জহুরুল ইসলাম জহির, গৌরনদী (বরিশাল)
প্রকাশ : ০২ মার্চ ২০২৫ ১২:০৮ পিএম
বরিশালের গৌরনদী উপজেলার রামসিদ্ধি-ধানডোবা সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে যান চলাচল। এতে দুর্ভোগে পড়েছে এলাকাবাসী। সম্প্রতি বাথী ইউনিয়নের ধানডোবা গ্রামের হাওলাদার বাড়ি মোড় এলাকায়। প্রবা ফটো
বরিশালের গৌরনদী উপজেলার রামসিদ্ধি-ধানডোবা সড়কটি জনগুরুত্বপূর্ণ। ২২ বছর আগে এটি পাকা করা হয়। তারপর থেকে আর সংস্কার করা হয়নি। ফলে সড়কের আড়াই কিলোমিটরজুড়ে খানাখন্দ। দুটি স্থানে প্রায় দেড় হাজার ফুট ভেঙে অনেকটাই পুকুরের সঙ্গে মিশে গেছে। সড়কের বেহালদশার কারণে দুই দশক ধরে বন্ধ যান চলাচল। ফলে গৌরনদী ও আগৈলঝাড়ার ৭ গ্রামের মানুষের দুর্ভোগ নিত্যসঙ্গী। তারা সড়কের দ্রুত সংস্কারের দাবি করেছেন।
সম্প্রতি সরেজমিন গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় এক কোটি টাকায় ২০০২-এর ডিসেম্বরে সড়কটি পাকা করা হয়। সড়কের ধানডোবা ত্রিমুখী থেকে পূর্বদিকে প্রায় ১ কিলোমিটর পিচ উঠে ভয়ানক গর্ত হয়েছে। ধানডোবা মসজিদের সামনের সড়ক বোঝার উপায় নেই এটি পাকা ছিল। ধানডোবা সরোয়ার সিকদারের বাড়ির উত্তর পাশে প্রায় ৩শ ফুট ও মন্টু মেম্বারের বাড়ির সামনে প্রায় ৫শ ফুট ভেঙে বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। প্রায় পুরোটাই পুকুরের অংশ হয়ে গেছে। এ ছাড়া ধুরিয়াইল গ্রামের সাত্তার সিকদারের বসতঘরের পশ্চিম দিকে প্রায় ৫শ ফুট পিচ খোয়া পাথর উঠে কাঁচা সড়কে রূপ নিয়েছে। বর্তমানে এতে চলে শুধু রিকশা ও ভ্যানগাড়ি। এ দুটি যান ও চালকেরও প্রচণ্ড ধকল পোহাতে হয়। বৃষ্টিতে সড়কে এত কাদা হয় যে হেঁটেও চলা কষ্টকর হয়ে পড়ে। সড়কের দুপাশে পুকুর থাকায় পথচারীদের সতর্ক হয়ে চলতে হয়।
স্থানীয়রা বলেন, রামসিদ্ধি-ধানডোবা সড়কটি দিয়ে গৌরনদীর রামসিদ্ধি, বাঙ্গিলা, ধরিয়াইল, ধানডোবা ও আগৈলঝাড়া উপজেলার বাশাইল, চেঙ্গটিয়া, রাজিহার গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ চলাচল করে থাকে। এ ছাড়া বাশাইল বাজারের ব্যবসায়ীরা তাদের মালামাল পরিবহন করেন। সড়কটি ব্যবহার করে ধুরিয়াইল ও বাঙ্গিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাঙ্গিলা নুরানী মাদ্রাসা, ধানডোবা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শত শত শিক্ষার্থী যাতায়াত করে। সড়কে ছোট-মাঝারি যান চলাচল বন্ধ হওয়ায় তাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ধরিয়াইল গ্রামের মজিবর রহমান ও সরোয়ার সিকদার বলেন, সড়কটি নির্মাণের পর আজ পর্যন্ত কোনো সংস্কার করা হয়নি। ফলে সড়কটির বিভিন্ন স্থানে পিচ-পাথর উঠে গেছে। সংস্কারে অভাবে সড়কের রাস্তা ভেঙে পুকুরে বিলীন হয়ে গেছে। সড়কটি নির্মাণের পরে সংস্কারের অভাবে বেহালদশায় পড়েছে। ধানডোবা গ্রামের দেলেয়ার হোসেন ও আলাউদ্দিন সরদার বলেন, এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার মানুষ দৈনন্দিন, ব্যবসায়িক ও প্রশাসনিক কাজে উপজেলা সদরে যাতায়াত করে। দুই দশক ধরে সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হওয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
ব্যবসায়ী আবুল হোসেন ও আলমগীর হোসেন বলেন, এই সড়ক দিয়ে আমাদের ব্যবসায়িক মালামাল পরিবহনে অনেক কম খরচ হতো। সড়কটি চলাচল অযোগ্য হওয়ায় বিকল্প পথে মালামাল পরিবহনে খরচ অনেক বেড়ে গেছে। স্কুল শিক্ষক শামীম সরদার বলেন, সড়ক নষ্ট হওয়া শুরু হলে আমরা উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরকে সংস্কারের জন্য অনুরোধ করেছি কিন্তু তারা কোনো পদক্ষেপ নেননি। এলজিইডি কর্মকর্তাদের গাফিলতি ও অবহেলায় সড়কটি বেহাল দশায় পড়েছে। এখনই উদ্যোগ নিয়ে সড়কটি সংস্কার করা হলে মানুষের দুর্ভোগ লাঘব করা সম্ভব।
বাঙ্গিলা গ্রামের সালেহা বেগম, ময়না আক্তার ও মাহমুদা বেগম বলেন, সড়কটি চলাচল অনুপযোগী হওয়ায় ও যানবাহন চলাচল বন্ধ হওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নারীরা। প্রসূতি মায়েরা অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নিতে নিতে রোগীর অবস্থার অবনতি হয়। কয়েকজন অভিভাবক বলেন, সড়কটির মধ্যে একটি অংশে পিচ-পাথরসহ ইটের খোয়া উঠে গিয়ে কাঁচা সড়ক হয়ে গেছে। ওই স্থানে দুই পাশে দুটি পুকুর থাকায় প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষার্থীরা অত্যধিক ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে যায়। বর্ষার সময় পা পিছলে পুকুরে পড়ার আশঙ্কায় আমরা উদ্বিগ্ন থাকি। বার্থী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদার বলেন, উপজেলা পরিষদকে সড়কটি সংস্কারের দাবি জানিয়েছি। কিন্তু লাভ হচ্ছে না। উপজেলা প্রকৌশলী অহিদুর রহমান বলেন, সড়কটি দেখেছি। সংস্কারের জন্য প্রকল্প তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্প অনুমোদন হলে সংস্কারের কাজ শুরু হবে।