গাজীপুর প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৩ মার্চ ২০২৫ ১৬:৪৬ পিএম
আপডেট : ০৩ মার্চ ২০২৫ ১৬:৫৬ পিএম
শ্রমিকরা কারখানার সামনে বিক্ষোভ করছেন। প্রবা ফটো
গাজীপুর মহানগরীর জরুন এলাকায় কেয়া গ্রুপের নীট কম্পোজিট ডিভিশন এমপি সোয়েটারস লিমিটেড কারখানা বন্ধ ঘোষণার দুমাস আগেই ২ হাজার ২০৩ জন শ্রমিক ছাঁটাই করা হয়েছে।
এরই প্রতিবাদে সোমবার (৩ মার্চ) সকালে শ্রমিকরা কারখানার সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন।
গত ২ জানুয়ারি কেয়া গ্রুপের মালিকপক্ষ এক নোটিসের মাধ্যমে চারটি কারখানা আগামী ১ মে থেকে স্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণা করে। বন্ধের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, বাজার অস্থিতিশীলতা, ব্যাংকের সঙ্গে হিসাবের অমিল, কাঁচামাল অপর্যাপ্ততা ও কারখানার উৎপাদন কার্যক্রমের অপ্রতুলতার জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এসব কারখানায় পাঁচ থেকে ছয় হাজার শ্রমিক রয়েছেন। বন্ধের নোটিসে শ্রম আইন অনুযায়ী শ্রমিকদের সব পাওনা আগামী মে মাসে পরিশোধ করার কথা বলা হয়েছে।
এই অবস্থায় আজ সকালে কারখানার চেয়ারম্যান স্বাক্ষরিত একটি নোটিস দিয়ে ২ হাজার ২০৩ জন শ্রমিক ছাঁটাই করা হয়।
নোটিশে বলা হয়, এতদ্দ্বরা কেয়া কসমেটিকস্ লিমিটেড (নিট কম্পোজিট ডিভিশন), এমপি সোয়েটারস লিমিটেড, জরুন, কোনাবাড়ী, গাজীপুরের সব শ্রমিক ও কর্মচারীকে অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে ১২০ দিনের নোটিশ প্রদান করে আগামী ১ মে ২০২৫ তারিখ থেকে কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত ব্যাংকিং জটিলতা নিরসন না হওয়ায় নিম্নে উল্লেখিত শ্রমিক ও কর্মচারীগণকে পূর্বঘোষিত (৩১ ডিসেম্বর ২০২৪) তারিখের নোটিসের পরিপ্রেক্ষিতে দুমাস আগে ১ মার্চ ২০২৫ তারিখ থেকে স্থায়ীভাবে অব্যাহতি দেওয়া হলো।
নোটিসে আরও বলা হয়, অব্যাহতি পাওয়া শ্রমিক ও কর্মচারীদের শ্রম আইন অনুযায়ী সব পাওনা পরবর্তী ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে দেওয়া হবে। জটিলতার সমাধান হলে অব্যাহতি পাওয়া শ্রমিক ও কর্মচারীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও অন্তঃসত্ত্বা নারীরা এই নোটিসের বাইরে থাকবেন।
শ্রমিকেরা আজ সকালে কাজে যোগ দিতে এসে ছাঁটাইয়ের নোটিস দেখতে পান। পরে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে শ্রমিকেরা কারখানার সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে তাঁরা কেয়া কসমেটিকস্ কারখানার প্রধান ফটকে গিয়েও বিক্ষোভ করেন। খবর পেয়ে গাজীপুর শিল্প পুলিশ ও কোনাবাড়ী থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে শ্রমিকদের শান্ত করার চেষ্টা করে।
শ্রমিকরা জানান, ঈদের আগে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের কারণে শ্রমিকরা কারখানার সামনে বিক্ষোভ শুরু করে্। এ সময়ে শ্রমিকরা কেয়ার কসমেটিকস কারখানার প্রাধান ফটকে গিয়েও বিক্ষোভ কারতে থাকেন। খবর পেয়ে গাজীপুর শিল্প পুলিশ ও কোনাবাড়ী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করে। তবে শ্রমিকরা তাদের চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন। খবর পেয়ে কোনাবাড়ী থানা পুলিশ, শিল্প পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
কেয়া গ্রুপের মানবসম্পদ বিভাগের ব্যবস্থাপক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘কারখানা বন্ধ করে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আপনারা জানেন, এখানে প্রায় এক হাজার বধির শ্রমিক রয়েছে। তারা মন্ত্রণালয়ে গিয়েছিল, তারা কর্মসংস্থান চায়। পরে তাদের কথা চিন্তা করে বধির ও অসহায়দের দিয়ে কারখানা চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একটি নোটিস দিয়েছি, যেহেতু বেতন দিতে পারছি না এজন্য ছাঁটাই করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যথাসময়ে ছাঁটাই কর্মীদের পাওনা সব পরিশোধ করা হবে। আইনে ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে পরিশোধ করার কথা থাকলেও আমরা আগামী ২৪ মার্চ পাওনা পরিশোধ করব। আপনারা জানেন, মালিক এখন জেলে। তার মেয়ে তবুও বলছে সময়মত সব পরিশোধ করা হবে। এখন কারখানার সব শ্রমিকদের দাবি, কারখানা চললে সবাই কাজ করবে, না করলে কেউ না। এখন ম্যানেজমেন্ট কি করবে বলেন? তারা এই মুহুর্তে তাদের বেতন চায়, এটা কিভাবে সম্ভব?’
কোনাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বলেন, ‘শ্রমিকদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’