ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৫:৫৯ পিএম
আপডেট : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৬:৩১ পিএম
আব্দুল মোতালেব। প্রবা ফটো
ভিক্ষা নয়, পরিশ্রম করে জীবিকা-নির্বাহ করছেন দুই-পা বিহীন ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সোহাগি ইউনিয়নের আব্দুল মোতালেব। জীবন যুদ্ধে হার না মানা এই যোদ্ধার ওপর নির্ভরশীল পরিবারের পাঁচ সদস্যের। ৭০ বছর বয়সি মোতালেব একজন সবজি বিক্রেতা। সবজি বিক্রি করেই জীবিকা-নির্বাহ করেন তিনি।
আব্দুল মোতালেব জন্মগতভাবে প্রতিবন্ধী ছিলেন না। ১৯৯২ সালে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কে রামগোপালপুর বাজারে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার পর তিনি তার দুই-পা হারান।
সরেজমিনে দেখা যায়, সোহাগি রেলওয়ের পাশে মুরগি মহলে দোকানে বসে সবজি বেচা-কেনা করছেন মোতালেব। এ সময় তার সঙ্গে কথা হয়। তিনি শোনান তার জীবনের নানা গল্প। পৈতৃক জমি ছিল ১ একর তার। সংসারে স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। ইচ্ছে ছিল ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখা শেখাবেন। কিন্তু হঠাৎ করে সব এলোমেলো হয়ে গেল। সড়ক দুর্ঘটনায় দুই পায়ে আঘাত পান তিনি। ১৪ দিন চিকিৎসার পর বাধ্য হয়ে তার দুই-পা কাটতে হয়। তখন ফসিল ১ একর জমি বিক্রি করে চিকিৎসা খরচ মেটান।
স্মৃতিচারণা করে মোতালেব বলেন, ‘দুই-পা হারানোর পর অসহায় হয়ে পড়ি। শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলাম। ভেবেছিলাম ভিক্ষা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। পরে মন শক্ত করে সবজি ব্যবসা শুরু করি।’
তিনি আরও বলেন, ভিক্ষা করলে মানুষ ঘৃণা করত। ষোল আনার মধ্যে বারো আনা মানুষই খারাপ ভাবত। তাই অন্যের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে আমি নিজে ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করছি। আমার ৭০ বছর জীবনে আমি কারোর কাছে হাত পাতিনি। কাঁচামালের বিক্রি করে যা আয় হয় তা দিয়ে সংসার চালাই।
মোতালেব স্ত্রী নূরজাহান বলেন, আত্মসম্মান বোধ থেকে আমার স্বামী ভিক্ষা করে না, কারও কাছে হাত পাতে না। কেউ কিছু দিতে চাইলেও সে নেয় না।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান বলেন, মোতালেব চাচার পা নেই। প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও সে কারও কাছে সাহায্যের জন্য হাত পাতে না।
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)মো. এরশাদুল আহমেদ বলেন, ‘প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন। এছাড়াও আমরা তাকে সুযোগ-সুবিধা দেব। আমাদের সমাজের জন্য তিনি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।