ফুয়াদ মোহাম্মদ সবুজ, মহেশখালী (কক্সবাজার)
প্রকাশ : ০১ মার্চ ২০২৫ ১৫:০৮ পিএম
মেহেজাবিন সাহাবা
গত ২৭ ফেব্রুয়ারিও এক আত্মীয়ের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে আনন্দে মাতোয়ারা ছিল তিন বছরের মেহেজাবিন সাহাবা (লাল টুকি)। সেদিন রঙিন শাড়ি পরে উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেছিল সে। আত্মীয়স্বজনের কোলে ঘুরে, নেচে-গেয়ে কাটিয়েছিল আনন্দঘন সময়। কিন্তু সেই খুশির মুহূর্তের পরই নেমে আসে বিষাদের ছায়া।
সেই অনুষ্ঠানের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই জ্বর, বমি ও পাতলা পায়খানায় আক্রান্ত হয় সাহাবা। তার পরিবার প্রথমে বিষয়টিকে ততটা গুরুতর মনে না করলেও, তার অবস্থার অবনতি দেখে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। বদরখালী জেনারেল হাসপাতাল, চকরিয়া জমজম হাসপাতাল ঘুরে অবশেষে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলেও শেষ রক্ষা হয়নি। শুক্রবার রাত ১০টার দিকে সেখানেই মারা যায় ছোট্ট সাহাবা।
শনিবার (১ মার্চ) সকাল ১০টায় উত্তর নলবিলা সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে সাহাবার জানাজা সম্পন্ন হয়। তার মৃত্যুতে পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বিশুদ্ধ পানির সংকট ও অস্বাস্থ্যকর খাবারের কারণে শিশুদের মধ্যে স্ট্যান্ড ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, এটি দ্রুত পানিশূন্যতা সৃষ্টি করে, যা প্রাণঘাতী হতে পারে।
স্থানীয় সাংবাদিক রকিয়ত উল্লাহ জানান, তার বিয়েতে রঙিন শাড়ি পরে চঞ্চল শিশুটি ছিল সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। সেই মুহূর্তের ছবি নিজেই তুলেছিলেন রকিয়ত উল্লাহ। কিন্তু এই আনন্দ যে এত দ্রুত শোকে রূপ নেবে, তা ভাবতে পারেননি তিনিও। শিশুটির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে রকিয়ত উল্লাহ লিখেছেন— ‘গত দুই দিন আগে আমার বিয়েতে আমার ভাতিজা রশিদের মেয়ে লাল টুকি শাড়ি পরে আমার মেহেদী অনুষ্ঠানে এসেছিল। তাকে দেখেই আমি নিজেই মোবাইলে ছবিটি তুলেছি। আজ কিছুক্ষণ আগে (শুক্রবা রাতে) শুনলাম, সে কাশির সঙ্গে রক্ত বমি করেছে। কিছুক্ষণ পরেই খবর পেলাম, সে আর নেই। আল্লাহ এই নিষ্পাপ শিশুটিকে জান্নাতের সর্বোচ্চ মাকাম দান করুণ।’
সাহাবার প্রতিবেশীরা বলছেন, ‘এই তো দুই দিন আগেও সে হাসছিল, খেলছিল, নাচছিল। আজ কীভাবে সে আমাদের ছেড়ে চলে গেল?’
মহেশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, স্ট্যান্ড ডায়রিয়া শিশুদের জন্য অত্যন্ত প্রাণঘাতী হতে পারে, বিশেষত যদি দ্রুত চিকিৎসা না করা হয়। এটি অতি সংক্রামক ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ফলে হয় এবং শরীরে দ্রুত পানিশূন্যতা সৃষ্টি করে। বিশুদ্ধ পানি ও স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ না করলে এই রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে।