ফেনী সংবাদদাতা
প্রকাশ : ০৪ ডিসেম্বর ২০২২ ১৩:১৭ পিএম
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২২ ১৬:৫৯ পিএম
ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন ফেনীর কৃষকরা। ছবি : প্রবা
ফেনীতে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। বাম্পার ফলন হওয়ায় তারা বেশ খুশি। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং ও অনাবৃষ্টি আমন ধানের ফলনে তেমন প্রভাব ফেলেনি।
জেলার ৬ উপজেলার ৪৩টি ইউনিয়ন ও ৫ পৌরসভায় চাষিরা আমন ধান ঘরে তুলছেন। নতুন ধান ঘরে তুলে অনেকে নবান্ন উৎসবে মেতে উঠেছেন। সবার ঘরে এখন পিঠা-পুলির উৎসব। প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যেও এবার জেলায় আমন ধানের ফলন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এবার জেলায় ৬৬ হাজার ৭৪৮ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ৬৬ হাজার ৭৪৮ হেক্টর জমিতে আমনের চাষ হয়েছে। এরই মধ্যে হাইব্রিড ৭৭ হেক্টর, উফশী ৬০ হাজার ২৭০ হেক্টর এবং স্থানীয় ৬ হাজার ৩৯৫ হেক্টর জমিতে আমানের আবাদ হয়েছে।
ফেনী সদর উপজেলায় ১৫ হাজার ৯৩১ হেক্টর, ছাগলনাইয়ায় ৯ হাজার ২৭১ হেক্টর, ফুলগাজীতে ৬ হাজার ২০৫ হেক্টর, পরশুরামে ৫ হাজার ৮৫০ হেক্টর, দাগনভূঞায় ৮ হাজার ৫১০ হেক্টর ও সোনাগাজীতে ২০ হাজার ৯৭৫ হেক্টর জমি লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আবাদ হয়েছে। এরই মধ্যে ৪৭ হাজার ৩০০ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। এর মধ্যে হাইব্রিড ৩৫ হেক্টর, উফশী ৪১ হাজার ২৮৬ হেক্টর ও ৬ হাজার ৭০ হেক্টর কাটা হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, চাষিরা ধান কাটা, মাড়াই ও ঝাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কোনো জমিতে চারজন আবার কোনো জমিতে ৮-১০ জন করে শ্রমিককে ধান কাটা ও মাড়াই করতে দেখা গেছে।
বিভিন্ন এলাকার প্রান্তিক চাষিরা বলেন, গত অক্টোবরে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে বৃষ্টিতে এবার ফসলের তেমন ক্ষতি হয়নি। পাশাপাশি ক্ষেতে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণও কম ছিল। দাম বেশি ও সংকটের মধ্যেও এবার ফসলের ক্ষেতে সময়মতো পানি ও সার দিতে পেরেছেন তারা। মূলত এসব কারণে আমন ধানের ফলন ভালো হয়েছে।
সোনাগাজীর চর চান্দিয়া এলাকার কৃষক মো. আবু তাহের জানান, তিনি এবার প্রায় ১০ একর জমিতে আমন ধানের আবাদ করেছেন। ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। ধানের শিষ আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রাকৃতিক দুর্যোগে কিছুটা শঙ্কিত ছিলেন। বৃষ্টিতে ধানের গাছ মাটি শুয়ে গিয়েছিল। পানির নিচে চলে যাওয়ায় কিছু ধান গাছ নষ্ট হয়েছে। এরপরও আল্লাহর রহমতে ধানের উৎপাদনে তেমন ক্ষতি হয়নি। গত কিছুদিন ধরে ধান পেকে জমিতে পড়ে রয়েছে। কয়েকটি জমির ধান কেটে ইতোমধ্যে বাড়িতে নিয়ে গেছেন।
সোনাগাজী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদ হোসেন মজুমদার জানান, সব মিলিয়ে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৭ হাজার ৬৭৭ মেট্রিক টন চাল। তবে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগেও কর্মকর্তারা মাঠে থেকে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ ও কৃষি সহায়তা দিয়েছে বলেই ফলন ভালো হয়েছে।
ফেনী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমীন আক্তার জানান, এ উপজেলায় ১৫ হাজার ৮৩৪ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে। ৭ হাজার ৮৯৯ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। আশানুরূপ জাতভিত্তিক ফলন হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকার পাশাপাশি চাষিরা আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন ছিলেন। তাদের নিবিড় পরিচর্যা ও আন্তরিকতার কারণে এবার ফসলের বাম্পার ফলন হওয়ায় প্রান্তিক কৃষকরাও অনেক খুশি।
ফেনীর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. একরাম উদ্দিন জানান, কম বৃষ্টি হওয়ায় বেশ ভালো হয়েছে। আমন ফলন বাড়ানোর জন্য কৃষি বিভাগের সার্বিক সহযোগিতা ছিল। আবহাওয়া অনুকূলে থাকার পাশাপাশি চাষিরা আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন হওয়ায় বাম্পার ফলন হয়েছে। এরই মধ্যে জেলায় প্রায় ৭১ শতাংশ জমির ধান কেটে কৃষকরা ঘরে তুলেছেন।
তিনি আরও বলেন, অনাবাদি পতিত জমি আবাদের আওতায় আনা হচ্ছে। এজন্য তাদেরকে দিকনির্দেশনা ও পরামর্শ দিচ্ছেন।