কালকিনি পৌর বাস টার্মিনাল
রাজীব আহমেদ, কালকিনি (মাদারীপুর)
প্রকাশ : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১০:১৫ এএম
মাদারীপুরের কালকিনিতে নির্মাণের পাঁচ বছর পরও চালু হয়নি পৌর বাস টার্মিনাল।
মাদারীপুরের কালকিনিতে নির্মাণের পাঁচ বছর পরও চালু হয়নি পৌর বাস টার্মিনাল। ব্যস্ততম ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে দাঁড়িয়ে পরিবহনের যাত্রীরা ওঠানামা করছেন। বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। সৃষ্টি হচ্ছে যানজট, ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রীসাধারণের। শীঘ্রই টার্মিনালটি চালু হবে আশ্বাস কর্তৃপক্ষের।
কালকিনি পৌরসভা সূত্র জানা গেছে, গুরুত্বপূর্ণ পৌরসভার অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে পৌর বাস টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১৮ সালে পৌর এলাকায় ভুরঘাটাতে ১ একর ৩০ শতাংশ জমিতে নির্মাণকাজ শুরু হয়। কাজ শেষ হয় ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে। সেই সঙ্গে চূড়ান্ত বিলের সব টাকাও তুলে নেয় প্রকল্পর বাস্তাবায়নকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মিজান এন্টারপ্রাইজ। এরপর পাঁচ বছর অতিবাহিত হলেও শুরু হয়নি কার্যক্রম।
তাই বাধ্য হয়েই ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে যাত্রী ওঠানামা করছে বিভিন্ন পরিবহন বলে জানান স্থানীয়রা। পদ্মা সেতু চালুর পর ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে কয়েকগুণ। এতে প্রায়ই সড়কে দেখা দেয় যানজট। অন্যদিকে সন্ধ্যা হলে মাদকসেবী আর বখাটেদের আড্ডাখানায় পরিণত হয় বাস টর্মিনাল। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ব্যবহার না করায় নষ্ট হচ্ছে টার্মিনালের অবকাঠামোসহ জিনিসপত্র।
স্থানীয়রা জানান, কালকিনির ভুরঘাটা এলাকার বড় একটি অংশ দখল করে রাখে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক চালকরা। এতেও প্রতিনিয়ত ওই এলাকায় যানজট লেগে থাকে। যাত্রীসাধারণের মানসম্মত সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে নির্মাণ করা হয় এই পৌর বাস টার্মিনালটি। টার্মিনালের কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় মহাসড়কের উপরেই যাত্রী ওঠানামা করাতে বাড়ছে ঝুঁকি। এ ছাড়া রাত হলেই বাস টার্মিনালে মাদকসেবীসহ অপরাধীরদের আড্ডাখানায় পরিণত হয়।
একটি পরিবহন কাউন্টার পরিচালক মো. নাসিরুদ্দিন বলেন, ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও নবনির্মিত বাস টার্মিনালটিতে পর্যাপ্ত কাউন্টারের সুবিধা না থাকায় যেতে পারছি না। টার্মিনালটিকে সংস্কার করে কাউন্টারের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। সব কাউন্টার টর্মিনালে নিয়ে যাওয়া যাবে। তখন সুশৃঙ্খলভাবে বাস টার্মিনালে যেতে পারবে। এসব ব্যবস্থা যদি করা হয় তাহলে আমরা কাউন্টার নিয়ে সেখানে চলে যাবে। অন্য এক কাউন্টার পরিচালক মাহবুব হোসেন বলেন, ‘বসার জন্য পর্যাপ্ত কাউন্টার ও সুন্দর পরিবেশ করে দিলে কাউন্টার মালিক ও যাত্রী সবার জন্য সুবিধা হবে।’
এই রুটে চলাচলকারী একাধিক চালক বলেন, টার্মিনালটির কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় বাধ্য হয়ে সড়কের ওপরে বাস থামাতে হচ্ছে। ঝুঁকি নিয়ে যাত্রী ওঠানামা করাতে হচ্ছে। টার্মিনালিটি চালু হলে সবার জন্যই উপকার হবে।
এমএইচ তুষার নামে এক যাত্রী বলেন, সড়কের উপর গাড়ি রাখা হয়, একসঙ্গে ৪-৫টা গাড়ি এসে দাঁড়ায়। ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত ভ্যান, মাহিন্দ্রা একটার সঙ্গে অন্যটা লাগিয়ে দেয়। রাস্তাও তেমন প্রশস্ত নয়, গাড়িতে ওঠানামা সমস্যা। টার্মিনাল করা আছে কিন্তু কোনো বাস কাউন্টার নেই। টার্মিনালটি চালু করলে যাত্রীদের ভালো হবে।
ভুরঘাটার ব্যবসায়ী বিল্টু দাস বলেন, টার্মিনালটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পরে আছে। এতে যানজট লেগে থাকা, বাজারে লোকজন ঢুকতে অসুবিধা হয়। টার্মিনালটি চালু হলে আমাদের সবার জন্য সুবিধা। টার্মিনালটি দ্রুত চালুর দাবি জানাই।
পৌরসভার প্রকৌশলী রাকিব হাসান জানান, নানাবিধ সমস্যার কারণে টার্মিনালটি চালু করা সম্ভব হয়নি। তবে পৌর প্রশাসকের নির্দেশক্রমে দ্রুতই এটি চালুর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ভেতরে পর্যাপ্ত কাউন্টার না থাকায় নতুন করে ২৭ কাউন্টারসহ সংস্কারের কাজ করছি। সড়কের পাশের কাউন্টার মালিকদের ভেতরে যাওয়ার জন্য নোটিস দেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও পৌর প্রশাসক উত্তম কুমার দাশ জানান, বাস টার্মিনালটির চালুর বিষয়ে ইতোমধ্যে কাউন্টার মালিকদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তাদের কিছু দাবি-দাওয়া আছে। বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিছু কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে, এগুলো শেষ হলে চালুর ব্যবস্থা করা হবে।