কক্সবাজার ও চকরিয়া প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২১:৩০ পিএম
আপডেট : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২২:০৬ পিএম
বুধবার চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ার খুটাখালী এলাকার কর্মসূচি। প্রবা ফটো
লবণ ফেলে ও কাফনের কাপড় গায়ে দিয়ে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেছে কক্সবাজারের প্রান্তিক লবণ চাষিরা।
বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী এলাকায় এ কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় সড়কে এক ঘণ্টা ধরে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। এতে মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হলে চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।
মহাসড়কে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন- লবণ চাষি ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি জামিল ইব্রাহিম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান চৌধুরী খোকন মিয়া, অ্যাডভোকেট শহীদুল্লাহ্, চেয়ারম্যান মৌলানা আবদুর রহমান, নুরুল আজম, শোয়াইবুল ইসলাম সবুজ।
লবণ চাষি ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদের দাবি, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম বাংলাদেশের একমাত্র দেশীয় লবণ উৎপাদন কেন্দ্র। এর মধ্যে প্রায় ৯৫ শতাংশ লবণ উৎপাদন হয় কক্সবাজার জেলার টেকনাফ, কক্সবাজার সদর, ঈদগাঁও, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, চকরিয়া উপজেলায় এবং অবশিষ্ট ৫ শতাংশ লবণ উৎপাদন হয় চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায়। গত মৌসুমে প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকূলে থাকায় দেশীয় উৎপাদিত লবণ দেশের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয়েছে। এমনকি অর্থবছরে উৎপাদিত লবণ চাহিদা মিটিয়ে বর্তমানে আরও ২ লাখ ২২ হাজার মেট্রিক টন লবণ মজুদ রয়েছে। চলতি মৌসুমে প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকূলে থাকায় লবণ উৎপাদন প্রক্রিয়া ভালোভাবেই চলছে। প্রায় ৬৫ হাজার একর জমিতে লবণ উৎপাদন হয়, যা ক্রমান্বয়ে আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশীয় লবণশিল্পের সঙ্গে ৬৫ হাজার চাষিসহ ১০ লাখ মানুষ লবণশিল্পের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত। কিন্তু এ বছর মাঠ পর্যায়ে লবণের উৎপাদন ভালো থাকা সত্ত্বেও চাষীরা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। মাঠ পর্যায়ে বর্তমানে লবণ মণপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকা। অথচ এক মণ লবণের উৎপাদনে ৩০০-৩৫০ টাকা খরচ হচ্ছে।
‘শিল্প লবণ’ আমদানির পাঁয়তারা বন্ধ এবং উৎপাদিত লবণের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতের দাবি জানান লবণ চাষি ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদের নেতারা।
কক্সবাজার লবণ চাষি ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান চৌধুরী খোকন মিয়া বলেন, লবণের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতের জন্য সবার হস্তক্ষেপ কামনা করেছি। প্রতিটি দপ্তরে, উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে বিসিক সবখানে আবেদন করেছি। শেষমেষ ঢাকায় গিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছি। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। তাই আজকে মহাসড়কের খুটাখালীতে লবণ ফেলে সড়ক অবরোধ করেছি। তারপরও যদি মাঠ পর্যায়ে লবণের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা না হয়, তাহলে পুরো কক্সবাজার লবণ ফেলে আমরা অচল করে দেবো।
লবণ চাষি ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদের সহ-সভাপতি নুরুল আজম বলেন, লবণ চাষের জন্য জমির দাম, ত্রিপল ও পানির খরচ সবকিছু বাড়তি। এক কেজি লবণ উৎপাদন করতে খরচ পড়ছে ১০ টাকার ওপরে, আমরা প্রতিকেজি লবণ বিক্রি করে পাচ্ছি ৫ টাকা। এখন চাষিরা কোথায় যাবে, ভরসার জায়গাটা তো পাচ্ছে না। মূলত, মিলাররা সিন্ডিকেট করে বিদেশ থেকে শিল্প লবণ এনে দেশীয় লবণকে ধ্বংস করছে। তাই প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করছি, যাতে শিল্প লবণ আমদানি বন্ধ করা হয় এবং মাঠ পর্যায়ে লবণের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা হয়।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) তথ্যমতে, গত মৌসুমে উপকূলের ৬৮ হাজার ৫০৫ একর জমিতে লবণ উৎপাদিত হয়েছিল ২৫ লাখ ২৮ হাজার মেট্রিক টন, যা বাণিজ্যিকভাবে লবণ উৎপাদন শুরুর ৬৩ বছরে সর্বোচ্চ উৎপাদন। চলতি মৌসুমে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৬ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন। আর গেল ৪ মাসে লবণ উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৪ লাখ মেট্রিক টন।