পদত্যাগ করে দুই সমন্বয়ক
রাজশাহী অফিস
প্রকাশ : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৬:৫২ পিএম
আপডেট : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৭:২০ পিএম
রাবির পরিবহন মার্কেটের সামনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন। প্রবা ফটো
বৈষম্যের অভিযোগ তুলে নতুন ছাত্রসংগঠন ‘বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ’ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন যুগ্ম আহ্বায়ক মেহেদী সজিব ও যুগ্ম সদস্য সচিব সালাউদ্দিন আমমার। তারা দুজনেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক।
শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টায় রাবির পরিবহন মার্কেটের সামনে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই দুই সমন্বয়ক দাবি করেন, বিভাজন ও আধিপত্য বিস্তারের রাজনীতি আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। জনগণের আকাঙ্খা এবং জুলাই বিপ্লবের প্রেক্ষিতে কাঙ্খিত বৈষম্যহীন ও আধিপত্য বিহীন বাংলাদেশ এখনও বাস্তবায়ন করা যায়নি। ফলে জুলাই অভ্যুত্থানের বিভিন্ন স্টেইকহোল্ডারসহ সর্বক্ষেত্রে বিভাজন লক্ষ্যণীয়। এ বিভাজনকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন না করে বৈষম্যহীন দেশ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না।
এসময় তারা জানান, জুলাই বিপ্লবের মূলে ছিল বৈষম্যের বিরুদ্ধেই আন্দোলন; কিন্তু বৈষম্য যদি নতুন মোড়কে আধিবত্যবাদ বা আঞ্চিলিকতার মোড়কে ফিরে আসে তবে তা হবে দু:খজনক। এর বিরুদ্ধে আবরও সোচ্চার হবো প্রত্যয় ব্যক্ত করেন এই দুই সমন্বয়ক। নতুনদের কাউকে দলের দায়িত্ব না নেয়ার পরামর্শ দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ম্যান্ডেটের বাহিরে গিয়ে তাদের পক্ষে কোনো দল, গোষ্ঠী বা প্রেসার গ্রুপে নিজেদেরকে একীভূত করা যুক্তিযুক্ত হবে না।
লিখিত বক্তব্যে সালাউদ্দিন আমমার বলেন, ‘চব্বিশের জুলাইয়ে এক রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশের বুকে গেঁড়ে বসা গণতন্ত্রের মোড়কে এক ভয়ঙ্কর স্বৈরাচারী শাসনামলের পতন ঘটাতে সক্ষম হয়েছি। এই যাত্রায় আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই এমন ইতিহাস রচনা করা সম্ভব হয়েছে। ছাত্রজনতার ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের মাধ্যমে আমরা এ অসাধ্য সাধন করতে পেরেছি। কিন্তু মাত্র কিছু সময়ের ব্যবধানে আমাদের মাঝে বিভাজন ও আধিপত্য বিস্তারের রাজনীতি আবারো মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। আপামর জনসাধারণের আকাঙ্ক্ষা এবং জুলাই বিপ্লবের প্রেক্ষিতে কাঙ্ক্ষিত বৈষম্যহীন, আধিপত্য বিহীন বাংলাদেশ এখন অবধি বাস্তবায়ন করা যায়নি। ফলশ্রুতিতে জুলাই অভ্যুত্থানের বিভিন্ন স্টেইকহোল্ডারসহ জনগণের সর্বস্তরে বিভাজন লক্ষ্যণীয়। এ বিভাজনকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন না করে ইনক্লুসিভ ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করা আদৌ সম্ভব হবে না।’
‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বেশ কয়েকবার আন্দোলনের গতিপথ পরিবর্তনে ভূমিকা রেখেছে। তন্মধ্যে ১৬ই জুলাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের প্রথম ক্যাম্পাস হিসেবে সন্ত্রাসী ছাত্রলীগকে বিতাড়িত করতে সক্ষম হয়। ডিবি কার্যালয়ে যখন কেন্দ্রীয় ৬ সমন্বয়ককে জিম্মি করে আন্দোলন বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয় তখন সবকিছু উপেক্ষা করে সর্বপ্রথম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই কারফিউ ভেঙে আন্দোলনে নামে। কিন্তু বর্তমান সময়ে এসে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ পুরো উত্তরবঙ্গকে এক সাইডে রেখে রাষ্ট্র পরিচালনার চেষ্টা চলছে। ৫ই আগস্টের পর অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ গঠিত হয়েছে, বিভিন্ন সংস্কার কমিশন হয়েছে, বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ের উপকমিটি গঠিত হয়েছে, সর্বশেষ পিএসসি-ইউজিসিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এসব কিছুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকাকেন্দ্রিক একচ্ছত্র আধিপত্য আমরা লক্ষ্য করছি। সবকিছুতে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও অঞ্চলকে যথাযথ মূল্যায়ন করা হচ্ছে না।’
আমমার আরও বলেন, গতকাল বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র-সংসদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজনকে যুগ্ম আহ্বায়ক, যুগ্ম সদস্য সচিব, সংগঠক করা হয়েছে, যা আমাদের সম্মতি ছাড়াই হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতার আলোকে আমরা এ প্লাটফর্মটিকে ধারণ করতে পারছি না। নতুন বন্দোবন্তের নামে ঢাকা ও ঢাবিকেন্দ্রিক নয়া ফ্যাসিবাদী মনোভাবের যে উত্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে তার প্রতিবাদেই আমরা এই প্লাটফর্মে থাকতে রাজি না। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য স্টেইকদেরকে বিপ্লব পরবর্তী সময় থেকে যেভাবে বিভাজন করা হয়েছে সেই বিভাজনের রাজনীতিতে আমাদের পক্ষে থাকা সম্ভব নয়। শত চেষ্টা করেও যখন নয়া বন্দোবস্তের নাম নেওয়া কর্তাব্যক্তিদের কাছ থেকে আমাদের মৌলিক কিছু দাবিও পূরণ করতে পারি নাই তখন আমাদের জন্যও এমন ব্যানারে নিজেদেরকে জড়ানো সমীচীন নয়।’
‘আমাদের স্পষ্ট বার্তা হলো ঢাকা ও ঢাবিকেন্দ্রিক ফ্যাসিবাদী মনোভাব থেকে যতদিন না এই দলের অংশীজনরা বেরিয়ে আসতে পারবে, বিকেন্দ্রীকরণের দিকে মনোনিবেশ করবে, ততদিন অবধি আমরা তাদের সাথে কোনো ধরনের রাজনৈতিক বোঝাপড়ায় যেতে আগ্রহী না। আর তাই উক্ত পদগুলো থেকে আমরা সবাই পদত্যাগ করলাম। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ম্যান্ডেটের বাহিরে গিয়ে আমাদের পক্ষে কোনো দল, গোষ্ঠী কিংবা প্রেসার গ্রুপে নিজেদেরকে একীভূত করা যুক্তিযুক্ত মনে করছি না। আমরা এমন একটি প্লাটফর্ম চাই যেখানে সর্বস্তরের আপামর ছাত্রসমাজ ঐক্যবদ্ধ ভাবে দেশের স্বার্থে সুস্থ ধারার রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করবে। অদূর ভবিষ্যতে এমন কোনো প্লাটফর্মে আমরাও যুক্ত হতে চাই। বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের জন্য শুভকামনা রইলো।’