সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলা
চরফ্যাশন (ভোলা) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৯:৩৭ পিএম
প্রবা ফটো
ভোলার চরফ্যাশনে পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে হামলা চালিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলার আসামিকে ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিকালে পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
এর আগে গত মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) ভোলার চরফ্যাশনের বিচ্ছিন্ন পর্যটক দ্বীপ ঢালচর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে হামলা করে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এক তরুণীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে এক বছর পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। এর প্রতিবাদে গত মঙ্গলবার ওই তরুণী দক্ষিণ আইচা থানায় সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও পর্নোগ্রাফী আইনে মামলা করেন।
পুলিশ জানায়, মামলার পর ঢালচর তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশ ধর্ষণ মামলার ৩ নম্বর আসামি ইসমাইলকে তার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। এই খবর ছড়িয়ে পরার পর ঢালচর ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি শাহ আলম ফরাজী, সহ-সভাপতি মোক্তার ফরাজি, স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি ফেরদাউস, জিয়া পরিষদের সভাপতি মামুনের নেতৃত্বে স্থানীয় বিএনপির একাংশের শতাধিক কর্মী-সমর্থক বিক্ষোভ মিছিল করে তদন্ত কেন্দ্রে ঢুকে পরেন এবং সেখান থেকে ইসমাইলকে ছিনিয়ে নিয়ে যান।
এই ঘটনায় তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক আনোয়ার হোসেন বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় ১৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ২০/২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলা দায়েরের পর অভিযুক্ত ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি শাহেআলম ফরাজি ও সিনিয়র সহ-সভাপতি মোক্তার ফরাজীসহ সবাই আত্মগোপনে যাওয়ায় তাদের বক্তব্য জানা যায়নি।
তবে ঢালচর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো.জাহাঙ্গীর মাতাব্বর বলেন, ‘ঘটনাটি আমি শুনেছি। স্থানীয়রা জোটবদ্ধ হয়ে ওই ছেলেকে ছড়িয়ে নিয়েছে।’
দক্ষিণ আইচা থানায় দায়ের করা সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলা সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী ওই তরুণীর বাবা-মা ভোলার মনপুরায় বসবাস করেন। তিনি থাকতেন ঢালচরের আদর্শ গ্রামে দাদার বাড়িতে। সেখানে প্রতিবেশি ৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি সোলাইমানের ছেলে ইসমাইলের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে তার। ২০২৪ সালের ৬ মার্চ রাতে ইসমাইলের ডাকে সাড়া দিয়ে দাদা-দাদীর অগোচরে ঘর থেকে বের হয় ওই তরুণী।
এ সময় ইসমাইল তার মুখ চেপে পাশের মেঘনা নদীর তীরের খোলামাঠে নিয়ে যান। সেখানে আগে থেকে অপেক্ষায় ছিল ঢালচরের লোকমান হোসেন এলাহীর ছেলে নিবির, আলাউদ্দিনের ছেলে আক্তার, নুরে আলম দালালের ছেলে শরীফ এবং গণি মাঝির ছেলে মনির। তারা ওই তরুণীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে এবং ভিডিও ধারন করে।
ওই তরুণীর দাবি, ভিডিও প্রকাশ করে দেওয়ার হুমকি দেওয়ায় এই অপরাধের শিকার হয়েও দাদা-দাদীসহ পরিবারের পরামর্শে এতোদিন মুখ খুলেননি। কিন্ত দীর্ঘ সময় পর ধর্ষকরা ধর্ষণের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ায় তিনি মামলা দায়ের করেছেন।
দক্ষিণ আইচা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এরশাদুল হক ভূইয়া জানান, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও পর্ণগ্রাফি আইনে ওই তরুণী মামলা করেছেন। আসামিরা পালিয়ে আছেন।
তিনি আরও জানান, পুলিশের কাজে বাধা ও আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় আরও একটি মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তার এড়াতে অভিযুক্তরা পালিয়ে গেছেন। এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। অভিযান অব্যহত রয়েছে।