মনিরুজ্জামান বাবলু, চাঁদপুর
প্রকাশ : ০২ মার্চ ২০২৫ ১১:৪৯ এএম
চাঁদপুরের নদীতে অবৈধভাবে বাঁশের বেড়া ও জাগ ফাঁদ দিয়ে মাছ শিকার করছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। শুক্রবার মেঘনা নদীর বিষ্ণুপুর এলাকায়। প্রবা ফটো
চাঁদপুরের মেঘনা, ডাকাতিয়া, ধনাগোদা নদীতে অবৈধভাবে হাজারো বাঁশের বেড়া দিয়ে ও জাগ ফাঁদ ব্যবহার করে ধরা হচ্ছে মাছ। এতে একদিকে নৌযান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে, বাধাগ্রস্ত হচ্ছে পানিপ্রবাহ। অন্যদিকে দেশি মাছের উৎপাদন কমছে।
গত শুক্রবার সংশ্লিষ্ট এলাকা ঘুরে জানা গেছে, চাঁদপুরের মেঘনা, ধনাগোদা ও ডাকাতিয়া নদীর ১০টি স্থানে সহস্র্রাধিক বাঁশের বেড়া ও জাগ ফাঁদ দিয়ে অবৈধভাবে দেশি প্রজাতির মাছ শিকার করছে প্রভাবশালীরা। এতে নৌপথে মালবাহী ট্রলার, বাল্কহেড, যাত্রীবাহী ট্রলার ও ছোট লঞ্চ চলাচলে ব্যাহত হচ্ছে। মতলব-নারায়ণগঞ্জ-মুন্সীগঞ্জ নৌ-পথের ছোট লঞ্চগুলো চলাচল একেবারেই বন্ধ হয়ে গেলেও চাঁদপুর-নারায়ণগঞ্জ নৌপথে ১৫টি ছোট লঞ্চ চলাচলে রয়েছে ঝুঁকির মুখে।
মুকবুল হোসেন নামের এক লঞ্চ মাস্টার জানান, নারায়ণগঞ্জ থেকে রাতে ১৫টি লঞ্চ চলাচল করে। কিন্তু জাগ ফাঁদের কারণে কুয়াশার সময় খুবই অসুবিধা হয়। এতে লঞ্চের যন্ত্রাংশ বিশেষ করে পাখা ভেঙে যায়। তিনি বলেন, ‘যেভাবে আসার কথা, সেভাবে আসতে পারি না। অন্য পথে আসা লাগে। যেদিকে চর ওইদিক দিয়ে আসতে হয়। আমাদের খুবই অসুবিধা হয়।’
আরেক লঞ্চ মাস্টার রুহুল আমিন বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ টু চাঁদপুর রোডের লঞ্চগুলো যা চলাচল করে, এতে জাগের জন্য বহু জায়গায়, বহু গ্রামে বা বহু ঘাটে দুই পাশেই জাগ থাকে। নদীর দুই পাশেই জাগ থাকে। সেজন্য আমাদের চলতে গিয়ে অনেক দুর্ঘটনায় পড়তে হয়। এখন আপনাদের কাছে আশাবাদী যাতে জাহাজ, অন্যান্য ট্রলার বা নৌকা যাতে আমাদের এই ছোট নাব্যতা চ্যানেলে যেন ব্যাঘাত না ঘটায় এজন্য আমরা আশাবাদী।’
মেঘনা নদীর চাঁদপুর-মাওয়া নৌপথে ৫০, চাঁদপুর-আমিরাবাদ-ষাটনল নৌপথে ৫০, শোল্লা-মুলাদী-আলু বাজার, কোদালপুর হয়ে শোল্লা পর্যন্ত ১০০, চাঁদপুর-নন্দীবাজার নৌপথে ১০০, ধনোগোদা নদীর চাঁদপুর-মতলব-বেলতলী-কালিরবাজার নৌপথে ৪০০ ও ডাকাতিয়া নদীতে দেড় শতাধিকসহ সহস্রাধিক বাঁশের বেড়া ও জাগ ফাঁদ রয়েছে। প্রতিটি এলাকায় ১০ থেকে ১২ জনের একেকটি গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ২০ থেকে ২৫টি করে অবৈধ জাগ ফাঁদ রয়েছে।
বাঁশের বেড়া দেওয়া মাছ ব্যবসায়ী বিষ্ণপুর এলাকার লিটন বলেন, ‘আমগো নেতৃত্বে ২৫টা জাগ আছে। আমগো বাড়ি বিষ্ণুপুর। আমরা নদীতে কাজ করি। চিংড়ি মাছ পাই, রুই মাছ পাই, কাতল পাই, বোয়াল পাই। আমরা ১১ জন লোক।’
চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আবু কাউছার দিদার বলেন, ‘বাঁশের বেড়া ও জাগে কারণে নদীর স্রোতধারা, মাছের বিচরণ মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। এতে মাছের লার্ভা থেকে পরিণত হওয়া পর্যন্ত প্রত্যেকটি ধাপে বাধাগ্রস্ত হয়।’
সম্প্রতি চাঁদপুর-নারায়ণগঞ্জ নৌ-পথ সচল রাখতে নদীতে থাকা বাঁশের বেড়া ও জাগ অপসারণ করতে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ।
এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএ’র যুগ্ম পরিচালক মাহফুজ-উল-আলম সজল বলেন, ১৯৫০ সালের মৎস্য রক্ষা ও সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী নদীতে বেড়া বা বাঁধ দিয়ে মাছ শিকার দণ্ডনীয় অপরাধ। এ বিষয়ে স্থানীয় জনসাধারণের সচেতনতার পাশাপাশি জেলা প্রশাসন, নৌপুলিশ, কোস্ট গার্ডের সমন্বয়ে শিগগিরই উচ্ছেদসহ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।