ইসমাইল মাহমুদ, মৌলভীবাজার
প্রকাশ : ০৩ মার্চ ২০২৫ ১৮:৪৩ পিএম
প্রবা ফটো
রমজানে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম এবং উৎপাদন হ্রাসের অজুহাতে দেশের অন্যতম উৎপাদন উপজেলা মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ক্রমশ বাড়ছে লেবুর দাম। খুচরা বাজারে জাত ও আকার ভেদে প্রতি হালি (চারটি) লেবু বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা থেকে ২২০ টাকা পর্যন্ত। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এক সপ্তাহ আগেও প্রতি হালি লেবু খুচরা বাজারে বিক্রি হয়েছে ১০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত।
সোমবার (৩ মার্চ) বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রমজানের শুরুতে হঠাৎ লেবুর হালিতে দাম বেড়েছে চার গুণেরও বেশি।
লেবুর ক্রেতা ব্যবসায়ী শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমি আজ (সোমবার) বাজার থেকে ২টি বড় সাইজের লেবু কিনেছি ১১০ টাকা দিয়ে। অথচ এ সাইজের লেবু আমি গত ১৫দিন আগেও কিনেছি প্রতি হালি ৫০ টাকায়।’
লেবু কিনতে আসা শহরের ভানুগাছ রোডের বাসিন্দা আব্দুস সালাম বলেন, ‘আমি লেবু কিনতে এসেছিলাম। কিন্তু দামের কারনে কিনতে পারিনি। শ্রীমঙ্গলে এ অঞ্চলের সবচেয়ে বেশি লেবু বাগান অবস্থিত। এ উপজেলার লেবু দিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের চাহিদা মেটানো হয়। অথচ আমাদের এলাকায় উৎপাদিত লেবু দামের কারনে আমাদেরই কেনা অসাধ্য।’
নতুন বাজার এলাকার লেবু বিক্রেতা প্রান্ত আচার্য বলেন, ‘রমজানের কয়েকদিন আগে যে লেবু আমরা পাইকারি আড়ৎ থেকে কিনতাম প্রতি পিস সাইজ ভেদে ২ টাকা থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত সেই লেবু এখন কিনতে হচ্ছে প্রতি পিস ২০ টাকা থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত। যার কারনে লেবুর বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এখন লেবু বিক্রি করে লাভ করতে হিমসিম খেতে হচ্ছে আমাদের।’
লেবুর আড়তদার আব্দুল মালেক বলেন, ‘শ্রীমঙ্গলের পাইকারি বাজারে যে পরিমাণ লেবু আসে সে পরিমাণ লেবু দিয়ে স্থানীয় চাহিদা মেটানোই অসম্ভব। তার ওপর স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত লেবু ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকারি ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে যান। ফলে স্থানীয় বাজারে চাহিদার তুলনায় যোগান কম থাকায় দাম বাড়ছে। আজকে (সোমবার) পাইকারি আড়তগুলোতে গড়ে বড় সাইজের প্রতি পিস লেবু ৪০ টাকা, মাঝারি সাইজের প্রতি পিস লেবু ২৫ টাকা এবং ছোট সাইজের প্রতি পিস লেবু ১৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।’
উপজেলার খেজুরীছড়া সীমান্ত এলাকার লেবু বাগানের মালিক ফয়জুল মিয়া বলেন, ‘আমার বাগানে আগাম কিছু লেবু এলেও তা উত্তোলন না করে রমজান মাসের জন্য ৩০ হাজার লেবু রেখেছিলাম। ভাবছিলাম রমজানের আগে বৃষ্টি হলে এ লেবুগুলো পরিপক্ক ও রসালো হবে এবং বাজারে বিক্রি করতে পারব। কিন্তু প্রয়োজনীয় বৃষ্টি না হওয়ায় এবং আমার বাগানে পর্যাপ্ত সেচ সুবিধা না থাকায় প্রায় ১৮ হাজার লেবু পেকে ঝরে পড়েছে। ফলে বাকি ১২ হাজার লেবু বাজারে বিক্রি করেছি। দামও পেয়েছি ভালো। আমার মতো অবস্থা প্রতিটি বাগান মালিকের। রমজানের আগে প্রতি গাড়ি লেবু (গাড়িতে ৩০০ লেবু) মাত্র ৫০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে। এ দামে লেবু বিক্রি করে উৎপাদন খরচ, শ্রমিক খরচ উত্তোলন করা সম্ভব হয় না। অনেক সময় গাড়ি ভাড়া ভর্তুকি দিতে হয়।’
শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘শ্রীমঙ্গল উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় এ বছর ১২০০ হেক্টর জমিতে লেবুর আবাদ হয়েছে। এছাড়া পার্শ্ববর্তী হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার রশিদপুর এলাকায় উৎপাদিত লেবুও পাইকারি বিক্রির জন্য শ্রীমঙ্গলের আড়তগুলোতে নিয়ে আসা হয়। এরপরও রমজান মাসে শরবতের জন্য লেবুর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয়ভাবে চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। লেবুর অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির এটি একটি কারন।’