সাজেকে আগুন
রাঙামাটি প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৯:১৪ পিএম
প্রবা ফটো
সাজেকের ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় পুড়েছে রিসোর্ট-কটেজ, দোকানের পাশাপাশি স্থানীয়দের বসতঘর। আগুনে অনন্ত ৩৫টি বসতবাড়ি পুড়ে যাওয়ায় চরম সংকটে পড়েছেন স্থানীয় লুসাই ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর প্রায় দুই শতাধিক মানুষ।
আগুনে ঘরবাড়ি পুড়ে যাওয়ায় অনেকে রাত কাটিয়েছেন খোলা আকাশের নিচে, আবার অনেকে মন্দির বা গির্জায়। সামান্য কিছু মালামাল ও আসবাবপত্র রক্ষা করতে পারলেও পুড়ে গেছে ঘরবাড়ি। ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় শেষ সম্বল হারানো মানুষেরা।
আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয়দের খাবার দিয়ে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন সাজেক কটেজ রিসোর্ট মালিক সমিতি।
সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মতিজয় ত্রিপুরা বলেন, ‘আগুনের ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয়দের আমরা, আশেপাশের পাড়ার লোকজন আর সেনাবাহিনী মিলে গতকাল রাত থেকে তাদের খাবারের ব্যবস্থা করছি।’
রাঙামাটি জেলা প্রশাসন ও সাজেক রিসোর্ট কটেজ মালিক সমিতির তথ্যমতে, আগুনে লুসাই জনগোষ্ঠীর ১৬টি ও ত্রিপুরাদের ১৯টিসহ মোট ৩৫টি বসতঘর পুড়ে গেছে।
আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত মিঠুন ত্রিপুরা জানান, আমাদের বাড়ি ঘর যা ছিল সব পুড়ে গেছে, ঘরে ধান ছিল সব পুড়ে গেছে। আমরা এখন কি যে খাব; খাওয়ার মতো আর কিছু নাই। ঘরের পুড়ে যাওয়া জিনিসপত্রগুলো দেখে দেখে নিয়ে এসে খোলা আকাশে নিচে সারা রাত কাটিয়েছি। চিন্তায় ঘুমাতে পারি নাই।
রঞ্জন ত্রিপুরা জানান, আমরা কিছুই রক্ষা করতে পারি নাই, ঘর পুড়ে গেছে মানে সব শেষ। কিছুই ঘর থেকে বের করতে পারি নাই।
ডেবিট লুসাই জানান, এখানে যেসব বাড়ি ঘর পুড়ে গেছে সব আমরা আত্মীয় স্বজন। একেক জনের, একেক রকম ক্ষতি হয়েছে। অনেকের আদা, আবার অনেকে হলুদ পুড়ে গেছে। এখন একদম রাস্তায় থাকা ছাড়া আর আমাদের কোনো উপায় নাই। সব শেষ হয়ে গেছে।
১৬৭ নম্বর রুইলুইপাড়ার হেডম্যান (মৌজাপ্রধান) লাল থাং লুসাই জানান, সাজেকে এত বড় আগুনের ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি। আমার ঘর বিল্ডিং হওয়ায়ও পুড়ে গিয়ে একদম ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে, থাকার মতো এখন আর অবস্থা নাই।
তিনি আরও জানান, আগুন লাগার সাথে সাথে গায়ে পরনে কাপড় যা ছিল তা নিয়ে ঘর থেকে বের হয়েছি আমরা। পায়ে জুতা পড়ার মতো সুযোগ পাইনি। আমরা পরিবার নিয়ে খোলা আকাশে রাত কাটিয়েছি।
সাজেক ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য অনিত্য ত্রিপুরা জানান, গতকালকে থেকে আগুনের ক্ষতিগ্রস্তদের প্রশাসন, ইউনিয়ন পরিষদ, সাজেক কটেজ মালিক সমিতি মিলে খাবারের ব্যবস্থা করে যাচ্ছি। স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্তরা এখন নিঃস্ব হয়ে গেছে। যে সমস্ত ত্রিপুরা, লুসাই জনগোষ্ঠীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তারা সবাই খেটে খাওয়া মানুষ। জুম চাষ, হলুদ চাষ করে তাদের জীবন চলে। এখন যদি নিঃস্ব মানুষদের সহায়তায় সরকার ও বিত্তবানরা এগিয়ে আসে তাহলে তারা কিছুটা উপকৃত হবে।
সাজেক রিসোর্ট ও কটেজ মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মতিজয় ত্রিপুরা বলেন, আমরা গতকাল থেকে স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্তদেরকে খাবারের ব্যবস্থা করে যাচ্ছি। এছাড়া সেনাবাহিনী ও পাড়ার আশেপাশে স্থানীয় লোকজন তাদের খাবার দিয়ে সহযোগিতা করছে। যাদের ঘরবাড়ি পুড়ে গেছে, তারা অনেকে খোলা আকাশে, আবার অনেকে মন্দির গীর্জায় রাত কাটিয়েছেন।
খাগড়াছড়ির ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক পূর্ণচন্দ্র মুৎসুদ্দি বলছেন, প্রত্যেকটা দোকান-রিসোর্ট-ঘরবাড়িতে অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জাম থাকে। এখানে এমন ছিল না। এ কারণে শুরুতে নির্বাপণ করা যায়নি। তাতে ছড়িয়ে পড়ে আগুন।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের দ্রুত সরকারি নিয়ম অনুসারে আর্থিক ও খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য আমরা কাজ করছি। আশা করছি আজকের মধ্যে অফিশিয়াল প্রক্রিয়াগুলো শেষ করে দ্রুত আমিসহ সরকারি অন্যান্য কর্মকর্তারা সেখানে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াব। ইতিমধ্যে আমাদের তদন্ত দল সেখানে গিয়ে কাজ করছে।