ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা
প্রকাশ : ০৩ মার্চ ২০২৫ ১৫:৪৫ পিএম
আপডেট : ০৩ মার্চ ২০২৫ ১৫:৫৫ পিএম
সময় বদলায়, বদলায় মানুষের জীবনধারা। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবর্তন করে নিজেকে। কিন্তু বদলায়নি টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের ঠান্ডু চন্দ্র শীল। ৫০ বছর ধরে একই টুল-পিঁড়িতে বসে চুল কাটার কাজ করে আসছেন তিনি। তার জীবনজুড়ে রয়েছে কাজের প্রতি এক অনবদ্য ভালোবাসা, যা তাকে তার পেশায় অটুট রেখেছে।
একটা সময় গ্রামীণ হাট-বাজারে টুল-পিঁড়ি পেতে চুল-দাড়ি কাটানোর দৃশ্য ছিল অতি পরিচিত। সারি সারি করে বসতেন ভ্রাম্যমাণ নরসুন্দররা। সেই দৃশ্য এখন যেন হারাতে বসেছে।
ভূঞাপুর উপজেলার বামুনহারার হাটের এক কোণে খোলা আকাশের নিচে রয়েছে ছোট্ট একটি সেলুন। এখানে চকচকে আয়না বা আধুনিক চেয়ারের কোনো দেখা নেই। তবে রয়েছে এক জোড়া দক্ষ হাত এবং কাঁচির কট কট শব্দ। বছরের পর বছর ধরে শৈল্পিকভাবে চুল কেটেছেন ঠান্ডু চন্দ্র শীল।
জানা গেছে, মাত্র ১০ বছর বয়সে বাবা তাকে এই পেশায় যুক্ত করেন। সেই সময় চুল কাটার মূল্য ছিল মাত্র ৫০ পয়সা। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সেই মূল্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ টাকা। দীর্ঘ ৫০ বছরের সময়ে বদলায়নি তার কাজের প্রতি ভালোবাসা। ঠান্ডু চন্দ্র শীলের নিজের পরিবার চালাচ্ছেন এই আয়ের মাধ্যমে। দীর্ঘদিনের এই কাজ দিয়ে তিনি দুই ছেলে-মেয়েকে উচ্চশিক্ষা দিয়েছেন। চুল কেটে এখন প্রতিদিন তার আয় হয় ৪০০-৫০০ টাকা।
চুল কাটার পাশাপাশি তিনি দীর্ঘ দিন ধরে সবার কাছে এক বিশ্বাসযোগ্য নাম হয়ে উঠেছেন। দূর-দূরান্ত থেকে তার কাছে চুল কাটাতে আসেন বিভিন্ন বয়সের মানুষ।
চুল কাটতে আসা গাবসারা গ্রামের রহিম মিয়া জানান, অন্য কোথাও গেলে হয়তো আধুনিকতা পাব, কিন্তু এখানে শান্তি ও আরাম পাওয়া যায়। তার কাজের প্রতি ভালোবাসা ও নিষ্ঠা আছে।
স্থানীয় বাসিন্দা রশিদ শেখ ও মাহাতাব মিয়া বলেন, ঠান্ডু শুধু একজন দক্ষ হেয়ারস্টাইলিস্টই নন, তিনি আমাদের এলাকার একজন গর্ব। তার হাতের জাদুতে চুল কাটানো যেন এক বিশেষ অভিজ্ঞতা।
ঠান্ডু চন্দ্র শীল বলেন, আমার কাজই আমার জীবনের মূল অনুপ্রেরণা। এই পেশা দিয়ে আমি আমার পরিবারকে ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছি। চুল কাটা শুধু একটি কাজ নয়, এটি আমার জন্য একটি শিল্প। আর এই শিল্পের প্রতি ভালোবাসাই আমাকে এগিয়ে নিয়ে এসেছে।
নতুন প্রযুক্তির যুগে আধুনিক সেলুনের ভিড়ে, ঠান্ডু চন্দ্র শীলের মতো মানুষরা তাদের নিষ্ঠা, দক্ষতা এবং ভালোবাসার জন্য আজও টিকে আছেন। তার জীবনযাত্রা প্রমাণ করে, কাজের প্রতি সৎ এবং নিষ্ঠাবান থাকলে কোনো বাধাই থামিয়ে রাখতে পারে না।