যশোরের হরিণা বিল
তরিকুল ইসলাম মিঠু, যশোর
প্রকাশ : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১০:৩১ এএম
যশোরের মনিরামপুরের হরিণা খালের বেড়িবাঁধ গত শনিবার ভোরে ভেঙে যায়। পরে ভাঙা বাঁধটি স্বেচ্ছাশ্রমে মেরামতের চেষ্টা চায়ায় স্থানীয়রা। প্রবা ফটো
যশোরের মনিরামপুর উপজেলার দূর্বাডাঙ্গায় হরিণা বিলের বেড়িবাঁধ ভেঙে এক হাজার ২০০ বিঘা জমির বোরো আবাদ নষ্ট হয়ে গেছে। এ ছাড়া বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় ভেসে গেছে একটি মাছের ঘেরও। গত শনিবার ভোরে বাঁধটি ভেঙে যায় বলে জানায় স্থানীয়রা।
বেড়িবাঁধ ভাঙার পরপরই স্থানীয়রা বোরো ধানের আবাদ রক্ষা করতে মাইকিং করেন। শতাধিক লোকজন স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে বাঁশ ও বালুর বস্তা দিয়ে গত রবিবার থেকে বাঁধটি মেরামতের জন্য দ্বিতীয় দফায় কাজ শুরু করে। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং বাঁধ মেরামত এবং ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
স্থানীয়রা জানায়, যশোর জেলার মনিরামপুর উপজেলার ভবদহসংলগ্ন দূর্বাডাঙ্গা ইউনিয়নের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া হরিণা বিল হয়ে ২৭টি বিলের পানি ভবদহ ডায়ের খালে মিলিত হয়। খালের দুপাশ উঁচু করে বেড়িবাঁধ দেওয়া ছিল দীর্ঘদিন ধরে। বাঁধের পূর্ব পাশে স্থানীয় প্রভাবশালী বিমল কুমার মণ্ডল এলাকার কয়েকশ কৃষকের কাছ থেকে এক হাজার ২০০ বিঘা জমি লিজ নিয়ে মাছের ঘের তৈরি করেন। চুক্তি অনুসারে ওই ঘেরে মাছ চাষের পাশাপাশি শুকনো মৌসুমে পানি নিষ্কাশন করে কয়েকশ কৃষক (প্রকৃত জমির মালিক) বোরো আবাদ করে আসছেন। কিন্তু ২৭ বিলের, খালের পানির চাপে শনিবার ভোরে খালের বেড়িবাঁধটি ভেঙে যায়। এতে এক হাজার ২০০ বিঘার ঘেরের মধ্যে রোপণ করা বোরো ধান তলিয়ে যায়। এ ছাড়া ভেসে যায় ঘেরের প্রায় কোটি টাকার মাছ।
স্থানীয়রা আরও জানায়, বিলের বিভিন্ন জমিতে অপরিকল্পিত মাছের ঘের করায় বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এতে খালের পানি নদীতে পড়তে পারে না। তাই খালের পানি যাতে সহজে নদীতে পড়তে পারে, তার ব্যবস্থা এবং সরকারি উদ্যোগে খাল থেকে পলি অপসারণের দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা।
এদিকে, শনিবার ভোরে বেড়িবাঁধ ধসে পড়ার পর স্থানীয়রা মসজিদের মাইকে এলাকার সবাইকে একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়। পরদিন রবিবার সকাল থেকে সম্মিলিত চেষ্টায় বাঁশ ও বালুর বস্তা দিয়ে বাঁধ মেরামতের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন তারা। পরে ওইদিনই সকালে দ্বিতীয় দফায় সম্মিলিত চেষ্টায় স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁশ ও বালুর বস্তা দিয়ে পুনরায় বাঁধটি রক্ষার প্রাণপণ চেষ্টা চালান তারা। ততক্ষণে ঘেরের এক হাজার ২০০ বিঘা জমিতে রোপণ করা বোরো আমন তলিয়ে গিয়ে নষ্ট হয়ে যায়।
মনিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদা আকতার বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা সহযোগিতা চাইলে তাদের নতুন করে চাষাবাদের জন্য সার্বিকভাবে সহযোগিতা দেওয়া হবে।
বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত তামান্নার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘটনার পরপরই মনিরামপুর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। তবে বাঁধটি স্থায়ীভাবে নির্মাণের বিষয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে। এরপরই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবু তালহা বলেন, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৫০ হেক্টর আবাদি জমির ধান নষ্ট হয়েছে। ৩৮ কোটির টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে। তবে পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।