কুষ্টিয়া প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২১:৩১ পিএম
প্রবা ফটো
কুষ্টিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুমারখালী উপজেলা শাখার সদস্য সচিব আসাদুজ্জামান আলীর বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে জামায়াত ও বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে কুমারখালী পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের এলংগীপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
তবে এদিন বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে সমন্বকের বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জামায়াত ও বিএনপির নেতারা। বরং তারা সমন্বক আলী ও তার বাবা আসাদুজ্জামান খান পাখির বিরুদ্ধে কুমারখালীতে ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে চাঁদাবাজি ও পুলিশ ব্যবহার করে আসামি বাণিজ্যের অভিযোগ তুলেছেন।
দুপুরে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কুমারখালী পৌর শিশুপার্ক-এলংগী সড়কের পাশে সমন্বক আলীর পাকা বাড়িটি অবস্থিত। বাড়িটির প্রধান গেট, কাঠের দরজা, কাঁচের জানালা ও ঘরের আসবাবপত্রে ভাঙচুরের ক্ষত। সেগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। বাড়িতে নেই সমন্বয়ক আলী, তার বাবাসহ পরিবারের কেউ। তবে এলাকার পদ্মপুকুর এলাকায় ব্যাপক পুলিশের নিরাপত্তা টহল দেখা যায়।
এ সময় মুঠোফোনে সমন্বয়ক আসাদুজ্জামান আলী বলেন, ‘বাবার সাথে জামায়াত ও বিএনপির রাজনৈতিক বিরোধ। সেই সূত্র ধরে জামায়াত-বিএনপির লোকজন বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছে। আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
নিজেকে পৌর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দাবি করে সমন্বয়ক আলীর বাবা আসাদুজ্জামান খান পাখি বলেন, ‘উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমির আফজাল হোসাইন, উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব লুৎফর রহমান, পৌর বিএনপির আহবায়ক মনোয়ার হোসেন, উপজেলা যুবদলের আহবায়ক জাকারিয়া আনছার মিলন, উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খান আতিকুর রহমান সবুজরা ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের দোসরদের বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। তারা বিভিন্ন মাধ্যমে চাঁদাবাজি-লুটপাট করছেন। সেগুলোর প্রতিবাদ করায় ক্ষিপ্ত হয়ে তারা আমার বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে।’ তার ভাষ্য- ‘পুলিশের সামনে তারা ভাঙচুর লুটপাট করলেও প্রশাসন তাকে সহযোগীতা করছেনা।’
এদিকে সমন্বক পরিচয়ে বাবা-ছেলের চাঁদাবাজির প্রতিবাদে বিকাল সোয়া ৪টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করেন উপজেলা বিএনপি ও জামায়াতের ইসলামের নেতাকর্মীরা। পৌরসভার এলংগী এলাকায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা জামায়াতের আমির আফতাব উদ্দিনের সভাপতিত্বে এ সময় উপস্থিত ছিলেন- উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর আফজাল হোসাইন, উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব লুৎফর রহমান, পৌর বিএনপির আহবায়ক মনোয়ার হোসেন, উপজেলা যুবদলের আহবায়ক জাকারিয়া আনছার মিলন, উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খান আতিকুর রহমান সবুজ প্রমূখ।
লিখিত বক্তব্যে উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমির আফজাল হোসাইন বলেন, ‘৩ আগস্ট পর্যন্ত আসাদুজ্জামান আলী পৌর ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ৫ আগস্টের পর সমন্বয়ক সেজে আলী ও তার বাবা নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নিয়ে বাহিনী গঠন করে বালুরঘাট দখল, সড়কের কাজ বন্ধ করে, পুলিশ দিয়ে নিরীহ মানুষ ধরিয়ে ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের জিম্মি করে ত্রাস সৃষ্টি করে চাঁদাবাজি করছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আলীর বাবা পাখির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, মাদক ও অস্ত্রসহ একাধিক মামলা রয়েছে।’
দ্রুত সমন্বয়কের পদ থেকে আলীকে বাতিল এবং চাঁদাবাজ পাখিকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান তিনি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে আফজাল হোসাইন বলেন, ‘জামায়াত বা বিএনপির কেউ আলীদের বাড়িতে ভাঙচুর করেনি। তাদের আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে বিক্ষিপ্ত জনতা হামলা চালিয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, কুমারখালী শাখার সদস্য সচিব আসাদুজ্জামান আলী। তিনি বলেন, ‘আমিও সংবাদ সম্মেলন করব। সেখানেই সকল প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে জানতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জেলা শাখার সদস্য সচিব মোস্তাফিজুর রহমানকে কল দিলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
পুলিশের মাধ্যমে আসামি বাণিজ্যের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোলায়মান শেখ। তিনি বলেন, ‘সমন্বয়ক আলীর বাড়িতে জনতা ভাঙচুর করেছে বলে জানা গেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আলীর বাবা পাখির বিরুদ্ধে কুমারখালী, ঢাকাসহ বিভিন্ন থানায় ১২টি মামলা রয়েছে। কুমারখালী দায়ের করা মামলায় তিনি জামিনে রয়েছেন।’