এম এ হান্নান, বাউফল
প্রকাশ : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৯:১৬ পিএম
আপডেট : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৯:২১ পিএম
বাউফল উপজেলার মদনপুরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঁচ তলা ভবন নির্মাণকাজ ফেলে ঠিকাদার উধাও হয়ে গেছে। প্রবা ফটো
দেড় বছরের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার মদনপুরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঁচ তলা ভবন নির্মাণকাজ। তিন বছর ধরে কাজ ফেলে রেখে উধাও হয়ে গেছে ঠিকাদার। বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে ওই নির্মাণাধীন ভবনের খোলামেলায় জায়গায় ঝুঁকি নিয়ে চলছে পাঠদান। এতে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম।
শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে ভবন নির্মাণ কাজ শেষ করার জোর দাবি জানিয়েছে স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা।
জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২৬ সেপ্টম্বর বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় পাঁচ তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। এতে ব্যয় ধরা হয় ৪ কোটি ১২ লাখ ৮৮ হাজার ৬৮১ টাকা। দরপত্রে কাজটি পায় বরিশালের ‘মের্সাস রূপালী কনস্ট্রাকশন’ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০২০ সালের ৫ জানুয়ারি ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। চুক্তি অনুযায়ী ২০২১ সালের ১২ জুলাই কাজ শেষ করার কথা।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখ যায়, পাঁচ তলা ভবনের তিন তলা পর্যন্ত ছাদ ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। দেয়াল ও কক্ষ নির্মাণ হয়নি। চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসম্পন্ন কাজের লোহার রডসহ নির্মাণসামগ্রী। ওই নির্মাণাধীন ভবনে দেয়ালবিহীন ছাদে অসমাপ্ত নির্মাণ কাজের লোহার রড ও নির্মাণসামগ্রীর মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে চলছে পাঠদান কার্যক্রম। বিদ্যালয়ের আশপাশ ও মাঠ জুড়েও ছড়িয়ে আছে ইট- পাথর।
বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, পুরাতন টিনশেড ভবন ভেঙে নতুন ভবনের কাজ শুরু হয়। অর্ধেক কাজ ফেলে রেখে ঠিকাদার লাপাত্তা হয়ে যায়। বিকল্প শ্রেণিকক্ষ না থাকায় নির্মাণাধীন ভবনে ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান করানো হচ্ছে। চারপাশের দেয়াল না থাকায় বর্ষা মৌসুমে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হয়।
বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র মো. রাকিব হোসেন বলেন, শ্রেণিকক্ষ নেই, ঠিকমত ক্লাস হচ্ছে না। মাঠে ইট পাথরের স্তুপ পড়ে আছে। যার কারণে সমাবেশ, খেলাধুলা বন্ধ। এমনকি বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতাও অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। এভাবে পড়াশোনা হয় না।
৯ম শ্রেণির মোসা. সুমাইয়া আক্তার (১৪) বলেন, পুরাতন ভবন ভাঙার সময়ে শৌচাগারও ভেঙে ফেলা হয়েছে। নতুন ভবনে শৌচাগারের কাজ শেষ হয়নি। এতে আমরা মেয়েরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. গোলাম মস্তফা বলেন, তিন বছর ধরে কাজ বন্ধ। ঠিকাদারের কোনো খোঁজ নাই। বিষয়টি লিখিতভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে একাধিকার জানিয়েছে। তারা বার বার আশ্বস্ত করছেন কাজ হবে। তবে কবে হবে জানি না।
দেড় বছরের কাজ তিন বছরেও শেষ করতে পারেনি ঠিকাদার। এর মধ্যে ১ বছর ধরে কাজ বন্ধ। শ্রেণি কক্ষ সংকটে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। মাঠ জুড়ে নির্মাণসামগ্রী থাকায় তিন বছর ধরে বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। ঠিকাদারকে ফোন দিয়ে পাওয়া যায় না। শিক্ষা প্রকৌশলীর কাজে চিঠি দিয়েও কোনো সুফল মেলেনি। আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে নির্মাণ কাজ শেষ না করা হলে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখা ছাড়া উপায় থাকবে না।
এ বিষয়ে জানতে মের্সাস রূপালী কনস্ট্রাকশনের মালিক অমল ঘোষের মুঠোফোনে কল করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তার প্রতিনিধি মো. ছগির হোসেন বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।
জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোশফিকুর রহমান বলেন, চুক্তি অনুযায়ী কাজ শেষ না করায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি বাতিলের জন্য সুপারিশ করে প্রকল্প পরিচালকের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। নতুন ঠিকাদার নিয়োগ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে অসমাপ্ত কাজ শেষ করা হবে।