‘নারী কেলেঙ্কারি’
শেরপুর প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০২ মার্চ ২০২৫ ২১:৩৮ পিএম
আপডেট : ০২ মার্চ ২০২৫ ২১:৫২ পিএম
নকলা উপজেলা পরিষদ প্রশাসকের কম্পিউটার অপারেটর (সিএ) আইনুন নাঈম পানেল। ফাইল ফটো
শেরপুরের নকলা উপজেলা পরিষদ প্রশাসকের কম্পিউটার অপারেটর (সিএ) আইনুন নাঈম পানেলের বিরুদ্ধে ‘নারী কেলেঙ্কারির’ অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় উপজেলা প্রশাসন অভিযুক্ত পানেলকে শোকজ করেছে। তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন পানেল। তাকে ফাঁসানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
গত ২০ ফেব্রুয়ারির এই ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।
২১ ফেব্রুয়ারি রাতে উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে এই বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। সম্মেলনে ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন নকলা উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি রাইয়ান আল মাহাদী অনন্ত।
তিনি বলেন, ‘গত ২০ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১১টার দিকে স্থানীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের প্রস্তুতিকালে একজন আমাদের ফোন করে জানায়- উপজেলা পরিষদ ভবনে দুজন লোক অবস্থান করছেন। সেখানে গিয়ে দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে বাতি জ্বলতে দেখে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ফোন করে জানতে চাই- রাতে অফিসে কোনো কর্মকর্তা থাকেন কি না বা কেউ অফিশিয়াল কাজ করছেন কি না। তিনি জানান, অফিসে কেউ থাকেন না এবং এত রাতে অফিসে কোনো কর্মকর্তার কাজ করার কথা নয়।’
রাইয়ান আল মাহাদী অনন্ত বলেন, ‘সন্দেহ হলে আমরা কয়েকজন মিলে ভবনের প্রধান ফটকের কাছে গিয়ে মাস্ক পরা এক নারীকে দেখতে পাই। ভেতরে ঢুকে খোঁজাখুঁজি করে কাউকে না পেয়ে আমাদের কয়েকজনকে সেখানে রেখে অন্যরা শহীদ মিনারে ফুল দিতে চলে যাই। এ সময় পরিষদ এলাকায় উপজেলা পরিষদের প্রশাসকের সিএ পানেলের স্ত্রীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি। রাত ১২টা ৪৫ মিনিটের দিকে উপজেলা পরিষদ এলাকায় এসে পানেলের স্ত্রীকে সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সন্দেহ আরও বেড়ে যায়। এর মধ্যে উপজেলা পরিষদ ভবনের দ্বিতীয় তলার এপাশ থেকে ওপাশের বাথরুমের দিকে একজনকে দৌড়ে যেতে দেখি। পরে প্রধান ফটকের কাছে এসে দেখি, একজন বাউন্ডারি ওয়াল টপকে উপজেলা কৃষি অফিসারের কার্যালয়ের পেছন দিয়ে দৌড়ে পালাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দৌড়ে তাকে ধরে ফেলি। দেখি তিনি উপজেলা প্রশাসকের সিএ আইনুন নাঈম পানেল। তবে ততক্ষণে ভেতরে থাকা মেয়েটি পালিয়ে যায়। জিজ্ঞাসাবাদে পানেল কোনো সদুত্তর দিতে না পারায় আমরা তাকে পরিষদ ভবনে নিয়ে আসি। তখন নকলা পৌর ছাত্রদলের সদস্যসচিব আসাদুজ্জামান, যুগ্ম আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রাজুসহ চার-পাঁচজন এসে আমাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করে পানেলকে ছিনিয়ে নিয়ে চলে যান।’
এ ঘটনার পর ২২ ফেব্রুয়ারি পানেলকে শোকজ বা কারণ দর্শানোর নোটিস দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। নোটিসে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া নির্ধারিত সময়ের পরও অফিসে অবস্থান করা অসদাচরণের শামিল উল্লেখ করে তিন কার্যদিবসের মধ্যে এর জবাব চাওয়া হয়। ২৫ ফেব্রুয়ারি পানেল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে জবাব দাখিল করেন।
অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা প্রশাসকের সিএ আইনুন নাঈম পানেল বলেন, ‘পৌরসভার এক ড্রাইভার মাসুদ প্রতিহিংসার কারণে আমাকে ফাঁসাতে এ কাজ করেছেন। যেদিন ঘটনাটি ঘটে, সেদিন আমি অফিসে একবার ঢুকে বের হয়ে গেছি। আমার রুমে একজন নাইটগার্ড ছিল, সে জন্য বাতি জ্বালানো দেখে ছাত্ররা ভেবেছে যে আমি রুমে। আর যে নারীর কথা বলা হচ্ছে, আমি তাকে কোনোদিন দেখিনি। আর আমার কোনো ভিডিও ফুটেজও নেই। মাসুদের কাছ থেকে পৌরসভার মেয়রের গাড়ির চাবি নিয়ে নেওয়ার পর থেকে সে আমার ক্ষতি করার চেষ্টা করছে। আমি ইউএনওর নির্দেশে চাবি নিয়েছি।’
অভিযোগের বিষয়ে নকলা পৌরসভার গাড়িচালক মো. মাসুদ বলেন, ‘তার সঙ্গে আমার কোনো শত্রুতা নেই। এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তিনি তার চাকরি করেন, আমি আমার চাকরি করি।’
পানেলকে ছিনিয়ে নেওয়ার বিষয়ে পৌর ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রাজু বলেন, ‘ঘটনার অনেক পরে আমি সেখানে গিয়েছি। সেখানে আমি বা আমরা কাউকে ছিনিয়ে আনিনি বা ধস্তাধস্তিও হয়নি। কেউ যদি আমাদের ওপর এমন অভিযোগ এনে থাকে, তাহলে সেটা মিথ্যা।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা পরিষদের প্রশাসক দীপ জন মিত্র বলেন, ‘ঘটনাটি শুনেছি। এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। যেহেতু আমার পরিষদে ঘটনা ঘটেছে, সে জন্য বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। একই সঙ্গে পানেলকে শোকজ করা হয়েছে। সে শোকজের জবাবও দিয়েছে। সেটি যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এ ঘটনায় চাকরিবিধি অনুযায়ী অফিশিয়াল প্রসিডিউর চলমান।’