লামা-আলীকদম (বান্দরবান) সংবাদদাতা
প্রকাশ : ০৮ মার্চ ২০২৫ ১১:২১ এএম
বান্দরবানের লামা উপজেলার লামামুখ এলাকায় মাঠজুড়ে এখন শুধুই তামাক চাষ। শুক্রবার তোলা। প্রবা ফটো
বান্দরবানের লামা ও আলীকদম উপজেলায় বিগত বছরের মতো এ বছরও দশ হাজার একর ফসলি জমিতে তামাক চাষ করা হয়েছে। সরকারিভাবে কৃষি বিভাগের মাধ্যমে কৃষকদের প্রণোদনা দিয়েও ঠেকানো যাচ্ছে না ক্ষতিকর তামাকের চাষ। ফলে বিষবৃক্ষ তামাকের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে পাহাড়ি এই দুই উপজেলা।
তামাকের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং ক্ষেতে পোকা দমনের জন্য ব্যবহার হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত সার ও উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কীটনাশক। ফলে একদিকে জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে; অন্যদিকে উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে চলা মাতামুহুরী নদীতে মাছ কমে যাচ্ছে বলে জানান স্থানীয়রা।
কৃষকরা জানান, অধিক ফলনের আশায় তামাক চাষিরা রাসায়নিক সার ব্যবহার করে থাকেন। তামাক চাষে সাধারণ ফসলের চেয়ে আটগুণ বেশি সার ও কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। এই সারের মধ্যে ইউরিয়া, ফসফেট, বোরন, দস্তা, ম্যাঙ্গানিজ ও পটাশিয়াম সালফেট অন্যতম।
তামাক চাষি ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, ১৯৮৪ সালে লামা উপজেলার লামামুখ ও মেউলারচর এলাকায় প্রথমবারের মতো ১০ একর জমিতে তামাক চাষ শুরু হয়। এরপর থেকে চার দশকেরও বেশি সময় ধরে মাতামহুরী নদীর পলিবাহিত উর্বর এলাকা এবং জ্বালানি কাঠের সহজলভ্যতার কারণে তামাক চাষ গ্রাস করেছে লামা ও আলীকদমের বোরো-রবি মৌসুমের ফসলি জমি। ফসলি জমিতে একচেটিয়া তামাক চাষের বিরূপ প্রভাব পড়ছে বোরো ও রবি শস্য আবাদে। তামাকের আগ্রাসনের কারণে মাঠে তৈলবীজ জাতীয় ফসলের চাষ কমেছে। তামাক কোম্পানিগুলো কৃষকদের বীজ, সার, কীটনাশক, পাওয়ার টিলার, পাওয়ার পাম্প, নগদ ঋণÑ সর্বোপরি বাজারজাতকরণের সুবিধা প্রদানের শতভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে চাষে উদ্বুদ্ধ করে থাকে।
লামা কৃষি বিভাগের উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা অভিজিত বড়ুয়া জানান, এ বছর উপজেলায় ১ হাজার ৬০০ জন কৃষককে বিভিন্ন ফসলের ওপর প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সরিষা, চিনাবাদাম, পেঁয়াজ, ভুট্টা, ফেলন, সূর্যমুখী, অড়হর ও বোরো হাইব্রিড ধান। এ ছাড়া কৃষকদের উন্নত জাতের বীজ, বিভিন্ন ধরনের সার, পাওয়ার টিলার, সেচ যন্ত্র ও কীটনাশক ছিটানোর স্প্রে মেশিন দেওয়া হয়েছে।
আলীকদম কৃষি বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রেজাউল করিম জানান, আলীকদমে কৃষি বিভাগ, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ ও উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে ১ হাজার ৭০০ কৃষককে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে।
লামা পৌরসভার লামামুখ এলাকার কৃষক মালু মিয়া ও আলী মিয়া জানান, তরিতরকারি বা অন্যান্য ফসল উৎপাদন করলে তা বাজারজাত করার নিশ্চয়তা না থাকায় ন্যায্যমূল্য না পেয়ে লোকসান গুনতে হয়। তামাক চাষ করলে কোম্পানিগুলো নগদ এবং এককালীন মূল্যে উৎপাদিত শতভাগ তামাকই ক্রয় করে। এ কারণেই তারা তামাক চাষে ঝুঁকছেন।
লামা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আশরাফুজ্জামান জানান, কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের বাজারজাতকরণে অনিশ্চয়তা, পক্ষান্তরে তামাক বাজারজাতকরণের শতভাগ নিশ্চয়তার কারণেই কৃষকরা তামাক চাষ করছেন। তবে আগের তুলনায় তামাক চাষ কিছুটা কমে আসছে।