রংপুর ব্যুরো
প্রকাশ : ০৩ ডিসেম্বর ২০২২ ২২:৪৪ পিএম
রংপুরে সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার।
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএমকে দুর্বল ও জালিয়াতির যন্ত্র মনে করেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেছেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) যে ফল চাইবেন, ইভিএমে সেটিই হবে।
রংপুর সফরে গিয়ে শনিবার (৩ ডিসেম্বর) বিকেলে আরডিআরএস প্রাঙ্গনে তিনি সংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘ইভিএম একটি দুর্বল ও জালিয়াতির যন্ত্র। নির্বাচন কমিশন যে ফল চায় এ যন্ত্র দিয়ে সেটি করা সম্ভব। ইভিএম দিয়ে নির্বাচনে যাচাই-বাছাই, অডিট কিংবা পুনর্গণনা করার সুযোগ নেই।’
এমন কি প্রয়াত বিশিষ্ট তথ্যপ্রযুক্তিবিদ এবং প্রকৌশলী জামিলুর রেজা চৌধুরী ইভিএমের বিরোধিতা করেছিলেন বলেও দাবি করেন তিনি। বলেন, ‘ইভিএম মেশিন কেনার সময় যে সুপারিশ নেয়া হয়েছিল তার পক্ষে স্বাক্ষর করেননি তৎকালীন বুয়েটের ভিসি প্রয়াত জামিলুর রেজা চৌধুরী। এ ছাড়া গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৬টি আসনে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হয়েছে। ব্যালট দিয়ে ভোটগ্রহণ করা ২৯৪টি আসনে ভোট পড়েছে ৮১ শতাংশ। অপরদিকে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা ৬টি আসনে ভোট পড়েছে ৫১ শতাংশ। সুতরাং যেই যন্ত্র ব্যবহার করে মানুষকে তার ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়, সেই যন্ত্র ব্যবহারে কোন যুক্তি রয়েছে তা আমি জানি না। এটি কোনভাবেই সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করবে না।’
রাজনীতি জনকল্যাণের জন্য হলেও এখন সেটিকে নেতারা খেলায় পরিণত করেছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বদিউল আলম বলেন, ‘রাজনীতি একটি মহান ও জনকল্যাণমূলক পেশা হলেও রাজনীতিবিদরা এটিকে খেলায় পরিণত করেছেন। এই খেলা নিয়ে বর্তমানে যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে তা গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও রাষ্ট্রের সাথে সংগতিপূর্ণ নয়। এটি একটি নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্রের পূর্বাভাস বা প্রতিফলন।’
তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে মানুষের ভোটের অধিকার, বাক স্বাধীনতা, সংগঠন করা, প্রতিবাদ করা, মিটিং মিছিল করার স্বাধীনতা হলো গণতান্ত্রিক অধিকার। এগুলোকে করতে না দিয়ে এখন বলা হচ্ছে খেলা হবে। এ ছাড়া দেশের পুলিশ চরম দলীয়করণের শিকার হয়েছে। যে কারণে বিদেশি শক্তিরা বাংলাদেশকে কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্র বলছে।
এ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে বলেও জানান তিনি।
বদিউল বলেন, ‘আমাদের বিগত দুটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে কমিশন ব্যর্থ হয়েছে। এর একটি একতরফা নির্বাচন, অপরটি জালিয়াতির নির্বাচন হয়েছে। দেশে আরেকটি ব্যর্থ নির্বাচন হলে আমাদের জন্য তা চরম অকল্যাণ বয়ে আনবে। আমরা আশা করব, কমিশন যেন জনগণের স্বার্থে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন।’
গাইবান্ধার নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, গাইবান্ধার উপ-নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন ইতিহাস রচনা করেছে। এর মধ্যে প্রথম ইতিহাস হলো ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা, দ্বিতীয় ইতিহাস হলো পুরো নির্বাচন বাতিল করা, তৃতীয় ইতিহাস হলো ভোটে অনিয়মের তদন্ত করা। চতুর্থ ইতিহাসটি নেতিবাচক। কমিশন তদন্ত করলেও রাঘব-বোয়ালরা রয়েছে ধরা ছোঁয়ার বাহিরে। তদন্তে দুর্নীতির বিষবৃক্ষকে বাদ দিয়ে তার ডালপালা ছেটে দেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রতিমান হয় যে, ক্ষমতাধর রাঘব-বোয়ালরা অন্যায় করলেও তারা পার পেয়ে যাবেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন মহানগর সুজনের সভাপতি অধ্যক্ষ খন্দকার ফখরুল আনাম বেঞ্জু, সুজনের সংগঠক রাজেশ দেসহ সুজনের সদস্যরা।