× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

আতঙ্কের নাম মিনি তেল পাম্প

শাহিনুর সুজন, চারঘাট (রাজশাহী)

প্রকাশ : ০৮ মার্চ ২০২৫ ১১:১৯ এএম

রাজশাহীর বাঘার রুস্তমপুর বাজারে দোতলা বাড়ির নিচে আবাসিক এলাকায় ডিসপেন্সার মেশিন বসিয়ে তৈরি মিনি তেল পাম্প। বৃহস্পতিবার তোলা। প্রবা ফটো

রাজশাহীর বাঘার রুস্তমপুর বাজারে দোতলা বাড়ির নিচে আবাসিক এলাকায় ডিসপেন্সার মেশিন বসিয়ে তৈরি মিনি তেল পাম্প। বৃহস্পতিবার তোলা। প্রবা ফটো

ছোট ছোট দোকানে কিংবা আবাসিক ভবনের নিচে ফিলিং স্টেশনের মতো ডিসপেন্সার মেশিন বসিয়ে বিক্রি হচ্ছে ডিজেল, পেট্রোল, অকটেন। অথচ এগুলোর নেই কোনো ডিলারশিপ কিংবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন। জ্বালানি তেল বিক্রির এ ব্যবস্থা পরিচিতি পেয়েছে ‘মিনি তেল পাম্প’ নামে। এসব পাম্পে অবৈধ উপায়ে ভেজাল তেল যেমন সরবরাহ হচ্ছে তেমনি তৈরি হয়েছে নিরাপত্তাঝুঁকিও।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহীর চারঘাট ও বাঘা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামীণ সড়কের পাশে ও আবাসিক এলাকায় জ্বালানি তেল বিক্রির এ ধরনের অন্তত ২৫টি মিনি পাম্প গড়ে উঠেছে। আরও কয়েকটি দোকানে মেশিন বসিয়ে চালুর অপেক্ষায়। অথচ পেট্রোলিয়াম সংক্রান্ত আইন অনুসারে জ্বালানি তেল পেট্রোল-ডিজেলের ব্যবসার জন্য বিস্ফোরক পরিদপ্তরের পূর্ব অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক। নিরাপত্তার কারণে ২০১৫ সাল থেকে খোলাবাজারে জ্বালানি তেল বিক্রির ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে। 

সরেজমিন দেখা যায়, বাঘা উপজেলার রুস্তমপুর বাজারে আবাসিক এলাকায় দোতলা ভবনের নিচে ও টিনশেড ঘরে পাশাপাশি দুটি মিনি তেল পাম্প গড়ে তোলা হয়েছে। সেখানে ডিসপেন্সার মেশিন বসিয়ে খেয়ালখুশিমতো ডিজেল, পেট্রোল, অকটেন বিক্রি করা হচ্ছে। একই অবস্থা চারঘাটের ফরিদপুর মোড়, নাওদাপাড়া বাজার ও নন্দনগাছী বাজারেও। এসব মিনি পাম্পে শত শত তেলের ব্যারেল স্তূপ করে রাখতে দেখা গেছে।

স্থানীয়রা জানান, এই দুই উপজেলায় এ ধরনের মিনি পাম্প হয়েছে কয়েক বছর আগে। প্রথম দিকে দুয়েকটা থাকলেও নিয়মনীতির বালাই না থাকায় প্রতিনিয়ত নতুন নতুন তেল পাম্প গড়ে উঠছে। তবে বিস্ফোরক পরিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) ও পরিবেশ অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছে এ ধরনের ব্যবস্থাপনায় তেল বিক্রির কোনো অনুমতি কাউকে দেওয়া হয়নি। 

চারঘাটের ফরিদপুর মোড়ের মিনি তেল পাম্পের মালিক সোহানুর রহমান বলেন, বিস্ফোরক অধিদপ্তরে আবেদন করেছি কিন্তু অনুমোদন পাইনি। ফায়ার সার্ভিস অনুমোদন দিয়েছে তা দিয়ে পাম্প চালু করেছি। কিন্তু তেল বিক্রির অনুমোদনের কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি তিনি।

বাঘার রুস্তুমপুর বাজারের দুই মিনি তেল পাম্পের মালিক রবিউল আলম বাবু ও মজনু হোসেন বলেন, এলাকার জাহিদ ভাই রাজশাহী ফায়ার সার্ভিস অফিসে চাকরি করে। তার মাধ্যমে লাইসেন্স করে নিয়ে তেল পাম্প করেছি। তিনিই সব অনুমোদনের ব্যবস্থা করেছেন। বৈধতার সঙ্গেই ব্যবসা পরিচালনা করছি। 

মুঠোফোনে জানতে চাইলে জাহিদ তুহিন (রাজশাহী ফায়ার সার্ভিসে সৈনিক পদে কর্মরত) বলেন, শুনছি আপনারা নাকি তেল পাম্পের লাইসেন্স খুঁজছেন। সাংবাদিকদের লাইসেন্স খোঁজার কী প্রয়োজন? তারা কি আপনার টাকায় ব্যবসা করছে? আপনার এতে মাথাব্যথা কেন? লাইসেন্স অফিস দিয়েছে, অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। 

বাঘা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা মিজানুর রহমান ও চারঘাট ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা খাইরুল ইসলাম বলেন, মিনি তেল পাম্প স্থাপনে কাউকে লাইসেন্স দেওয়া হয়নি। এগুলো মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। অবৈধ তেল পাম্পের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে। 

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স রাজশাহীর ওয়্যারহাউস ইন্সপেক্টর সরোয়ার হোসাইন বলেন, চারঘাট-বাঘা এলাকার কাউকে এভাবে তেল বিক্রির অনুমোদন দেওয়া হয়নি। কেউ যদি মুদি কিংবা অন্য কোনো দোকানের অনুমোদন নিয়ে মেশিন স্থাপন করে মিনি তেল পাম্প গড়ে তোলে তবে তা সম্পূর্ণ অবৈধ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব মিনি তেল পাম্পে মাঝে মধ্যেই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ২০২১ সালে বাঘার মনিগ্রাম বাজারের মিনি তেল পাম্পে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় চেয়ারম্যান, ফায়ার সার্ভিস কর্মী, পুলিশ, সাংবাদিকসহ ৩০ জন আহত হয়। এরপর ২০২৩ সালে চারঘাটের নন্দনগাছী বাজারের একটি তেল দোকানে অগ্নিকাণ্ডে চারজন আহত হয়। আশপাশের দোকানে আগুন ছড়িয়ে পড়লে কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি হয়। 

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) চারঘাট উপজেলার সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, গ্রাম এলাকার আবাসিক জায়গায় নতুন নতুন মিনি পাম্প গড়ে উঠছে। একটি চক্র টাকার বিনিময়ে তাদের কাগজপত্র তৈরি করে দিচ্ছে। প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে পরিবেশের ওপর হুমকিসহ মারাত্মক অগ্নিঝুঁকি রয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর রাজশাহীর সহকারী পরিচালক কবির হোসেন বলেন, মিনি তেল পাম্প স্থাপনে আমাদের দপ্তর থেকে কাউকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। পরিদর্শন করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পদ্মা অয়েল কোম্পানি রাজশাহী বিভাগের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (বিক্রয়) হারিস আহমেদ সরকার বলেন, এসব মিনি তেল পাম্প বিভিন্ন অবৈধ উৎস থেকে তেল সংগ্রহ করে বিক্রি করে। এজন্য গ্রাহকরা প্রতারিত ও বৈধ ডিলাররা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এসব তেল পাম্প বন্ধে ও ব্যবস্থা নিতে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিতভাবে জানিয়েও কাজ হচ্ছে না। তারপরও সব তেল কোম্পানি মিলিয়ে লিখিতভাবে জানানো হবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা