দিনাজপুরে মারধরে ইজিবাইক চালকের মৃত্যু
দিনাজপুর সংবাদদাতা
প্রকাশ : ০৩ ডিসেম্বর ২০২২ ২০:২৩ পিএম
আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২২ ২০:২৭ পিএম
নিহতের পরিবারের কান্না। ছবি : প্রবা
দিনাজপুরে পথচারীর থাপ্পড়ে ইজিবাইক চালকের মৃত্যুর ঘটনাটি নিয়ে নিহতের পরিবারের সঙ্গে ওই পথচারীর সমঝোতা হয় চার লাখ টাকায়। তবে শেষ পর্যন্ত পুলিশের হস্তক্ষেপে মামলা হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে দিনাজপুর শহরের চুড়িপট্টি এলাকায় ইজিবাইক চালক খালেকুল ইসলাম ও পথচারী সন্তোষ ডালমিয়ার মধ্যে কথাকাটি হয়। একপর্যায়ে সন্তোষ ডালমিয়ার মারধরে খালেকুলের মৃত্যু হয়। চার সন্তানের বাবা খালেকুল দিনাজপুরের বিরল উপজেলার মোহনপুর এলাকার মৃত ছাবের হোসেনের ছেলে। সন্তোষ ডাল মিয়া (৫৭) দিনাজপুর শহরের মালদহপট্টি এলাকায় মেঘা বস্ত্রালয়ের মালিক।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই রাত আটটায় মালদহপট্টি এলাকায় ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা নিহত খালেকুলের স্বজনদের স্বজনদের সঙ্গে আলোচনা করেন। সেখানে তিনশ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে অভিযুক্ত সন্তোষ কুমার ডাল মিয়া ও খালেকুলের স্ত্রী নুরজাহান বেগম স্বাক্ষর করেন। স্ট্যাম্পে লেখা হয়, ইজিবাইক চালক খালেকুলকে সরিয়ে দিতে গেলে তিনি মাটিতে পড়ে যান। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। সন্তোষ ডাল মিয়ার সঙ্গে একটা ভুল বোঝাবুঝি থেকে এ ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে কোনো পক্ষই আদালত কিংবা অন্য কোনো জায়গায় অভিযোগ করবেন না।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিরল উপজেলার মঙ্গলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম। তিনি মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে জানান ‘নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে ২০লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়েছিল। পরে চার লাখ টাকায় সমঝোতা হয়। টাকা পরিশোধ করার পর অভিযুক্ত সন্তোষ কুমার ডালমিয়া ও নিহতের স্ত্রী নুরজাহান বেগম আপোষনামায় স্বাক্ষর করেছেন।’ স্বাক্ষী হিসেবে কয়েকজন ছিলেন।
এদিকে খবর পেয়ে রাত ১০টার দিকে পুলিশ খালেকুলের বাড়িতে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য দিনাজপুর সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। এরপর খালেকুলের স্ত্রী নুরজাহান বেগম থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। তাতে বলা হয়, নিহত খালেকুলের ইজিবাইকের সঙ্গে অজ্ঞাতনামা এক যাত্রীর ধাক্কা লাগে। তাদের কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে সন্তোষ কুমার ডালমিয়াসহ আরো কয়েকজন খালেকুলকে কানের নিচে, ঘাড়ে ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় মারধর করেন। আহত খালেকুলকে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন।
ওই হাসপাতালের সার্জন মর্তুজা রহমান বলেন, শুক্রবার বেলা আনুমানিক একটায় খালেকুল নামের ওই ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন তাঁর স্ত্রী। পরে ইসিজি করে দেখা যায়, হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
কতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) তানভীরুল ইসলাম বলেন, ‘উভয়পক্ষের আপোষ মীমাংসার বিষয়ে আমরা কিছু জানিনা। নিহতের স্ত্রী কর্তৃক লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। রাতে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মামলা হয়েছে। সন্তোষ ডালমিয়াসহ অজ্ঞাতনামা ২/৩জনকে আসামি করা হয়েছে। সন্তোষ ডালমিয়া পলাতক রয়েছেন। আসামিদের ধরতে পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে নিহত খালেকুলের বড় ভাই মিরাজুল ইসলাম (গ্রাম পুলিশ) বলেন, ‘শুক্রবার সন্ধ্যায় মিমাংসায় বসেছিলাম। চার লাখ টাকা নিয়ে খালেকুলের পরিবার মেনে নিয়েছে। আমরা ২০ লাখ টাকা চাইছিলাম। যেহেতু তার চার ছেলে মেয়ে। এরমধ্যে তিনজনই নাবালক। আপোষনামাও হয়েছে। পরে রাতে পুলিশ লাশ নিয়ে গেছে ময়নাতদন্তের জন্য।’