহ অন্যান্য হাসপাতাল ও প্রাইভেট ক্লিনিকে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সূত্রে জানা গেছে, এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৪ জন স্বাস্থ্য কর্মকর্তার পদ থাকলেও আবাসিক কর্মকর্তাসহ রয়েছেন মাত্র ৪ জন। এর মধ্যে ৩ জন চিকিৎসক দিয়ে পর্যায়ক্রমে জরুরি ও অন্তঃবিভাগের কাজ চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসক সংকটে ছোট ছোট সমস্যাতেও রোগীদের রেফার্ড করা হচ্ছে নওগাঁ কিংবা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এ ছাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে আয়া, ওয়ার্ডবয় ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীর সংকট রয়েছে। আয়া ও ওয়ার্ডবয়সহ ৫ পদের বিপরীতে রয়েছে ২ জন। পরিচ্ছন্নতাকর্মীর ৫ পদের জায়গায় আছে মাত্র একজন।
গত শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত হাসপাতালের বহির্বিভাগে ২ হাজার ৬৬০ জন, জরুরি বিভাগে ৬৩৭ জন ও অন্তঃবিভাগে ১৯৩ জন রোগী চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন। কিস্তু চিকিৎসক না থাকায় বিপুলসংখ্যক রোগীকে সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।
গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে হাসপাতালটি ঘুরে দেখা যায়, বহির্বিভাগে নারী, শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের রোগীদের দীর্ঘ লাইন। লাইনে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ অপেক্ষার পর চিকিৎসক দেখাতে না পেরে হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন অনেকে।
উপজেলার পলাশবাড়ি এলাকা থেকে আসা শামীম হোসেন বলেন, ‘বুকের ব্যথার চিকিৎসা নিতে ১৫ কিলোমিটার দূর থেকে হাসপাতালে এসেছি। কিন্তু এমবিবিএস পদের কোনো ডাক্তার পাইনি। শেষে উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারের কাছে চিকিৎসা নিয়ে ফিরে যাচ্ছি।’
গোসাইপুর থেকে হার্ট, ডায়াবেটিস ও বুকের ব্যথার চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে এসেছিলেন রবিউল ইসলাম টিপু। তিনি বলেন, হাসপাতালে কোনো ডাক্তার নাই। কমিউনিটি মেডিকেল অফিসাররা দেখে একটা চিরকুটে কি কি লিখে দিল, ভালো লাগেনি। রাজশাহী শহরে গিয়ে ভালো ডাক্তার দেখাব।
সুনীল কুমার নামে আরেকজন বলেন, একসময় এ হাসপাতালে অনেক ডাক্তার থাকায় বৈকালিক চিকিৎসাসেবা চালু করা হয়েছিল। ভালোমানের চিকিৎসা পাওয়ায় সময় হাসপাতালে রোগীর লাইন লেগেই ছিল। এখন খুঁজেও ডাক্তার পাওয়া যায় না। রোগীর চাপ বাড়লেও ডাক্তার না থাকায় চিকিৎসা বঞ্চিত উপজেলার মানুষ।
স্থানীয়রা জানান, নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কের অদূরে হাসপাতালটির অবস্থান হওয়ায় গুরুত্ব অনেক বেশি। মহাসড়কে ছোট-বড় দুর্ঘটনায় দ্রুত চিকিৎসার জন্য আহতদের এ হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসক না থাকায় তাদের পাঠানো হয় নওগাঁ কিংবা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এতে পথেই অনেক সময় রোগীর মৃত্যু ঘটে। দ্রুত হাসপাতালটিতে চিকিৎসকসহ অন্যান্য পদের জনবল নিয়োগ দেওয়া হোক।
জানাতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোহা. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তাসহ হাসপাতালে মাত্র ৪ জন চিকিৎসক আছেন। তাদের দিয়ে কোনোভাবে জরুরি ও অন্তঃবিভাগের কাজ চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরও সংকট রয়েছে। এসব কারণে রোগীরা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। ইতোমধ্যে কয়েকদফা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করা হয়েছে। চিকিৎসক পদায়নে কর্তৃপক্ষ সাড়াও দিয়েছেন। আশা করছি খুব শিগগিরই এ সমস্যার সমাধান হবে।