মহেশখালী (কক্সবাজার) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৮:১১ পিএম
প্রবা ফটো
বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের এক নিভৃত দ্বীপ সোনাদিয়া। যেখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অফুরন্ত আর্শীবাদ ঢেলে দিয়েছেন সৃষ্টিকর্তা। তবে এই এলাকার মানুষর জীবনযাত্রা হয়ে পড়েছে কঠিন ও অনিশ্চিত। শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত শিশু-কিশোররা, জরুরি স্বাস্থ্যসেবা ছাড়াই দিন পার করেন অসুস্থরা, নৌপথের অনিরাপদ যাত্রা- এমন বাস্তবতায় কাটছে প্রায় দুই হাজার মানুষের জীবন। তবে এবার এই অবহেলিত দ্বীপ নিয়ে নতুন করে ভাবছে প্রশাসন।
সোনাদিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে নেই কোনো স্থায়ী হাসপাতাল বা ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। নৌপথের অনিরাপত্তা দ্বীপবাসীর জন্য প্রতিদিনের যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এবার সোনাদিয়ার জীবনমান উন্নয়নে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানালেন মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হেদায়েত উল্ল্যাহ।
প্রতিদিনের বাংলাদেশকে তিনি বলেন, ‘সোনাদিয়ায় একটি স্থায়ী কমিউনিটি ক্লিনিক করার জন্য আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। এছাড়া, দ্বীপবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি- একটি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপনের বিষয়েও আমরা চিন্তা করছি।’
শুধু স্বাস্থ্য ও শিক্ষা নয়, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন নিয়েও প্রশাসনের পরিকল্পনা রয়েছে। ইউএনও হেদায়েত উল্ল্যাহ বলেন, ‘সোনাদিয়ার সাথে মহেশখালীতে যে সেতু আছে, সেটি পুনরায় সংস্কার করে রাস্তা নির্মাণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এতে দ্বীপবাসীর যাতায়াত অনেক সহজ হবে এবং তাদের দুঃখ কিছুটা লাঘব হবে বলে আমরা মনে করছি।’
বর্তমানে সোনাদিয়ার একমাত্র স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি ভগ্নদশায় রয়েছে। নেই ডাক্তার, নেই প্রয়োজনীয় ওষুধ। সামান্য অসুস্থতাতেও দ্বীপের মানুষকে মহেশখালী কিংবা কক্সবাজারে যেতে হয়, যা অনেক সময় জীবন-মৃত্যুর ব্যবধান তৈরি করে।
স্থানীয় বাসিন্দা রহিমা বেগম বলেন, ‘বাচ্চার জ্বর হলে নৌকায় করে অনেক দূরে যেতে হয়। যদি এখানে একটা ভাল হাসপাতাল থাকত, তাহলে আমাদের এত কষ্ট করতে হতো না।’
এদিকে উপজেলা প্রশাসনের নতুন উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে অন্তত সাধারণ চিকিৎসাসেবা দ্বীপের মধ্যেই পাওয়া যাবে, যা দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ কমাবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
সোনাদিয়ায় সরকারি একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও সেটি প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় অনেক ছাত্র-ছাত্রী স্কুলের গণ্ডি পার হওয়ার আগেই লেখাপড়া ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। ফলে তারা অল্প বয়সেই মাছ ধরা বা শ্রমিকের কাজে জড়িয়ে পড়ে।
কিশোর জসিম বলেন, ‘আমি ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত পড়েছি। এরপর স্কুল নেই, কোথায় যাব? বাবার সঙ্গে মাছ ধরতে যাই এখন।’
প্রশাসনের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে অন্তত শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার সুযোগ সৃষ্টি হবে। সোনাদিয়া থেকে মূল ভূখণ্ডে যাওয়ার একমাত্র পথ পুরনো নৌকা। নেই কোনো সুরক্ষিত জেটি। ফলে ঝড়-বৃষ্টির দিনে যাত্রীদের যাত্রা হয়ে ওঠে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ‘ভাল জেটি থাকলে যাত্রীদের এত কষ্ট করতে হতো না। মাঝেমধ্যে নৌকা নষ্ট হয়ে মাঝপথে আটকে যায়, তখন ভয় লাগে কখন কী হয়। প্রশাসনের নতুন উদ্যোগের মধ্যে যদি সেতুর সাথে সংযোগ রাস্তা তৈরি করা হয়, তাহলে সোনাদিয়ার মানুষের জন্য এটি হবে একটি বড় পরিবর্তন।’
সোনাদিয়ার মানুষ চায়- একটি স্থায়ী হাসপাতাল ও ডাক্তার, একটি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, নিরাপদ নৌপথ ও জেটি, টেকসই কর্মসংস্থান। যদি প্রশাসনের প্রতিশ্রুত পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হয়, তাহলে সোনাদিয়ার মানুষের দীর্ঘদিনের দুঃখ কিছুটা হলেও লাঘব হবে। তবে এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এসব পরিকল্পনা কি কেবল কাগজে-কলমে থাকবে, নাকি বাস্তবে রূপ পাবে? একদিন কি সোনাদিয়া সত্যিই উন্নয়নের আলোয় আলোকিত হবে? নাকি এই দ্বীপ তার অবহেলিত ভাগ্য নিয়েই পড়ে থাকবে?