বগুড়া অফিস
প্রকাশ : ০১ মার্চ ২০২৫ ১৫:০৩ পিএম
প্রতীকী ছবি
বগুড়ার সাবগ্রামে গভীর রাতে ঘরে ঢুকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মা ও মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১২টার দিকে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়।
ঘটনার এক ঘন্টা পর রাত দেড়টার দিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রথমে ছকিনা বেগমের (৩৫) মৃত্যু হয়। পরে আজ (শনিবার) সকাল ১১টার দিকে তার মা আনোয়ারা বেগম (৫৮) মারা যান।
পুলিশ ও স্বজনরা ওই জোড়া খুনের জন্য নিহত ছকিনার দ্বিতীয় স্বামী রুবেল মিয়াকে দায়ী করেছে। তবে তাকে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
বগুড়ার নারুল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নাজমুল হক জানান, ছকিনার দ্বিতীয় স্বামী রুবেল মিয়া মাদকাসক্ত। ছকিনা প্রথম স্বামীর সঙ্গে পুনরায় বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ায় রুবেল মিয়া ক্ষিপ্ত হয়ে রামদা দিয়ে এলোপাথারি কুপিয়ে ওই হত্যাকাণ্ড ঘটায়।
নিহত ছকিনা বেগমের মামাতো ভাই রবিউল ইসলাম জানান, বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার হাসনাপাড়া এলাকার বাসিন্দা ছকিনা বেগমের সঙ্গে প্রায় ১০ বছর আগে বাদশা মিয়ার সঙ্গে বিয়ে হয়। নানা কারণে পরে তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়। এরপর একই গ্রামের রুবেল মিয়ার সঙ্গে ছকিনা বেগমের বিয়ে হয়। এরপর ছকিনা তার প্রথম স্বামীর সন্তান সাব্বিরসহ বগুড়া শহরে চলে আসে এবং আকাশতারা এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস শুরু করেন। তবে দ্বিতীয় স্বামী রুবেল মিয়া মাদকাসক্ত এবং চুরির সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় ছকিনা বেগম তাকে তালাক দেন। এরপর ছকিনা গ্রাম থেকে তার মা আনোয়ারা বেগমকে নিয়ে বসবাস শুরু করেন। পরবর্তীতে রুবেল মিয়া আবারও সংসার পাতার আগ্রহ প্রকাশ করলে ছকিনা রাজী হন এবং এক বছর আগে তাদের আবারও বিয়ে হয়। কিন্তু রুবেল তার স্বভাব পরিবর্তন না করায় ছয় মাস আগে তাদের মধ্যে দ্বিতীয়বার বিচ্ছেদ হয়। ততদিনে ছকিনা বেগম শহরের সাবগ্রাম এলাকায় দুই শতক জায়গা কিনে টিনশেডের বাড়ি করে মাকে নিয়ে বসবাস শুরু করেন। এক পর্যায়ে ছকিনা বেগম প্রায় এক মাস আগে তার প্রথম স্বামী বাদশা মিয়াকে আবারও বিয়ে করেন। তবে ছকিনাকে বিয়ে করলেও বাদশা মিয়া তার নিজ গ্রাম সারিয়াকান্দি উপজেলার হাসনাপাড়া গ্রামেই বসবাস করতেন। মাঝে মাঝে শহরে ছকিনার কাছে আসতেন। এদিকে প্রথম স্বামী বাদশা মিয়াকে বিয়ে করায় দ্বিতীয় স্বামী রুবেল মিয়া ছকিনার ওপর ক্ষুব্ধ হন।
ছকিনার ছেলে সাব্বির আহম্মেদ জানান, শুক্রবার রাত সাড়ে ১২ টার দিকে রুবেল বাড়িতে এসে তার মা ছকিনাকে ঘুম থেকে ডেকে তোলেন। তাকে তালাক দিয়ে বাদশা মিয়াকে বিয়ে করায় তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। এক পর্যায় সে সঙ্গে থাকা রামদা দিয়ে কোপানো শুরু করেন। এ সময় তার নানি আনোয়ারা বেগম উদ্ধার করতে গেলে রুবেল তাকেও কুপিয়ে পালিয়ে যান। পরে তাদেরকে রক্তাক্ত অবস্থায় বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই রাত দেড়টার দিকে তার মা ছকিনা মারা যান। আর শনিবার বেলা ১১ টার দিকে তার নামি আনোয়ারা বেগমও মারা যান।
নারুলী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নাজমুল হক বলেন, ঘটনা ঘটনার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে পরিদর্শন করে বাড়ির পার্শ্বের বাঁশঝাড় থেকে রক্ত মাখা রামদা উদ্ধার করে। পুলিশের একাধিক টীম রুবেলকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চালিয়েও পাওয়া যায়নি। নিহত মা-ময়ের মরদেহ হাসপাতাল মর্গে রয়েছে।