চট্টগ্রাম অফিস
প্রকাশ : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২২:২৫ পিএম
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে এক মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান। প্রবা ফটো
বন্দর নানা সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি ছিল জানিয়ে বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, সিন্ডিকেট ভাঙার উদ্যোগ নিয়ে আমরা সফল হয়েছি। যার ফলে বন্দরে খরচ উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। পোর্ট দেশের সম্পদ। এই পোর্টকে আমরা জনবান্ধব করতে চাই। যাতে সকলে পোর্টকে সমানভাবে ব্যবহার করতে পারে, এর সুফল পায়। এজন্য কাজ করতে হবে স্বচ্ছতা, ন্যায় ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে। এটা শতভাগ বাস্তবায়ন করতে পারলেই জনগণ ভালো থাকবে।
বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, ‘রমজানে যেসব পণ্যের চাহিদা থাকে তা পর্যাপ্ত আমদানির তথ্য আমাদের কাছে আছে। আমরাও শিডিউলিংয়ের মাধ্যমে বন্দরের পরিবহণ আরও গতিশীল করছি। রমজানে কোনো অসাধু ব্যবসায়ী পণ্যের কৃত্রিম সংকট যেন সৃষ্টি করতে না পারে। আপনারা সেদিকে নজর রাখবেন। আমরা বন্দরের অভ্যন্তরে ও আউটারে কোনো জট যেন না হয়। সে লক্ষ্যে কাজ করছি।’
তিনি বলেন, কনটেইনার অপসারণের ফলে বন্দরের ভেতরে জায়গা বেড়েছে। আগে জায়গায় সংকুলান হতো না। তাই এফিসিয়েন্সি অনেক কমে যেত। এখন সমন্বয়ের ফলে শৃঙ্খলা ফিরেছে, হ্যান্ডলিং ফাস্ট হয়েছে। আমরা বন্দরের কার্যক্রম নিয়ে ফুল অটোমেশনে যাব এবং মেরিটাইম পোর্ট সিঙ্গেল উইন্ডো চালু প্রক্রিয়াধীন আছে। এগুলো করার ফলে কাস্টমসে কনটেইনার হ্যান্ডেলিং আগে যেখানে লাগত ছয়-সাত দিন এখন তা তিন-চার দিনে হয়ে যাচ্ছে। কনটেইনার হ্যান্ডেলিং স্পিড এসেছে। জেনারেল কার্গোর অতীতের রেকর্ড ভাঙতে সক্ষম হয়েছি। প্রায় ১২৯ মিলিয়ন টন জেনারেল কার্গো হ্যান্ডেলিং করেছি।
সবার আন্তরিক প্রচেস্টায় আমরা প্রায় শতভাগ শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসতে পেরেছেন জানিয়ে বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, ভেতরে অনেক কনটেইনার দীর্ঘদিন যাবৎ পড়ে ছিল, সেগুলো অপসারণ করা হয়েছে। চারটি ট্যাংকারে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ কেমিক্যাল দাহ্য পদার্থ আইনি জটিলতায় দীর্ঘদিন পড়ে ছিল, যেগুলো যে কোনো সময় বিস্ফোরণ হতে পারত। এটা দ্রুততম সময়ে সরিয়ে ফেলি। অল্প সময়ে এটা অকশনের ব্যবস্থা করি। ফলে সরকার রাজস্ব পেয়েছে। বন্দর এখন বিপদজ্জনক কার্গো থেকে ঝুঁকিমুক্ত। ১২০টি রিফার কনটেইনার (শিপিং কনটেইনার) প্রায় ৯ মাস ধরে প্লাগ-ইন ছিল। এগুলোর মাধ্যমে মাংস এবং ফলমূল বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়েছিল। দীর্ঘদিন পড়ে থাকার ফলে ব্যবহারের অনুপযোগি হয়ে পড়ে। এগুলো ডিসপোজ করা কঠিন ছিল। পাশাপাশি পরিবেশের ছাড়পত্রের ব্যাপার ছিল। জেলা প্রশাসনের সহায়তায় সেগুলো ডিসপোজ করি। এজন্য বিদেশে মেইন লাইন অপারেটররা আমাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এ ধরনের কাজ বিগত ১০-১৫ বছরে হয়নি। সেটা ৩-৪ মাসের মধ্যে করতে পেরেছি। যা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রশংসিত হয়েছে।
তিনি বলেন, আগে জাহাজ বন্দরে আসতে প্রায় আট দিন অপেক্ষা করতে হতো। এখন সরাসরি চলে বিদেশ থেকে আসা জাহাজকে এখন আর আগের মত বহিঃনোঙরে অপেক্ষা করতে হয় না। বর্তমানে গিয়ারলেস এবং গিয়ারও ভেসেল সমন্বয় করে শতভাগ জোট বা বার্থ ব্যবহার করা হচ্ছে যাতে যে কোনো জাহাজ এলে সহজে ভিড়তে পারে। আগে তুলনামূলকভাবে ছোট জাহাজ আসত। একটা জাহাজে ৮০০-১২০০ কনটেইনার বহন করত। এখন আমরা আমদানীকারকগণকে সিসি অ্যাগ্রিমেন্ট এর মাধ্যমে ম্যাক্সিমাম ক্যাপাসিটির জাহাজ আনতে উদ্বুদ্ধ করি। ফলে বড় জাহাজে অনেক বেশি কার্গো আসে। এজন্য জাহাজের সংখ্যা কমছে, ক্যাপাসিটি বেড়েছে। খরচ কমেছে, ব্যবস্থাপনায় পেয়েছে গতি।
বে টার্মিনাল প্রসঙ্গে বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বলেন, বে টার্মিনাল চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রাম বন্দরের হ্যান্ডলিং ক্ষমতা প্রায় ৩ গুণ বৃদ্ধি পাবে। প্রকল্পটির অধীনে কন্টেইনার টার্মিনাল-১, কন্টেইনার টার্মিনাল-২, মাল্টি পারপাস টর্মিনাল, ব্রেক ওয়াটার ও একসেস চ্যানেল নির্মাণ, অনান্য আনুসাঙ্গিক স্থাপনা, রাস্তা, চেইনেজ, সার্ভিস জেটি নির্মাণ করা হবে। এসব কাজের মধ্যে ব্রেক ওয়াটার, একসেস চ্যানেল এবং আনুসাঙ্গিক কাজগুলো সম্বলিত একটি ডিপিপি ইতোমধ্যে অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। উক্ত ডিপিপি অনুমোদিত হলে বিশ্বব্যাংকের সাথে লোন চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। অন্যদিকে কন্টেইনার টার্মিনাল-১ ও ২ এর সম্ভাব্য অপারেটরদের নিকট আরএফপি প্রেরণের জন্য ট্রানজেকশন এডভাইজার কাজ করছে।