রায়হানুল ইসলাম আকন্দ, শ্রীপুর (গাজীপুর)
প্রকাশ : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৮:৫৬ পিএম
কৃষি উদ্যোক্তা কবির হোসেনের সূর্যমুখীর বাগান দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা। রবিবার গাজীপুরের শ্রীপুরের কায়েতপাড়া এলাকা।
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নের কায়েতপাড়া (ফাতেমা নগর) গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা কবির হোসেন। অনেকটা শখ করেই তিনি সূর্যমুখী ফুলের বাগান করেন। সেটি এখন উপজেলায় দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। সবার জন্য বাগান উন্মুক্ত করে দিয়েছেন তিনি। প্রতিদিন হাজারো দর্শনার্থী বাগান দেখতে আসেন। কবির হোসেনের সূর্যমুখী চাষে সহায়তা করছে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
সরেজমিন দেখা গেছে, হাজারো ফুলপ্রেমী দূরদূরান্ত থেকে বাগান দেখতে আসছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত হওয়ায় দর্শনার্থীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বাগানের আশপাশে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের অস্থায়ী দোকান। ফটোসেশনের জন্য স্থাপন করা হয়েছে কারুকাজের বাহারি গেট, বসার স্থান। দর্শনার্থীদের জন্য বাগানটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।
কবির হোসেন জানান, লাভের আশায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে সূর্যমুখী ফুলের পরীক্ষামূলক চাষ শুরু করেন। কিন্তু ফুল ফোটার শুরুতেই চলতি মাসের প্রথম দিক থেকে দর্শনার্থীদের আনাগোনা শুরু হয়। ধীরে ধীরে সূর্যমুখী ফুলের বাগান হয়ে ওঠে দর্শনীয় স্থান। আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে প্রচারের আরও প্রসার ঘটে।
শ্রীপুর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী রয়েল রায়, মোসা. সুমাইয়াসহ কয়েকজন বলেন, বাগানটা খুব সুন্দর। ফেসবুকের মাধ্যমে জেনে এসেছি। বেশ ভালো লাগছে। এই বাগানের খবর জেনে দেখার লোভ জেগেছে। তাই সহপাঠীদের নিয়ে চলে এসেছি। আমার মতো অনেকেই এসেছে। বেশ নয়নাভিরাম দৃশ্য।
মুহিবউল্লাহ নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পাশপাশি সূর্যমুখীর চাষ বিনোদনেরও কেন্দ্রস্থল হবে। অন্য কৃষকেরাও সূর্যমুখী ফুলের চাষে উদ্বুদ্ধ হলে দেশ অর্থনৈতিকভাবে সফল হবে।
ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের নিগুয়ারী থেকে এসেছেন মুফতিয়া জাহান ও সায়মন। তারা বলেন, অনলাইনে দেখে এসে দেখি মুনোমুগ্ধকর পরিবেশ। আমরা দুজন এসেছি। এখানকার বাগান সংশ্লিষ্টরা অনেক ভালো। পরিবেশটাও সুন্দর। গ্রামের মধ্যে এক মনোমুগ্ধকার দৃশ্য।
কবির হোসেন বলেন, শখের বশে চার বিঘা জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছি। সূর্যমুখী ফুলের বীজ থেকে ভোজ্য তেল হয়। এটি অর্থনৈতিক দিক থেকে বেশ লাভজনক। চাষ করার পেছনে সেটিও একটা কারণ। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বিনামূল্যে বীজ, সার, কীটনাশক প্রভৃতি দিয়ে সহযোগিতা করেছে। প্রদর্শনীমূলক এ চাষে সফলতা পেলে আগামী বছর আরও বেশি জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করব। বাগান পরিদর্শনে প্রতিদিন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ আসেন। তাদের সামলাতেও এখন হিমশিম খেতে হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমাইয়া সুলতানা বন্যা বলেন, কায়েতপাড়া গ্রামে বারি সূর্যমুখী ফুলের প্রদর্শনী স্থাপন করা হয়েছে। এখানে বীজ, সারের সরবরাহ করা হয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে। এখানে পার্টনার ফিল্ড স্কুল গঠন করা হয়েছেÑ যার মধ্যে ২৫ জন কিষান-কিষানি রয়েছেন। যাদের সূর্যমুখী ফুল ছাড়াও বিভিন্ন তৈলজাতীয় ফসল উৎপাদনের কলাকৌশল, পোকামাকড়, রোগবালাই দমন ব্যবস্থাপনা নিয়ে হাতেকলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, সূর্যমুখী আবাদের মাধ্যমে ভোজ্য তেলের যে চাহিদা রয়েছে এতে আমাদানি-নির্ভরতা কমবে। আমরা পুষ্টিসমৃদ্ধ তেল পাব। আশা করছি এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে অন্য কৃষকেরাও আগামীতে সূর্যমুখী চাষে উদ্বুদ্ধ হবে। সূর্যমুখীর উৎপাদন বাড়বে।