এম.এ হান্নান, বাউফল
প্রকাশ : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৮:০৫ পিএম
আপডেট : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৮:২৭ পিএম
করলা চাষে বছর ঘুরতেই বদলে যায় মহিউদ্দিন দম্পতির ভাগ্য। প্রবা ফটো
অভাবের সংসার। একমাত্র কর্মক্ষম বাবা তিনিও অসুস্থ। এইচএসসি পাশ করার পর সংসারের হাল ধরে ছুটছিলেন চাকরির পেছনে। চাকরি নামক সোনার হরিণ ধরতে গিয়ে হয়েছেন প্রতারণার শিকার। চাকরি না দিয়ে জমি-জমা বিক্রির আড়াই লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারকচক্র। উপায়ান্তর না পেয়ে ঢাকাতে স্বল্প বেতনে একটা চাকরি নেন। তবে সল্প বেতনে পরিবারের খচর মেটাতে বিপাকে পড়ে যান মহিউদ্দিন। স্ত্রীর পরামর্শে বাড়িতে ফিরে আসেন। বাড়ির আঙ্গিনায় ১২ শতাংশ জমি করলা চাষ শুরু করেন। বছর ঘুরতেই বদলে যায় মহিউদ্দিন দম্পতির ভাগ্য। এখন তাদের মাসিক আয় প্রায় ৫০ হাজার টাকা।
সফল এ কৃষি উদ্যোক্তার বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার বগা ইউনিয়নের পাতাল পোল গ্রামে। তার বাবার নাম আবদুল করিম। তার দুই সন্তান ও স্ত্রী রয়েছে। স্ত্রী মোসা. ফাতেমা বেগম পটুয়াখালী সরকারি কলেজ থেকে প্রাণিবিদ্যায় স্নাতক পাশ করেছেন।
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) মহিউদ্দিনের সবজি বাগানে সরেজমিনে দেখা যায়, মচা পদ্ধতিতে করলা চাষ করা হয়েছে। থোকায় থোকায় ঝুলছে করলা। স্বামী-স্ত্রী মিলে করলা গাছের পরিচর্যা করছেন। ফলনও ভালো হয়েছে। প্রতিদিনই করলা বিক্রি করছেন তারা। উপজেলার ছোট বড় সকল হাটে বাজারে যাচ্ছে তাদের করলা। পাইকাররা বাড়ি থেকে এসেও করলা নিয়ে যাচ্ছে।
মহিউদ্দিন জানান, ২০১২ সালে বগা ইয়াকুব শরীফ ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচ এস সি পাশ করেন তিনি। টাকার অভাবে আর লেখাপড়া করতে পারেননি। ২০১৪ সালে সংসদ ভবনে চাকরি দেওয়ার কথা বলে একটি প্রতারকচক্র তার কাছ থেকে আড়াই লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। জমিজমা বিক্রি করে টাকা দিয়েও চাকরি না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়নে মহিউদ্দিন। ২০১৬ সালে চাকরির খোঁজে ঢাকায় পাড়ি জমান তিনি। সেখানে একটি বায়িং হাউজে স্বল্প বেতনে চাকরি নেন মহিউদ্দিন। তবে এ অল্প বেতন দিয়ে সংসার ও বাবার চিকিৎসা ব্যয় চালাতে গিয়ে তিনি বিপাকে পড়েন। পরে ২০২১ সালের শেষের দিকে স্ত্রীর পরামর্শে বাড়ির আঙ্গিনায় ১২ শতাংশ জমিতে উচ্চফলনশীল করলা চাষ করেন মহিউদ্দিন। এ কাজে তাকে সহযোগিতা করেন তার স্ত্রী। ফলন ভালো হওয়ায় বেশি লাভবান হন তারা। আস্তে আস্তে করলার আবাদ বাড়াতে থাকেন তিনি। পাশাপাশি লাউ, চিচিঙা, টমেটো, লালশাকসহ মৌসুমি সবজি চাষ করেন। বর্তমানে প্রায় ১২৫ শতাংশ জমিতে সবজি চাষ করছেন। এর মধ্যে এ মৌসুমে ৫০ শতাংশ জমিতে করলা চাষ করেন। এতে ১ হাজার ২০০ করলা গাছ রয়েছে। করলার ফলন ভালো হয়েছে। প্রতিসপ্তাহে ১২-১৪ হাজার টাকার করলা বিক্রি করেন। সব মিলিয়ে মাসে তার আয় হয় প্রায় ৫০ হাজার টাকা।
মহিউদ্দিন বলেন, আমার বাবা শ্রমিকের কাজ করতেন। কাজ করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় শিকার হয়ে গুরতর আহত হন। পরে আর কোনো কাজকর্ম করতে পারেননি। সংসার চালাতে আমার অনেক কষ্ট হতো। অল্প টাকা বেতন চাকরি করে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হতো। পরে বাড়িতে এসে কিছুদিন শ্রমিকের কাজও করেছিলাম। পরে বউয়ের পরমার্শ ও সহযোগিতায় কৃষি কাজ শুরু করি। প্রথমে ১২ শতাংশ জমিতে করলা চাষ করি। ভালো লাভ হওয়ায় লিজ নিয়ে জমি বাড়াতে থাকি। এখন ১২৫ শতাংশ জমিতে চাষাবাদ করছি। মা, বোন, স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে ভালো আছি।
এ সফল উদ্যোক্তা বলেন, কৃষি নিয়ে আমার অনেক বড় স্বপ্ন রয়েছে। সবজি চাষের পাশাপাশি মাছ চাষ করার স্বপ্ন রয়েছে। তবে মূলধনের অভাবে শুরু করতে পারছি না। সরকারের সহযোগিতা পেলে আমি অনেক দূর এগিয়ে যেত পারব।
মহিউদ্দিনের স্ত্রী ফাতেমা বেগম বলেন, আমাদের অনেক অর্থসংকট ছিল। স্বামীর ভালো চাকরি ছিল না। আমি টিউশনির টাকায় পড়াশুনা করেছি। একই সঙ্গে স্বামীকে সহযোগিতাও করেছি। এক সময় তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। তখন আমি তাকে করলা চাষ করার পরামর্শ দেই। সে করলা চাষ শুরু করে। আমিও তাকে কাজে সহযোগিতা করি। এখন আমরা অনেক ভালো আছি।
এ বিষয়ে বাউফল উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রেদোয়ান উদ্দিন তালুকদার বলেন, বগা ইউনিয়নের একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা মহিউদ্দিন। তিনি করলা চাষে সফল হয়েছেন। তাকে আমরা সব সময় বিভিন্নভাবে সহায়তা করে আসছি। আগামী দিনেও এ সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
উপজেলা কৃষি কর্তকর্তা মো. মিলন বলেন, আমরা তাকে যথাসাধ্য সহযোগিতা করছি। বৃহৎ পরিসরে কিছু করার সক্ষমতা নেই। বিষয়টি জেলা কর্মকর্তাকে জানানো হবে।