× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ফেলনা কাগজে দিনবদল

সাইফুল ইসলাম, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)

প্রকাশ : ০২ মার্চ ২০২৫ ১৬:০০ পিএম

আপডেট : ০২ মার্চ ২০২৫ ১৬:০৩ পিএম

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ি এলাকায় ফেলে দেওয়া কাগজ থেকে প্রস্তুত করা বোর্ড রোদে শুকাচ্ছেন শ্রমিকরা। প্রবা ফটো

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ি এলাকায় ফেলে দেওয়া কাগজ থেকে প্রস্তুত করা বোর্ড রোদে শুকাচ্ছেন শ্রমিকরা। প্রবা ফটো

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ফেলে দেওয়া পরিত্যক্ত কাগজ পুনরায় ব্যবহার করে তৈরি করা হচ্ছে কাগজের নতুন বোর্ড। এই বোর্ড দিয়ে বই-খাতার মলাট, বাইন্ডিং সামগ্রী, মিষ্টিসহ বিভিন্ন ধরনের প্যাকেট, জুতার বাক্স, বিভিন্ন পণ্যের মোড়ক তৈরি হচ্ছে। উপজেলার শীতলক্ষ্যা নদীর তীরবর্তী মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ি এলাকা, পাবই, ব্রাহ্মণগাও ও টেংড়ারটেকে ৬টি কারখানায় তৈরি এসব বোর্ড ঢাকা, নরসিংদী গাজীপুরসহ আশপাশের এলাকায় সরবরাহ হচ্ছে। এমন উদ্যোগের ফলে স্থানীয়রাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের নারী-পুরুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হওয়ায় তাদের দিনবদল ঘটছে।

বাসাবাড়ি, রেস্টুরেন্ট বা বিভিন্ন স্থান থেকে বিভিন্ন জায়গায় রাস্তার পাশে বা ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া নানা ধরনের কাগজজাতীয় মালামাল কুড়িয়ে এনে তা বোর্ড মিলে দেওয়া হয়। এরপর সেই কাগজ পরিষ্কার করে তা কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এসব কারখানায়। এতে যেমন পরিবেশ রক্ষা হচ্ছে তেমনি সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। 

মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ির পার্শ্ববর্তী আমিনুল ইসলাম প্রিন্স বোর্ড মিলস লিমিটেডের পরিচালক জাকির হোসেন জানান, তিনি ২০ বছর ধরে এ ব্যবসা পরিচালনা করছেন। তার কারখানায় ১৫ থেকে ১৬ জন শ্রমিক কাজ করেন। 

এ ছাড়া উপজেলা সদরে আব্দুস সালামের মালিকানাধীন শীতলক্ষ্যা বোর্ড মিল, পাবই এলাকার মনির হোসেনের মালিকানাধীন ভুঁইয়া ভোট মিল, মাস্টার বোর্ড মিল, ব্রাহ্মণগাও আব্দুর রাজ্জাকের মালিকানাধীন সুমাইয়া বোর্ড মিল, টেংড়ারটেক এলাকার এশিয়ান বোর্ড মিল হয়েছে। এসব কারখানায় ১৫ থেকে ২০ জন কোনো কোনো কারখানায় ৪০ থেকে ৫০ জন শ্রমিক কাজ করেন। বরিশাল, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন জেলার ও স্থানীয়রা কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। 

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা একটি শিল্প ও ব্যবসায়ী এলাকা হিসেবে পরিচিত। এখানে ছোট বড় সব মিলিয়ে প্রায় দুই হাজার শিল্প-কলকারখানা রয়েছে। রয়েছে পাইকারি কাপড়ের মার্কেটসহ বেশ কয়েকটি হাটবাজার। রয়েছে শতাধিক রেস্টুরেন্ট। এ উপজেলায় কয়েক লাখ মানুষের বাস। কাগজজাতীয় নানা ধরনের পণ্যসামগ্রী বিভিন্ন ডাস্টবিন এবং রাস্তার পাশে ফেলা হয়। এসব ফেলে রাখা কাগজজাতীয় মালামাল কুড়িয়েই বোর্ড মিলগুলোয় সরবরাহ হচ্ছে। 

আমিনুল ইসলাম প্রিন্স বোর্ড মিলস লিমিটেডের দায়িত্বরত জুয়েল আহমেদ বলেন, ঢাকাসহ আশপাশের জেলা উপজেলার পরিবেশ রক্ষা ও কর্মসংস্থানের কথা বিবেচনা করে বিনিয়োগ করেছি। শুধু ব্যবসা নয়; গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতেই এই ঝুঁকিটা নিয়েছি। আমাদের কারখানা দেখার পাশাপাশি অনেকেই এ ধরনের কারখানা চালু করেছেন। এ কারখানার উৎপাদিত বোর্ড যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে। 

বোর্ড তৈরির শ্রমিক আলী হোসেন জানান, কাগজগুলো কম দামে কেনা হয়। কেনার পর সেটি বিশেষ হাউসে পানি দিয়ে ভিজে রাখা হয়। হাউসে পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখাটা এক ধরনের কৌশল থাকে। শুরুর দিকে হাউসে পানি দিয়ে কাগজগুলো পা দিয়ে খুঁচিয়ে নরম করা বা মণ্ড তৈরি করা হতো। এখন এ কাজটি মেশিন দিয়ে করা হয়। এরপর সেই মণ্ডের পানি মেশিনের মাধ্যমে ট্যাংকে নেওয়ার পর বিশেষ পদ্ধতির মাধ্যমে মেশিনে দেওয়া হয়। তখন কাগজের স্তর একটি বিশেষ স্থানে জমা হলে সেটি তুলে রোদে শুকিয়ে নিতে হয়। তারপর চাহিদামতো কাটিং এবং সরবরাহ করা হয়।

শীতলক্ষ্যা বোর্ড মিল মালিক আব্দুস সালাম বলেন, এখানে ১৫-১৬ জন শ্রমিক মাসিক বেতনে কাজ করেন। এখানকার স্থানীয় লোকজনও রয়েছে। এই কারখানার কারণে স্থানীয়দের স্থায়ী কর্মসংস্থান হয়েছে। এখানে প্রতিদিন গড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ কেজি বোর্ড উৎপাদন করা হয়। প্রতি কেজি ১৮ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়। 

মাস্টার বোর্ড মিল-এর মালিক সিরাজ মিয়া বলেন, পুঁজির অভাবে মিলটি প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। কিন্তু কার্টন বোর্ডের চাহিদা ও এলাকার শ্রমজীবী মানুষের কর্মসংস্থানের কথা বিবেচনা করে পুনরায় চালু করা হয়। তবে, ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে উৎপাদন প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়ে কাঁচামাল নষ্ট হচ্ছে। 

ভূঁইয়া বোর্ড মিল মালিক মনির হোসেন বলেন, অন্যান্য দেশে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য সরকারি প্রণোদনা থাকে কিন্তু আমাদের দেশে নেই। বিভিন্ন জায়গায় এসব নোংরা ফেলনা কাগজজাতীয় মালামাল কুড়িয়ে এনে আমরা তা ব্যবহার উপযোগী করে সরবরাহ করছি। সরকারিভাবে এসব প্রতিষ্ঠান তেমন কোনো সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয় না। সরকারিভাবে সহজ শর্তে এসব কারখানাকে সুযোগ-সুবিধা দিলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আরও কারখানা গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করবে ব্যবসায়ীরা। 

বোর্ড মিল শ্রমিক আহম্মদ আলী বলেন, ময়লা, অপরিষ্কার কাগজ ও দুর্গন্ধযুক্ত কাগজ পরিষ্কার করে তা নতুন কাগজে রূপান্তর করতে আমাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। ওই পরিশ্রমের তুলনায় আমরা তেমন পারিশ্রমিক পাই না। 

এ বিষয়ে বাংলাদেশ কলামিস্ট ফোরামের মহাসচিব লায়ন মীর আব্দুল আলিম বলেন, অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশে জনসংখ্যা বেশি। সে হিসেবে মানুষ কাগজজাতীয় পণ্যসামগ্রী সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করে থাকেন। ফেলে দেওয়া ময়লা আবর্জনা হাওয়া কাগজজাতীয় এসব জিনিস কুড়িয়ে নিয়ে যাওয়া না হলে পরিবেশ আরও হুমকির মুখে পড়ত। সেই হিসেবে যারা বোর্ড মিলগুলো পরিচালনা করছেন তারা আমাদের দেশের পরিবেশের জন্য কাজ করছেন। এজন্য এসব কারখানায় সরকারের নজরদারি ও সরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া দরকার। 

রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইফুল ইসলাম বলেন, ফেলনা কাগজ থেকে নতুন তৈরি কাগজের বোর্ড আমাদের দেশের মানুষের চাহিদা মেটাচ্ছে। উপজেলায় ছয়টি বোর্ড মিল রয়েছে। এসব মিলের বোর্ড মিষ্টির কার্টন, ওষুধের প্যাকেট, শপিং ব্যাগ, বইয়ের মলাটসহ নানা কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। বোর্ড মিলগুলোর দিকে আমাদের উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নজর রয়েছে। এ কারখানাগুলো আরও বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে কারখানার মালিকদের সঙ্গে কথা বলে আমরা কাজ করব। এতে করে মানুষের কর্মসংস্থান বাড়বে। পরিবেশও রক্ষা হবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা