মহেশখালী (কক্সবাজার) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২৩:৩৭ পিএম
প্রবা ফটো
মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত লেখক ও চিন্তাবিদ অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান। তিনি বলেছেন, ‘যতটা ভালো কিছু আশা করা যায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হওয়ার পর মানুষের অবস্থা ততটা উন্নতির দিকে যাওয়ার বদলে অনেকটাই নেমে এসেছে।’
শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে মহেশখালীর কালারমারছড়া আঁধার ঘোনায় বদিউদ্দিন-মুজিব আনন্দধারা ফাউন্ডেশন আয়োজিত মেধাবৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে মূখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত থেকে তিনি এসব কথা বলেন।
মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের নাম ও তার পরিবেশগত ক্ষতির বিষয়েও তিনি সমালোচনা করেছেন। ‘আল্ট্রা সুপার’ শব্দটির ব্যাখ্যা দেওয়া নিয়ে তিনি প্রশ্ন তোলেন এবং বলেন, ‘এই নামটিতে মিথ্যাচার রয়েছে। প্রকল্পটির কয়লা পোড়ানোর পর যে পরিমাণ কার্বন নিঃসৃত হবে, তা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। আমাদের সরকারের যুক্তি হচ্ছে, যেহেতু ধোঁয়া ২৫০ ফুট উপরে গিয়ে ছেড়ে দেওয়া হবে, তাতে প্রকল্পের নাম আল্ট্রা সুপার রাখা হয়েছে। কিন্তু মানুষকে এভাবে বোকা বানানো অন্যায়।’
আধুনিক প্রযুক্তির বিকল্পের কথা তুলে ধরে অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘বিশ্বের অধিকাংশ দেশ কয়লা পোড়ানো বন্ধ করে দিয়েছে। অস্ট্রেলিয়া, জার্মানিসহ আরও অনেক দেশ কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে, কারণ এটি পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। পৃথিবীজুড়ে অনেক উন্নত প্রযুক্তি তৈরি হয়েছে, যা পরিবেশবান্ধব এবং বহুলভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।’
প্রকল্পের নানা ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির কথাও তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এ প্রকল্পের সাফল্যের সঙ্গেই কিছু নেতিবাচক চিত্র বিদ্যমান। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দিক থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি, ফলে সঠিকভাবে প্রকল্পটি পরিচালিত হতে পারেনি।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কবি ও সাংবাদিক রুহুল কাদের বাবুল। তিনি বলেন, ‘আজকের এই মেধাবৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে আমরা চেষ্টা করেছি নতুন প্রজন্মের মেধাবী ছাত্রদের উৎসাহিত করতে। এটি সমাজের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতার একটি অংশ। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, এজন্য তাদের জ্ঞান ও মেধা বিকাশের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।’
মেধাবৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হেদায়েত উল্ল্যাহ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মুহাম্মদ ইসহাক, কবি ও প্রাবন্ধিক জহির সিদ্দিকী, প্রফেসর মোহাম্মদ শাহ আলম এবং কবি ও অনুবাদক রুহুল কাদের বাবুল। বক্তারা দেশীয় শিক্ষার উন্নয়ন ও তরুণদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস সৃষ্টির উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
মহেশখালী মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের গুরুত্ব এবং এর অগ্রগতির দিক নিয়ে আলোচনা চলছেই। প্রকল্পটি দেশের শক্তির চাহিদা মেটানোর জন্য তৈরি হলেও পরিবেশগত ক্ষতির শঙ্কা এবং স্থানীয় জনগণের জীবনযাত্রার ওপর এর প্রভাব, বিশেষ করে সলিমুল্লাহ খানসহ বিভিন্ন বিশেষজ্ঞদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এর ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, তবে সরকারের পক্ষ থেকে এমনকি প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে এই বিষয়গুলো যথাযথভাবে সমাধান হবে কি না- সেটিই এখন মূল প্রশ্ন।