মো. শাখাওয়াত হোসেন সোহান, রাজবাড়ী
প্রকাশ : ০৩ মার্চ ২০২৫ ১৩:২৩ পিএম
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ার ৫ নম্বর ফেরিঘাটের শাকিল সোহান মৎস্য আড়ত থেকে এক কর্মী বিক্রি করা মহাবিপন্ন বাঘাইড় মাছ মাথায় করে নিয়ে যাচ্ছেন ক্রেতার কাছে পৌছে দিতে। সম্প্রতি তোলা। প্রবা ফটো
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের অদূরে পদ্মা ও যমুনা নদীর মোহনা। সেখানে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জেলেরা অবাধে শিকার করেছে মহাবিপন্ন প্রজাতির বাঘাইড় মাছ। প্রকাশ্যেই চলছে কেনাবেচা ও পরিবহন। তবে এ মাছ ধরা ও বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞার কথা জানেন না ব্যবসায়ী ও জেলেরা।
সম্প্রতি সরেজমিন পদ্মা নদীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অবাধে জেলেদের মাছ শিকার চলছে। এ সময় প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় বেশ কয়েকজন জেলের। পদ্মা-যমুনার মোহনায় মাছ শিকার করা অবস্থায় মানিকগঞ্জের বাসিদা ও জেলে মকিম হোসেন বলেন, ‘বাঘাইড় মাছ বেচাকেনা নিষিদ্ধ, এটি আমরা জানি না বা কেউ আমাদের কখনও বলে নাই। কারও কাছে কখনও শুনি নাই এ মাছ ধরা বা বিক্রি করা যাবে না। যদি আমরা জানতাম তাহলে এ মাছ ধরতাম না। প্রশাসনের কেউ জানায় নাই। ধরলেও কেউ তাতে না করে না। প্রশাসনের কেউ না করলে আমরা বুঝতে পারতাম এটি নিষেধ।’
জেলে মমিন খাঁ বলেন, ‘নদী থেকে মাছ মেরে আমরা আড়তে নেই। তখন আড়তদার মাছের দাম নির্ধারণ করে দেন। ছোট মাছের কম দাম, বড় মাছের বেশি দাম।’ অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ধরেন আমি একটা বড় মাছ আড়তে ৩০ হাজার টাকা বিক্রি করলাম। সেই মাছ ব্যবসায়ীরা কেজিপ্রতি ৫০ টাকা বা ১০০ টাকা লাভে বিক্রি করেন।’
দৌলতদিয়া মৎস্য হাটের সভাপতি মো. মোহন মণ্ডল বলেন, ‘বাগাড় মাছ যে ধরা বা বেচাকেনা করা যাবে নাÑ এ কথা আমাদের কেউ বলে নাই। বাগাড় মাছ সারা দেশেই বেচাকেনা হয়। আমি একা দৌলতদিয়ায় না বিক্রি করলে কিছু আসে যায় না।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, অবাধে পদ্মা ও যমুনা নদী থেকে জেলেরা বাঘাইড় মাছ ধরছে। পরে প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে। বাগাড় ধরা নিষেধ বা বেচাকেনা নিষেধÑ এই বার্তাটা সংশ্লিষ্টরা জেলেদের কাছে পৌঁছাতে পারছে না। এ কারণে অবাধে এ মাছ জেলেরা শিকার করছে। এভাবে চললে এক সময় এ মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাবে।’
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোস্তফা আল রাজীব বলেন, ‘বাঘাইড় মাছ হচ্ছে মহাবিপন্ন প্রাণী। এটি বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন ২০১২-এর তপছিলভুক্ত প্রাণীÑ যা শিকার, বেচাকেনা ও পরিবহন নিষিদ্ধ। অর্থাৎ এটি মৎস্য সুরক্ষা আইনের মধ্যে পড়ে না। এ কারণে বাগাড় মাছ ধরা বা বিক্রি করা হলেও আমাদের কিছু করার নেই।
রাজবাড়ীর সহকারী বন সংরক্ষক কর্মকর্তা সানজিদা সুলতানা বলেন, ‘বাঘাইড় মাছ বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২-এর ২নং তপছিলভুক্ত একটি সংরক্ষিত বন্যপ্রাণী। ধারা ৬-এ বলা হয়েছে এ ধরনের কোনো প্রাণী শিকার শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং ৩৯ ধারায় বলা হয়েছে, এ ধরনের প্রাণী যদি শিকার করা হয়, তাহলে সর্বোচ্চ এক বছরর কারাদণ্ড অথবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডই হতে পারে। একই কাজ যদি কেউ আবারও করে সেক্ষেত্রে শাস্তির পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে যাবে।’ তিনি বলেন, মাছ শিকার ও বেচাকেনার খবর পেলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।