চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ : ০৩ ডিসেম্বর ২০২২ ২১:৩৬ পিএম
আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২২ ২২:৩৯ পিএম
খুনের শিকার আলিনা ইসলাম আয়াত।
চট্টগ্রামের ইপিজেড এলাকায় শিশু আলিনা ইসলাম আয়াতকে অপহরণ করে হত্যা ও মরদেহ টুকরো করে সাগরে ভাসিয়ে দেওয়ার বর্ণনা দিয়ে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন গ্রেপ্তার আসামি আবির আলী।
শনিবার (৩ ডিসেম্বর) বিকেল থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম জুয়েল দেবের আদালতে ১৭ পৃষ্ঠার জবাববন্দি দেন আবির। পরে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
গ্রেপ্তার আবির আলীর বাড়ি রংপুরের তারাগঞ্জে। পরিবারের সঙ্গে তিনি চট্টগ্রাম মহানগরীর ইপিজেড থানার দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের নয়ারহাট এলাকায় সোহের রানার বাসায় ভাড়া থাকতেন। সোহেল রানা নিহত আয়াতের বাবা।
দাম্পত্য কলহের পরে আবিরের মা সন্তানদের নিয়ে অন্য বাসায় থাকতেন।
গত ১৫ নভেম্বর বিকেলে শিশু আয়াত নিখোঁজ হয়। পরে ইপিজেড থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন আয়াতের বাবা সোহেল রানা। ১০ দিন পর আয়াতকে উদ্ধার করতে না পারলে তদন্তের ভার দেওয়া হয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-এর ওপর।
পিবিআই সন্দেহভাজন আবির আলীকে আটক করে। পরে আবির স্বীকার করে আয়াতকে অপহরণ ও হত্যার কথা। এমন কি তার দেওয়া তথ্যে আয়াতের মরদেহের খণ্ডাংশ উদ্ধার করে পুলিশ।
সে ঘটনায় কথা মামলায় আবিরকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে প্রথমে দুইদিন ও পরে সাত দিনের রিমান্ড নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই। পরে গ্রেপ্তার হন আবিরের বাবা-মা ও বোন। তারা তিন দিনের রিমান্ডে আছেন।
রবিবার তাদের রিমান্ড জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হবে।
আবিরের রিমান্ডও রবিববার শেষ হওয়ার কথা ছিল। একদিন আগেই তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হওয়ায় তদন্ত কর্মকর্তা তাকে আদালতে নেন।
জবানবন্দির বিষয়টি নিশ্চিত করেন পিবিআই পরিদর্শক ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মনোজ কুমার দে।
১৭ পৃষ্ঠার জবানবন্দিতে আবির আলী জানান, তিনি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। বাবা-মা চাকরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। সম্প্রতি বাবা-মায়ের মধ্যে কলহের কারণে তারা আলাদা বাসায় থাকা শুরু করেন। তবে বাবার বাসায় আবিরের যাতায়াত আছে।
জবানবন্দির সূত্রে জানা গেছে, আবির জানান কিছু দিন আগে তার মায়ের চাকরি চলে যায়। ফলে আর্থিক অনটনে পড়েন তারা। নিয়মিত খাবারও জুটছিল না। এরই মধ্যে তার ‘বড়লোক’ হওয়ার স্বপ্ন জাগে। তাই আয়াতকে অপহরণ করে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের ফন্দি আঁটেন আবির।
সে টাকা দিয়ে অটোরিকশা কিনে সেগুলো ভাড়া দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। গত ১৫ নভেম্বর সাড়ে ৩টার দিকে আয়াতকে ধরে বাবার বাসায় ঢুকিয়ে ফেলেন। কিন্তু সেখানে আয়াতকে লুকিয়ে রাখা যাবে না এমন চিন্তা থেকে আয়াতকে হত্যা করেন। তার আগেও আয়াতকে অপহরণের চেষ্টা করেছিলেন বলেও জবানবন্দিতে স্বীকার করেছেন আবির।
আবির আদালতকে জানান, তিনি এক সময় টিভিতে নিয়মিত ক্রাইম পেট্রোল ও সিআইডি সিরিয়াল দেখখেন। সেখান থেকেই মরদেহ গুমের কৌশল শেখেন।
আদালতে এ সময় আবির আয়াতকে হত্যার পর তার মরদেহ টুরকো করা ও সাগরে ফেলে দেওয়ার বর্ণনা দেন।
জবানবন্দিতে আবির আলী বলেন, আয়াতের মরদেহ তার বাবার লুঙ্গিতে মুড়িয়ে ব্যাগ ভরেন। পরে দুটি ব্যাগ নিয়ে বাসা থেকে বের হন। রিকশায় চলে যান মায়ের বাসায়। এরপর দোকান থেকে কাটার, ছুরি কেনেন। মায়ের বাসায় মরদেহের ব্যাগ রাখেন সানসেটে। এরপর মরদেহ টুকরো করেন।
আবির বলেন, ‘মরদেহ বাথরুমে নিয়ে যাই, প্রথমে ছুরি দিয়ে আয়াতের শরীর কাটার চেষ্টা করি। চামড়া মোটা হওয়ায় যেভাবে চাচ্ছিলাম, সেভাবে কাটছিল না। তাই বটি দিয়ে কাটা শুরু করি। হাড়ের অংশগুলো গাছের গুঁড়ির উপর রেখে বটি দিয়ে কেটে আলাদা করি।’
প্রমে দুই হাত, পরে মাথা এবং সব শেষে পা আলা করে কাটেন আবির। এরপর সেগুলো ব্যাগে ভরে স্কচটেপ দিয়ে শক্ত করে আটকিয়ে ফেলেন।
এসব করার সময় বাইরে থেকে আবিরের মা ও বোন আসেন। দরজা খুলতে বললেও তিনি বাথরুমে আছেন জানিয়ে খোলেন না। বাইরে থেকে শব্দ যেন বোঝা না যায় সে জন্য ট্যাপ ছেড়ে রেখেছিলেন এবং ফ্যানও চালিয়ে রেখেছিলেন বলে জানান আবির।
পরে আয়াতের দেহের খণ্ডিত ছয় অংশ অ্যাশ কালারের ব্যাগে ঢুকিয়ে পুনরায় সানসেটে রেখে দেন। দুই দিন পর ১৭ নভেম্বর রাত পৌনে ৮টার দিকে তার শরীরের অংশ এবং দুটি হাত ভর্তি ব্যাগ নিয়ে সাগরে ফেলে দেন আবির।